ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় দলে নিয়মিত হওয়ার স্বপ্ন নাসিরের

প্রকাশিত: ০৬:১২, ১৭ জুলাই ২০১৭

জাতীয় দলে নিয়মিত হওয়ার স্বপ্ন নাসিরের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সেই সুযোগ আর আছে কিনা কে জানে। যে পজিশনের ক্রিকেটার নাসির, সেই পজিশনে এখন দলে একাধিক ক্রিকেটার আছেন। যারা নিয়মিত খেলছেন। ভবিষ্যত পরিকল্পনাতেও আছেন। সেই পজিশনে নাসিরকে যুক্ত হতে হলে অনেক কষ্ট করতে হবে। পরিশ্রম করতে হবে। এর বাইরে সেই পজিশনে যে ক্রিকেটাররা আছেন তাদের ব্যর্থ হতে হবে। তাহলে না নাসিরের সুযোগ মিলবে। একটা সময় নিয়মিত ছিলেনও। সেই সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে। তবে এসব বিষয় নিয়ে কোনভাবেই ভাবছেন না নাসির। জাতীয় দলে আবার নিয়মিত হওয়ার স্বপ্নই দেখেন। নিয়মিত হতে চান। তার বিশ্বাস সেটি সম্ভব। রবিবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ফিটনেস ট্রেইনিং শেষে নাসির নিজেই সংবাদ মাধ্যমের কাছে নিজের এমন আশার কথা জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘আমি জানি না কেন মানুষ আমাকে ভালবাসে। এটা মানুষের কাছ থেকে আমার বড় পাওয়া। এ জিনিসটা সবাই হয়তো পায় না। আমি তাদের কাছে অনেক কৃতজ্ঞ। তারা আমার ওপরে যে বিশ্বাস রাখে, অনেক আশা করে, আমি চেষ্টা করব সেই বিশ্বাস ও আশার বাস্তবায়ন ঘটাতে। চেষ্টা করছি ফের জাতীয় দলে ঢুকে যাতে নিয়মিত হতে পারি।’ নাসির হোসেন সর্বশেষ ম্যাচটি খেলেছেন এ বছর ২৪ মে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় ম্যাচটিতে বাংলাদেশ জিতেছে। নাসির বল হাতে দুর্দান্ত বোলিং দেখিয়েছেন। ৯ ওভারে ৪৭ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন। আর ব্যাট হাতে মাঠে নামার সুযোগই পাননি। ঘরোয়া লীগে নাসির এতটাই ভাল পারফর্মেন্স দেখিয়েছেন যে আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত তিনজাতি সিরিজে নাসিরকে নেয়া হয়। কিন্তু তিনজাতি সিরিজের পরই যে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হয় ইংল্যান্ডে, সেই টুর্নামেন্টে নাসিরকে নেয়া হয়নি। তাই নাসির খেলতে পারেননি। তিনজাতি সিরিজেও এই একটি ম্যাচেই খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন নাসির। এরআগে ২০১৬ সালের অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি ওয়ানডে খেলার সুযোগ পান। ২০১৬ সালে নাসির মাত্র দুটি ওয়ানডে খেলার সুযোগ পান। ২০১৫ সাল পর্যন্ত নিয়মিত ক্রিকেটারের কী দুর্ভাগ্য! কী নিয়তি! ২০১৬ সালে দুটি টি২০ খেলার সুযোগ পান। এমনই অবস্থা হয় ‘মিস্টার ফিনিশার’ খ্যাত নাসিরের। যদিও সেই ‘ফিনিশার’ খেতাবটি এখন আর কাজে দিচ্ছে না। দলেই যে নিয়মিত নন। নাসির শেষদিকে ভাল খেলেন। ফিনিশ করতে পারেন। এই খেতাবটি খুব ভাল ছিল। কিন্তু ২০১৫ সালে যেন সেই তেজ কমতে থাকে। তাতে দলে অনিয়মিতও হয়ে যান নাসির। এখন তো সুযোগই মিলে না। কিভাবে মিলবে। দলে যে তার পজিশনে ক্রিকেটারে ভরপুর। সাব্বির রহমান রুম্মন আছেন। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত আছেন। রয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। কিভাবে নাসির এ তিন ক্রিকেটারকে এ মুহূর্তে টেক্কা দেবেন? নাসির দলে থাকলেও তো নিয়মিত খেলারও সুযোগ নাই। যদি একাদশে সুযোগ পেয়ে বিশেষ কিছু করে দেখাতে না পারেন। নাসিরকে নিয়ে আসলে যেমন আছে আলোচনা। তেমনি আছে সমালোচনাও। বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন পর্যন্ত নাসিরের সমালোচনা করতে পিছপা হননি। প্রধান কোচ চন্দ্রিকা হাতুরাসিংহের ‘গুডবুকে’ও নাকি নাসির নেই। তাকে নিয়ে আছে তুমুল বিতর্কও। তাহলে আর কিভাবে দলে নিয়মিত হবেন নাসির। অবশ্য নাসির এসব বিষয়কে আমলে নিতে নারাজ। মাঠের বাইরের জীবন নিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত ক্রিকেটার নাসির এসব বিতর্ক নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নন। নিজেই বলেছেন, ‘যাদের নাম হয় (সুনাম) তাদের বদনামও হয়। এটা সত্য কথা। কেউ আমাকে এক চোখে দেখবে, আরেকজন আমাকে আরেক চোখে দেখবে। এটাই স্বাভাবিক। আর ফেসবুক বলেন, পত্রিকা বলেন, সত্যি বলতে আমি এগুলো অনুসরণ করি না। ক্রিকেট খেললে এসব মাথায় রাখা উচিত না। খেলার বাইরে মাঝে মাঝে কথাগুলো মাথায় আসে। তবে মাঠে খেলতে গেলে এগুলো মাথায় থাকে না।’ মাথায় না থাকাই ভাল। তাতে খেলার ওপর প্রভাব পড়বে। আর খেলার ওপর প্রভাব পড়লে খারাপ খেলা হবে। জাতীয় দলে ঢোকার সিঁড়ি অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যাবে। এসব মাথায় নেননি বলেই তো এবার ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছেন ৫৯ ওয়ানডেতে ৩২.৩৫ গড়ে একটি সেঞ্চুরিসহ ১২৬২ রান করা নাসির। লীগে চ্যাম্পিয়ন দল গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের হয়ে ৮ ম্যাচ খেলে ৬টিতেই অপরাজিত ছিলেন। গড় তাক লাগানো, ২৪০.০০! দুটি সেঞ্চুরি ও তিনটি হাফসেঞ্চুরিসহ রান করেছেন ৪৮০। দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন ৩১টি টি২০ ম্যাচে ১৮.৫০ গড়ে ৩৭০ রান করা নাসির। লীগে প্রথম ম্যাচেই মোহামেডানের বিপক্ষে যে অপরাজিত ১০৬ রান করেছেন, এই ইনিংসই নাসিরকে তিনজাতি সিরিজে জায়গা করে দিয়েছে। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নাসিরকে নেয়া হয়নি। তাই ফিরে আসে দেশে। দেশে ফিরে আবারও দুর্দান্ত ব্যাটিং করতে থাকেন। নাসিরের বিশ্বাস, লীগে যেভাবে খেলেছেন, সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে যাবেন। বাকিটা যে কোচ, নির্বাচকদের ব্যাপার সেটা তো নাসিরও জানেন। তবে নাসির চান যেভাবেই হোক দলে নিয়মিত হতে।
×