ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

বার্সিলোনাকে বিদায় করে সেমিতে জুভেন্টাস

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২১ এপ্রিল ২০১৭

বার্সিলোনাকে বিদায় করে সেমিতে জুভেন্টাস

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আরেকবার রূপকথার গল্প লিখতে পারলেন না মেসি-নেইমার-সুয়ারেজরা। আর তাই উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফুটবলের কোয়ার্টার ফাইনালেই পথচলা শেষ হয়ে গেছে বার্সিলোনার। বুধবার রাতে ঘরের মাঠ ন্যুক্যাম্পে শেষ আটের দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে জুভেন্টাসের মুখোমুখি হয়েছিল কাতালানরা। তুরিনে প্রথম লেগ ৩-০ গোলে হেরে আসায় টিকে থাকতে ম্যাচটিতে বড় জয়ের বিকল্প ছিল না লুইস এনরিকের দলের। কিন্তু জয় দূরে থাক, কোনরকমে হার এড়িয়েছে তারা। অর্থাৎ দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে জুভেন্টাসের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেছে বার্সিলোনা। আর এতেই তাদের বিদায় নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি সেমিফাইনালে উঠে গেছে জিয়ানলুইজি বুফনের জুভেন্টাস। দুই লেগ মিলিয়ে জুভদের জয় ৩-০ গোলে। শেষ চারের টিকেট পেয়েছে ফরাসীর মোনাকোও। শেষ আটের ফিরতি লেগে নিজেদের মাঠে তারা ৩-১ গোলে হারিয়েছে জার্মান ক্লাব বরুশিয়া ডর্টমুন্ডকে। প্রথম লেগেও ডর্টমুন্ড থেকে ৩-২ গোলে জিতে এসেছিল ফরাসী ক্লাবটি। দুই লেগ মিলিয়ে তাই ৬-৩ গোলের বড় জয়ে সেমিতে উঠেছে মোনাকো। ১৩ বছর পর ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের আসরে সেমিফাইনালে উঠলো ফরাসী লীগ ওয়ানে শিরোপার পথে থাকা দলটি। আসলে রূপকথা বারবার হয় না। আর পিএসজিও নয় জুভেন্টাস। ফরাসী ক্লাব পিএসজিকে সহজেই দুমড়ে মুচড়ে দেয়া সম্ভব হলেও জুভদের রক্ষণ ঠুনকো নয় যে মেসি-নেইমাররা চাইলেই সেটা ভাঙতে পারেন। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দলটির রক্ষণব্যুহ ভাঙতে পারেনি বার্সিলোনা। তাই তো অলৌকিক কিছু আর হয়নি। সঙ্গত কারণেই তুরিনের ওল্ড লেডি খ্যাত জুভেন্টাসের কাছে নতি স্বীকার করে বিদায় নিতে হয়েছে বার্সাকে। ঘরের মাঠ বলেই সম্ভাবনা কিছুটা টিকে ছিল বার্সিলোনার। তবে গোলপোস্টের নিচে বুফনের বিশ্বস্ত হাতজোড়াকে ফাঁকি দেয়াটা কি অত সহজ? ইতালিয়ান সিরি এ লীগে চলতি মৌসুমে ৩১ ম্যাচে মাত্র ২০ গোল হজম করেছেন বুফন। চ্যাম্পিয়ন্স লীগে জুভদের জালে মাত্র দুটি গোল দিতে পেরেছে প্রতিপক্ষ। তবে ওই যে, ম্যাচটি ছিল বার্সার মাটিতে। আর প্রতিপক্ষ দলে নেইমার-সুয়ারেজে-মেসির মতো বিশ্ব তারকারা। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করতে পারেননি বিখ্যাত এমএসএন ত্রয়ী। ন্যুক্যাম্পে শুরু থেকেই ফেবারিটের মতো খেলেছে জুভেন্টাস। প্রথম কয়েক মিনিটের মধ্যে গঞ্জালো হিগুয়াইন ও জুয়ান কুয়ারডাডোর শট লক্ষ্যভ্রষ্ট না হলে গোল হজম করতে হতো স্বাগতিকদের। ম্যাচের ১৯ মিনিটে প্রথম সুযোগ পায় বার্সা। মেসির দেয়া বলে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন জর্ডি আলবা। এর পরের মিনিটে মেসির শট গোলপোস্ট ঘেঁষে চলে যায়। এরপর প্রথমার্ধে বুফন বেশ কয়েকবার বাধা হয়ে দাঁড়ান স্বাগতিকদের সামনে। দ্বিতীয়ার্ধটাও জুভদের। বল দখলের নয়, গোল বাঁচানোর লড়াইয়ে। প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধেও ৬০ শতাংশের বেশি বল দখলে রাখেন মেসি-নেইমাররা। তবে নিজেদের রক্ষণটা ভালভাবেই সামলিয়েছেন আন্দ্রে বারজাগলি, লিওনার্ডো বুনোচ্চি ও জিওর্জিও চিয়েল্লিনিরা। বার্সার প্রতিটি আক্রমণ এই ত্রয়ীর সামনে এসে শেষ হয়েছে। পুরো ম্যাচে একটিও গোল করতে পারেনি স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নরা। এর ফলে ২০০২-০৩ মৌসুমের মতোই চ্যাম্পিয়ন্স লীগের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বার্সিলোনাকে বিদায় করে দিল জুভেন্টাস। ওই মৌসুমে আসরের প্রথম লেগ ১-১ গোলে ড্র হলেও, দ্বিতীয় লেগ ২-১ গোলে জিতে সেমিতে উঠেছিল জুভেন্টাস। ম্যাচ শেষে জুভেন্টাস কোচ ম্যাসিমিলিয়ানো এ্যালেগ্রি বলেন, আনন্দের মাত্রাটা অনেক বেশি। যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। দলের খেলোয়াড়দের জন্যই আজ জুভেন্টাসের আনন্দ বহুগুণ বেড়ে গেছে। মাঠে তাদের দুর্দান্ত পারফর্মেন্স, বার্সিলোনাকে টপকে আমাদের সেমিফাইনালে নিতে যথেষ্ট ছিল। বার্সা কোচ লুইস এনরিকে বলেন, এভাবে বিদায় আমাদের কল্পনাতেও ছিল না। এ ম্যাচে ভাগ্য সহায় থাকলে আমরা উৎরে যেতে পারতাম, কিন্তু আমরা তা পারিনি। দোষ কাকে দেব বা ভুল কি ছিল, তা এখনও বুঝতে পারছি না। প্রথম লেগে নিজেদের শহরে বোমা হামলার শিকার হয়েছিল বরুশিয়া ডর্টমুন্ড। মোনাকোতে দ্বিতীয় লেগ খেলতে গিয়ে আরেক সমস্যায় পড়েছিল জার্মান ক্লাবটি। ট্রাফিক সমস্যার কারণে টিম হোটেলের সামনেই ২০ মিনিট আটকে ছিল তাদের বাস। খেলাও শুরু হয় পাঁচ মিনিট দেরিতে। এর প্রভাব কিনা বলা মুশকিল। যানজটের ওই সময়ের সঙ্গে মিল রেখেই ২০ মিনিটের মধ্যে যে দুই গোল খেয়ে বসে তারা। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা ডর্টমুন্ড হেরেছে ৩-১ গোলে। যে কারণে ২০০৪ সালের পর এই প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লীগের সেমিতে উঠেছে ফরাসী ক্লাব মোনাকো। এখন সেমিফাইনালে কে কার বিরুদ্ধে খেলবে তা জানা যাবে আজকের ড্র’র পর।
×