ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এখন কোন্ মাস? দিব্যি বলে দিচ্ছে মে ফ্লাওয়ার!

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৩ মে ২০১৭

এখন কোন্ মাস? দিব্যি বলে দিচ্ছে মে ফ্লাওয়ার!

মোরসালিন মিজান ॥ মে মাসের ঠিক প্রথম দিনই ফুটল মে ফ্লাওয়ার। বাসার সামনে ছোট্ট বাগান। সেখানে কিছু টব। মৌসুমী ফুল ফুটেছিল। একটি টব শুধু আলাদা। খুব ব্যতিক্রম। এই টবে বহুদিন ফুল ছিল না। গাছও না। তবে এপ্রিল এলেই কিছু একটা পরিবর্তন দেখা যাবে, জানা ছিল। হলোও তাই। মাসের প্রথম সপ্তাহে টবের মাটি ফুঁড়ে পেঁয়াজের মতো গোলাকার কিছু একটা বের হতে দেখা গেল। সেখান থেকে মহিষের সিঙের মতো দেখতে সবুজ পাতা। পরে নরম সরু কা- দৃশ্যমান হলো। এপ্রিলের শেষভাগে এসে ফুল ফুটি ফুটি অবস্থা। মে মাসের প্রথম দিন বাসা থেকে বের হয়ে বাগানের দিকে তাকাতেই বিস্ময়। আর কোন ফুল চোখে পড়ে না। সব ছাপিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে মে ফ্লাওয়ার! পরিপূর্ণ অবয়ব। হালকা লাল রং ফুল। আকারে ক্রিকেট বলের চেয়ে সামান্য বড়। প্রথম দেখায় মনে হয়, পুরোটা কাঁটায় ঘেরা। আদতে তা নয়। সামান্য ছুঁয়ে দিতেই সেটি বোঝা গেল। নরম কোমল একটা অনুভূতি। সেই সঙ্গে আঙুলের ডগায় উঠে এলো ছিটেফোঁটা হলুদ রং। যেন ভালবাসার চিহ্ন! হাতে মোবাইল ফোনটা ছিল। মনের অজান্তেই কয়েকটা ক্লিক। এত সুন্দর ফুল; সামান্য মোবাইল ফোন ধরবে কী করে? তবু ছবি করে রাখা। কারণ মে মাস শেষে আর দেখা যাবে না এই ফুল। অন্য সব মাসের সঙ্গে এর যে ভীষণ আড়ি! ফুলপ্রেমীরা জানেন, মে মাসে যত ফুলই ফুটুক, মে ফ্লাওয়ার একটি-ই। এখন এই মে মাসে বাসার বাগানে ছাদে বেলকনিতে সৌন্দর্য নিয়ে ফুটেছে ফুলটি। যারা চেনেন, দেখেই বলে দিচ্ছেন এখন মে মাস! মাসের পুরোটাজুড়েই থাকবে প্রিয় এই ফুল। উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মা জানান, মে ফ্লাওয়ারের অস্তিত্ব প্রথম চোখে পড়ে আফ্রিকা মহাদেশে। বর্তমানে পৃথিবীর অনেক দেশেই হয়। বাংলাদেশেও আছে বহুকাল ধরে। গোলাকার দেখতে হওয়ায় ফুলটিকে বল লিলিও বলা হয়। একই কারণে বলা হয় গ্লোব লিলি। পাউডার পাফ লিলি, আফ্রিকান ব্লাড লিলি নামেও পরিচিত। মে ফ্লাওয়ার গাছ লম্বায় ১০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। ফুল প্রায় ৩ সেমি চওড়া। পাপড়ি ও পুংকেশর অসমান। শেষ করা যাক পেছনের কথা বলে। গত বছরের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে এই প্রতিবেদককে ফোন করেন শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী। শহীদ বুদ্ধিজীবী ডাঃ আলীম চৌধুরীর সহধর্মিণী তার ঢাকার বাসায় সুন্দর বাগান করেন। সেখানে সারা বছরই কোন না কোন ফুল ফুটে থাকে। তবে মে ফ্লাওয়ার যে স্পেশাল সেটা তার উচ্ছ্বাস ভরা কণ্ঠ শুনে আরও একবার বোঝা হয়। ফুলটি ফোটার কথা খুব আগ্রহ নিয়ে জানান তিনি। বলেন, একটি দুটি নয়। অনেক মে ফ্লাওয়ার ফুটেছে কিন্তু! দেখে আসারও আমন্ত্রণ ছিল তার পক্ষ থেকে। সেবার যাওয়া হয়নি। এবারও না। তবে বাগান যে তার মে ফ্লাওয়ারে ভরে উঠেছে, অনুমান করা যায়। শ্যামলী নাসরিনের মতো কেউ কেউ তাদের শখের বাগানে মে ফ্লাওয়ার ফোটাতে পেরেছেন। সবাই পারেন না। এদিক থেকে দেখলে, ফুলটি যথেষ্ট দুর্লভ।
×