ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

এক যুগ পর গ্যাটলিন, তবু সমালোচিত

প্রকাশিত: ০৪:১১, ৭ আগস্ট ২০১৭

এক যুগ পর গ্যাটলিন, তবু সমালোচিত

মোঃ মামুন রশীদ ॥ লন্ডন অলিম্পিক স্টেডিয়ামে সবাই এসেছিলেন ‘বিদ্যুত’ বোল্টের জয় দেখার জন্য। অনেক আগেই ৬০ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতার এ স্টেডিয়ামের টিকেটগুলো সব বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বিশ্ব এ্যাথলেটিক্সের সব আকর্ষণ, আগ্রহ যিনি ধরে রেখেছিলেন সেই উসাইন বোল্ট ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্ব আসরের রেসে থমকে গেলেন, জিতে গেলেন তার প্রতিপক্ষরা। গত ১০ বছর ধরে বোল্টের পিছু ধাওয়া করতে করতে অবশেষে অবিস্মরণীয় এক জয় তুলে নিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিন গ্যাটলিন। ২০১৫ বেজিং বিশ্ব আসরে মাত্র ০.০১ সেকেন্ডের জন্য বোল্টকে ছুঁতে পারেননি। মাঝে দুই দফায় ডোপ টেস্টে পজিটিভ হয়ে ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ড জগতে নিষিদ্ধ থাকার পর ৩৫ বছর বয়সে জিতে সবাইকে হতবাক করে দিয়েছেন। ১২ বছর পর ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় বিশ্ব আসরের স্বর্ণপদক পুনরুদ্ধার করলেন তিনি। কিন্তু এতসব কীর্তির পরও ভর্ৎসনাই জুটেছে গ্যাটলিনের কপালে। দর্শকরা দিয়েছেন দুয়োধ্বনি। এমনকি আইএএএফও এ জয়কে ছকে ওলট-পালট বলে দাবি করেছে। কিন্তু গ্যাটলিনের দাবি তিনি এখন এ্যাথলেটিক্সের গর্ব। পরাজয়ের পর বোল্টও প্রশংসা করে পাশে দাঁড়িয়েছেন গ্যাটলিনের। অলিম্পিক, কিংবা বিশ্ব আসরের কোন ফাইনালে এত বাজে টাইমিং করেননি বোল্ট। হারেননি কখনও, সবসময় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। এবার ৯.৯৫ সেকেন্ড সময় নিয়ে সর্বকালের সবচেয়ে গতিধর মানব তৃতীয় হয়েছেন ১০০ মিটার স্প্রিন্টে। আর গ্যাটলিন ৯.৯২ সেকেন্ড টাইমিংয়ে হয়েছেন চ্যাম্পিয়ন। ২০০৫ সালে হেলসিংকি বিশ্ব আসরে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন। ২০০৪ এথেন্স অলিম্পিকেও জিতেছিলেন স্বর্ণপদক। এ দুটোই শেষ প্রাপ্তি গ্যাটলিনের। এরপর আর জয়ের মুখ দেখেননি। বোল্টের আগমন ছিল টর্নেডোর চেয়ে শক্তিশালী গতি নিয়ে। সেই ঝড়ের কাছাকাছি যেতে পারেননি গ্যাটলিন। কিন্তু সবসময়ই অন্যতম প্রতিপক্ষ হিসেবে ছিলেন আলোচনায়। কিন্তু এরপর দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন নিষিদ্ধ ড্রাগ নেয়ার জন্য। এর আগেও ২০০১ সালে যখন কলেজ স্টুডেন্ট তখনও দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। এই দুই দফায় ৪ বছরের নিষেধাজ্ঞা গ্যাটলিনের ক্যারিয়ারে ছিল সবচেয়ে বড় টার্নিং পয়েন্ট। তবে দ্বিতীয় দফায় ড্রাগপাপী প্রমাণিত হওয়ার পর ৮ বছরের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ডোপিং অথরিটির সঙ্গে জনসচেতনতামূলক ও সামাজিক কর্মকা-ে অংশ নেয়ায় সেটা কমানো হয়। তারপর থেকেই বোল্টের পেছনে দৌড়েছেন, পেরে ওঠেননি। সর্বশেষ ২০১৫ সালের বেজিং বিশ্ব আসরে সবাই ধরে নিয়েছিলেন গ্যাটলিনের কাছে এবার বোল্ট হেরে যাবেন। কারণ সেই বছর ফর্মের তুঙ্গে ছিলেন গ্যাটলিন, আর বোল্ট ইনজুরি সমস্যা এবং ফর্মহীনতায় পূর্ণ ছন্দে ছিলেন না। কিন্তু মাত্র ০.০১ সেকেন্ড পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয়ই হন গ্যাটলিন। এবার প্রতিশোধ নিয়েই নিলেন। জিতে গেলেন গ্যাটলিন। অবশেষে, চরম প্রতিপক্ষ বোল্টকে পেছনে ফেললেন ক্যারিয়ারের নানা উত্থান-পতন পেরিয়ে। জয়ের পর দারুণ উচ্ছ্বাস তাই গ্যাটলিনের। তিনি বলেন, ‘আমি এই ক্রীড়ায় ফিরে এসেছি। কঠোর পরিশ্রম করেছি, সব শাস্তি ভোগ করেছি এবং নিয়ম মেনেছি। আমি অন্য এ্যাথলেটদের অনুপ্রাণিত করেছি ভালভাবে থাকার জন্য। যে ভুলগুলো আমি করেছিলাম সেটা আমার সমাজের তরুণদের জানিয়ে সেসব এড়িয়ে থাকার জন্য উৎসাহ দিয়েছি। এতকিছুর পর এ্যাথলেটিক্সের উচিত আমাকে নিয়ে গর্ব করা। আমাকে একজন যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া। তবে এই রাত্রিটা উসাইনের। কারণ এটা তার শেষ রেস। আমার সর্বোচ্চ সম্মানের জায়গায় তার অবস্থান। আমার মনে হয় এই দুয়োধ্বনি এ জন্যই যে উসাইনের মতো সেরা একজনের এমন চরম প্রতিপক্ষ হিসেবে এতদিন ধরে টিকে আছি আমি।’ এসব কথা এমনিতে বলেননি গ্যাটলিন। জয়ের পর কোথায় দর্শকদের অভিনন্দন পাবেন, উল্টো দুয়োধ্বনি শুনতে হয়েছে। কারণ তিনি ডোপপাপী। কিন্তু বিশ্ব আসরের শেষ রেসে হারের পরও বোল্ট পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘তোমার এই দুয়োধ্বনি কোনভাবেই প্রাপ্য নয়। আমার ক্যারিয়ার এতটা অনুপ্রাণিত হয়েছে শুধু তোমার মতো দারুণ ব্যক্তির কারণে। কারণ নিজেকে আমি আরও ভাল পর্যায়ে নিতে সবসময় সচেষ্ট থেকেছি। অভিনন্দন, তুমি এটার উপযুক্ত, এটা তোমার প্রাপ্য ছিল। একজন প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে সবসময় আমি তাকে সম্মান করি। আমি যত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়েছি গ্যাটলিন সবার সেরা।’ আইএএএফ থেকেও গ্যাটলিনের জয়টাকে সহজভাবে নেয়া হচ্ছে না। তারাও মনে করছে বিশ্ব আসরের জন্য যেভাবে বই রচনা করার কথা ছিল সেটা ওলট-পালট করে দিয়েছেন গ্যাটলিন। এ বিষয়ে আইএএএফ প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিয়ান কো বলেন, ‘এটা নিখুঁত একটি টুর্নামেন্ট হতে পারল না। আমরা কখনও ভাবতে পারিনি এ ধরনের একটি উদ্ভাসিত, জ্বলজ্বলে একটি পুরস্কার একজন ডোপ পাপী নিয়ে যাবে। তবে এখন সেই এটার জন্য উপযুক্ত হয়ে গেছে।’
×