ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ড থেকে বিদায় জ্যামাইকার কিংবদন্তি স্প্রিন্টারের

বোল্ট যুগের অবসান

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ১৩ আগস্ট ২০১৭

বোল্ট যুগের অবসান

মোঃ মামুন রশীদ ॥ চাঁদেও কলঙ্ক থাকে। বিশ্বজয়ী দুর্ধর্ষ বীর নেপোলিয়ন বোনাপার্টকেও হারতে হয়। রূপকথার নায়ক হয়ে যাওয়া স্প্রিন্টার উসাইন বোল্টের ক্ষেত্রেও যেন তেমনটাই হয়েছে। কোন বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপস কিংবা অলিম্পিকের ১০০ মিটার ফাইনালে হারেননি, কিন্তু এবার লন্ডনে চলমান বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপসে সেই আধিপত্য খর্ব হয়েছে। ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্ব আসরে অংশ নিচ্ছেন বোল্ট। এবার যাতে পরাজয়ে শেষ না করতে হয় সে কারণে আগেভাগেই এ সর্বকালের সবচেয়ে গতিধর মানব ২০০ মিটারের বিশ্বরেকর্ডধারী হয়েও সেই ইভেন্টে অংশ নেননি। কিন্তু পরাজিত হতেই হয়েছে। শনিবার মধ্যরাতে ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্ব আসর ফাইনালে দৌড়াবেন তিনি পুরুষদের ৪ী১০০ মিটার রিলে ইভেন্টে। আর এর মাধ্যমেই সমাপ্তি ঘটেছে জ্যামাইকান ‘বিদ্যুত’ বোল্টের। ক্যারিয়ারে ১০০ মিটারে ৬ বার, ২০০ মিটারে ১০ বার এবং ৪ী১০০ মিটার রিলে ইভেন্টে ৭ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন বোল্ট। এর মধ্যে অলিম্পিকে স্বর্ণ জিতেছেন ৮ বার এবং বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপসে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন ১১ বার। অপ্রতিরোধ্য একজন তারকা হয়ে উঠেছিলেন তিনি। ২০০৮ থেকে তিনি যে আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন সেটা অবশেষে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্রের স্প্রিন্টার জাস্টিন গ্যাটলিনের কাছেই খর্ব হয়েছে। ১০০ মিটারে ৯.৫৮ সেকেন্ড টাইমিং গড়ে বিশ্ববাসীকে এবং প্রাণিবিজ্ঞানীদের হতবিহ্বল করে দিয়েছিলেন। সেই তিনিই অবশেষে হার স্বীকার করেছেন ক্যারিয়ারের কোন বিশ্বমানের প্রতিযোগিতার ফাইনালে সবচেয়ে বাজে টাইমিং (৯.৯৫ সেকেন্ড) গড়ে। অথচ তিনটি ইভেন্টেই তিনি রেকর্ড গড়েছেন এবং ভেঙ্গেছেন। প্রতিপক্ষরা শুধু সেটা দেখে গেছেন, বারবার প্রচেষ্টার পরও হেরেছেন বোল্টের কাছে। এবারও জ্যামাইকান এ স্প্রিন্টার দুই ইভেন্টেই জয় তুলে নিয়ে শেষ করতে চেয়েছিলেন ক্যারিয়ারের। কিন্তু সেটা হয়নি, ছেদ পড়ে গেছে- বোল্টের গতি হার মেনেছে শুধু তার ধীর হয়ে যাওয়ার কারণেই। মানুষ নয়, যেন অস্বাভাবিক ক্ষমতাধর কোন অশরীরীÑ তাই তাকে সাধারণ মানুষগুলো ডাকতে শুরু করেছিলেন ‘বিদ্যুত’। নামটি তার সঙ্গে বেশ খাপ খেয়ে যায়। কারণ একটা সময় গবেষকরা ঘোষণা দিয়েছিলেন মানুষের পক্ষে ৯.৭০ সেকেন্ডের চেয়ে কম সময় নিয়ে ১০০ মিটার শেষ করা সম্ভব নয়। কিন্তু ২০০৯ সালে বোল্ট সেই ধারণাকে পাল্টে দিয়ে ৯.৫৮ সেকেন্ড টাইমিং গড়ে সারাবিশ্বকে বিমূঢ় করে দিয়েছিলেন। সেই অবিশ্বাস্য ইতিহাসের কাছাকাছি তিনি নিজেই আর কখনও যেতে পারেননি। নিজের সঙ্গেই প্রতিবার ফাইনালে ওঠার পর লড়াই করেছেন। কিন্তু নিজেকে আর পেছনে ফেলতে পারেনি। তবে বোল্ট থেকেছেন অপরাজেয়, তাই অন্য কারও সেটার ধারেকাছে ভিড়ে যাওয়াটা ছিল তো আরও অসম্ভব। কিন্তু অসম্ভবকে যারা সম্ভব করেন তাদের পরাজয় আসে তখনই যখন সামর্থ্য কমে যায়। বোল্টের সামর্থ্য বয়স আর অনেক রেস, বারবার ইনজুরির কারণে কিছুটা কমে তো এসেছেই। সে কারণেই তাকে এবার ছাড়িয়ে গেলেন গ্যাটলিন। পিনপতন নিস্তব্ধতা আসলো মাত্র ৯.৯২ সেকেন্ড পর। এ টাইমিংটা গড়েছেন যিনি গত ১০ বছর ধরেই বোল্টের সবচেয়ে বড় হুমকি, সেই গ্যাটলিন। ৯.৯৪ সেকেন্ড টাইমিং নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানেও নেই বোল্ট! আরেক মার্কিন তারকা ক্রিশ্চিয়ান কোলম্যান জিতে গেছেন রৌপ্য। তিন নম্বরে জায়গা হয়েছে বোল্টের- টাইমিং ৯.৯৫! অলিম্পিক কিংবা বিশ্ব আসরে নিজের সবচেয়ে বাজে টাইমিং এটাই। এই প্রথম বিশ্ব আসরের ১০০ মিটারে তার প্রথম পরাজয়। ২০১১ সালের বিশ্ব আসরে ফলস স্টার্টের জন্য ফাইনালে অংশ নিতে পারেননি। সেবারও সুযোগটা কাজে লাগিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন গ্যাটলিন। আর গত বিশ্ব আসরে দারুণ ফেবারিট হয়ে প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছিলেন বোল্টকে। শেষ পর্যন্ত মাত্র ০.০১ সেকেন্ড পিছিয়ে থেকে পরাজিত হয়েছিলেন গ্যাটলিন। শেষ হয়ে যাচ্ছে এখন সব। পেছনে যা ঘটেছে সেসব আর ভাববার সময় নেই। একটি পরাজয় আসলেও ক্যারিয়ার নিয়ে দারুণ সন্তুষ্ট কিংবদন্তি হয়ে ওঠা বোল্ট। শেষবারের মতো বিশ্ব আসরের ট্র্যাকে নামার আগে তিনি বলেন, ‘স্টেডিয়ামে এখন পর্যন্ত যে উপভোগ্য সময় কাটছে সেটা খুবই অসাধারণ। আমার দুঃখিত হওয়াটা বেশ কঠিন। কারণ এই ভক্ত-সমর্থকদের সমর্থনে যে শক্তি অনুভব করি সেটা বিস্ময়কর। আমি অবশ্যই খুব সুখী। আমি কতটা ভাল অনুভব করছি সেটা ব্যাখ্যা করার মতো ভাষাই জানা নেই আমার।’ লন্ডন অলিম্পিক স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা ৬০ হাজার। তারা শেষবারের মতো শনিবার রাতে সরাসরি বোল্টকে দেখে বিদায় দিয়েছেন। আর কখনও অলিম্পিক কিংবা বিশ্ব আসরের মঞ্চে প্রতিযোগী হিসেবে দেখা যাবে না তাকে। কিন্তু অবসরের পর জীবনকে উপভোগ করতে চান সর্বকালের সবচেয়ে গতিধর এ মানব। টোকিওতে ২০২০ সালের অলিম্পিকে অংশ নেয়া হবে না এ কিংবদন্তির। কিন্তু সেখানে দর্শক হিসেবে থেকে সব ইভেন্ট উপভোগ করবেন। বিশ্ব আসরের পর আর কোন রেসে অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে প্রতিজ্ঞ বোল্ট। কারণ ইতোমধ্যেই নিজ দেশ জ্যামাইকার ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ড থেকে বিদায় নিয়েছেন তিনি। তবে রেসে অংশ না নিলেও এ্যাথলেটিক্সের সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা জানিয়েছেন।
×