ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

মেহেরপুর

যারা ছাগল দেয়নি তারা মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেনি

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ১১ জুন ২০১৭

যারা ছাগল দেয়নি তারা মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেনি

সংবাদদাতা, মেহেরপুর, ১০ জুন ॥ মুজিবনগর উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা বাছাইয়ে অর্থ উৎকোচ গ্রহণসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধারা। শনিবার মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয় প্রাঙ্গণে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বশির আহম্মেদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধাদের লিখিত বক্তব্য থেকে জানা যায়, ৬ সদস্যবিশিষ্ট মুজিবনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা বাছাই কমিটির সদস্যরা হলেনÑ মুক্তিযোদ্ধা হারুন অর রশিদ সভাপতি, জেলা ডেপুটি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলতাফ হোসেন জামুকার প্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল বিশ্বাস উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, মুক্তিযোদ্ধা মহসীন আলী জেলা কমান্ডারের প্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন উপজেলা ডেপুটি কমান্ডার (সদস্য) ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার হেমায়েত উদ্দীন সদস্য সচিব। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছায়ের সময় উপজেলাব্যাপী মাইকিং করেন মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি। এতে প্রায় সাড়ে ৬শ দরখাস্ত পড়ে। আবেদনকারীদের মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত করে দেয়ার নামে তাদের কাছ থেকে নগদ অর্থ ও ছাগল উপঢৌকন নেয়া হয়েছে। এ জন্য এলাকায় বেশকিছু দালাল নিযুক্ত হয়। এদের মধ্যে রয়েছেনÑ সাবেক ইউপি সদস্য সোনাপুর গ্রামের সাবদার ঘানী, ভবরপাড়ার আব্বাস আলী, শিবপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম ও পিজু মিস্ত্রি, সোনাপুর নতুনপাড়ার আব্দুল গফুর, আব্বাস আলীসহ আরও অনেকে। এসব দালালরা ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিলে মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত মুজিবনগরবাসীর প্রত্যেককে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে দেয়ার নাম করে নগদ অর্থ ও পশু গ্রহণ করে যাচাই-বাছাই কমিটির মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে তুলে দেন। লিখিত বক্তব্যে আর জানা যায়, ২০ জানুয়ারি হতে মে ১৭ পর্যন্ত যাচাই-বাছাই কার্যক্রম চলে। এতে যারা নগদ অর্থ দিতে পারেনি তাদের নামে অভিযোগ তুলে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। যেমন সম্মানী ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা কাজী আব্দুর রউফ বাদ পড়েছেন। পরবর্তী সময়ে অনলাইনে আবেদনকারী ১৫২ জনের মধ্যে হতে অর্থের বিনিময়ে ৬৯ জনকে তালিকাভুক্ত করা হয়। জামুক (জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কমিটি) থেকে প্রেরিত ২৪ জনের মধ্য থেকে ১৩ জনের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। মুক্তিবার্তায় নাম থাকা সত্ত্বেও নগদ অর্থ দিতে না পারায় জামুক প্রেরিত নামের তালিকা থেকে মোঃ কাজী জামালউদ্দিন ও মৃত জমিরউদ্দিনের নাম বাদ পড়েছে। তারা আরও জানান, পরিতাপের বিষয় হলেও সত্য যে, মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের কোরআন তেলায়াতকারী মুজিবনগর ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক (অবসরপ্রাপ্ত) বাকের আলী টাকা না দেয়ায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে পারেননি। অভিযোগকারীরা বলেন, জামুকা প্রতিনিধি ডেপুটি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলতাফ হোসেন মুক্তিযোদ্ধা করে দেয়ার নামে মরহুম ছাবের আলী ও খাতের আলীর পরিবারের কাছ থেকে দুটি ছাগল উৎকোচ হিসেবে গ্রহণ করেন যা পরবর্তী সময়ে ফেরত দিয়েছেন তারা। এভাবে দালালদের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্যরা বিভিন্ন জনকে মুক্তিযোদ্ধা করে দেয়ার নামে ৫০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে যারা মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেনি তাদের চাপের মুখে গৃহীত টাকার একটি অংশ ফেরত দিয়েছে। বাকি অর্থ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। ভুক্তভোগীরা আরও অভিযোগ করেন যে, মুক্তিযোদ্ধা তালিকা হওয়ার পর তা নোটিস বোর্ডে টাঙিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও তা টাঙানো হয়নি। এ ক্ষেত্রে বাদপড়া মুক্তিযোদ্ধারা আপিল করার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন।
×