ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতে লেয়নের নতুন রেকর্ড

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ৮ মার্চ ২০১৭

ভারতে লেয়নের নতুন রেকর্ড

ব্যাঙ্গালুরু টেস্টে বল হাতে অনন্য এক রেকর্ড গড়েছেন নাথান লেয়ন। ভারতের মাটিতে এক ইনিংসে সেরা বোলিংয়ের নজির এখন অস্ট্রেলিয়ান এই স্পিনারের। দুর্দান্ত বোলিংয়ের পথে কেবল স্বাগতিকদের গুড়িয়েই দেননি, ব্যাঙ্গালুরু টেস্টের প্রথম দিনেই লেয়ন নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। টেস্ট ইতিহাসে ভারতের মাটিতে এ পর্যন্ত সফরকারী দলের হয়ে যত বোলার বল করেছেন এবং প্রথম কিংবা দ্বিতীয় ইনিংসে ৭টির অধিক উইকেট পেয়েছেন, তাদের সবাইকে পেছনে ফেলে সেরা বোলিংয়ের নতুন রেকর্ড গড়েছেন ২৯ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয়ান ঘূর্ণি বোলার। প্রতিপক্ষের ১০টি উইকেটের ৮টি তিনি একাই নিয়েছেন।। প্রথম ইনিংসে তার বোলিং ফিগার ২২.২-৪-৫০-৮! ভারতের মাটিতে যা নতুন রেকর্ড। তার আগে আরও তিনজন ভারত সফরে প্রথম কিংবা দ্বিতীয় ইনিংসে ৮ উইকেট নিয়েছেন। কিন্তু লেয়ন সবচেয়ে কম রান দিয়ে নতুন এই রেকর্ড গড়েন। অপর তিনজন হলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ল্যান্স ক্লুজনার, পাকিস্তানের সিকান্দার বখত ও অস্ট্রেলিয়ার জেসন ক্রেজা। ক্লুজনার ১৯৯৬ সালে কলকাতায় দ্বিতীয় ইনিংসে ২১.৩ ওভারে ৪ মেডেনসহ ৬৪ রান দিয়ে ৮ উইকেট নিয়েছিলেন। আর সিকান্দার বখত দিল্লীতে ১৯৭৯ সালে প্রথম ইনিংসে ২১ ওভার বল করে ৩ মেডেনসহ ৬৯ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ৮ উইকেট। ২০০৮ সালে নাগপুর টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২১৫ রান দিয়ে ৮ উইকেট নিয়েছিলেন সাকে অসি-স্পিনার ক্রেজা। পুনে টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে চমক দেখিয়েছিলেন আনকোড়া বা-হাতি ও’কেফে, ব্যাঙ্গালুরুর প্রথম ইনিংসেই জ্বলে ওঠেন অভিজ্ঞ ডানহাতি স্পিনার নাথান লেয়ন। যদিও বলা হয়েছিল ব্যাঙ্গালুরুতে পেসাররা ভাল করবেন। কিন্তু প্রথম দিনেই যেন পুনে টেস্টের পুনরাবৃত্তি! ৬৫তম টেস্টে লেয়নের মোট উইকেট ২৪১ (পরিসংখ্যান ব্যাঙ্গালুরু টেস্টের প্রথম ইনিংস পর্যন্ত)। গ্রেট শেন ওয়ার্ন অবসরে যাওয়ার পর তিনিই এখন অস্ট্রেলিয়ার নাম্বারওয়ান স্পিনার। টেস্ট ক্রিকেটে দুই-আড়াইশ’ উইকেট আহামরি কোন কীর্তি নয়। অনেকেই স্পর্শ করেছেন এই মাইলফলক। গত বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে নাথান লিয়ন ২০০ উইকেট পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ১৬তম বোলার হিসেবে। তবে একদিক দিয়ে লিয়ন হয়ে উঠেছেন সত্যিই অনন্য। তিনিই অস্ট্রেলিয়ার প্রথম অফস্পিনার, যিনি স্পর্শ করতে পেরেছেন এই ২০০ উইকেটের মাইলফলক। এসে গেছেন ২৫০Ñএর খুব কাছে। লেয়নের আগে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ২০০ উইকেট নিতে পেরেছেন মাত্র চারজন স্পিনার। মজার ব্যাপার হলো, তারা সবাই ছিলেন লেগস্পিনার। প্রথমজনের নাম ক্লারি গ্রিমেট। ১৯৩৬ সালে মাত্র ৩৬টি টেস্ট খেলেই ২০০ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি! ১৯৬১ সালে গ্রিমেটের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন রিচি বেনো। ১৯৯৫ সালে ২০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছিলেন সর্বকালের অন্যতম সেরা লেগস্পিনার শেন ওয়ার্ন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সবচেয়ে বেশি, ৭০৮টি উইকেট শিকারের রেকর্ড এখনো আছে ওয়ার্নের দখলে। আর ২০০৭ সালে ওয়ার্ন-বেনো-গ্রিমেটদের পাশে বসতে পেরেছিলেন আরেক লেগস্পিনার স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল। ওয়ার্ন-বেনোদের দেশে অফস্পিনারদের দেখা যায়নি খুব বেশি সফল ভূমিকায়। ফলে ২৯ বছর বয়সী লেয়ন অস্ট্রেলিয়ান অফস্পিনারদের জন্য এখন আদর্শই হয়ে উঠেছেন। তার আগে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে সফল অফস্পিনার ছিলেন হিউজ ট্রাম্বল। ১৮৯০ থেকে ১৯০৪ সাল পর্যন্ত ৩২টি টেস্ট খেলে তিনি নিয়েছিলেন ১৪১ উইকেট। অস্ট্রেলিয়ার অফস্পিনারদের মধ্যে ১০০ উইকেট নিতে পেরেছেন আর মাত্র তিনজন। এ্যাশলে ম্যালেট (১৩২), ব্রুস ইয়ার্ডলি (১২৬) ও ইয়ান জনসন (১০৯)। শুধু অস্ট্রেলিয়াতে নয়, এশিয়ার বাইরের ক্রিকেটার হিসেবে খুব কম বোলারই স্পর্শ করতে পেরেছেন টেস্টে ২০০ উইকেটের মাইলফলক। লায়নের আগে এই অবস্থানে দেখা গেছে মাত্র দুজনকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ল্যান্স গিবস (৩০৯) ও ইংল্যান্ডের গ্রায়েম সোয়ান (২৫৫)। স্টিভ ও’কেফের গল্পটা আবার ভিন্ন। মাত্র ৪ টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে এবার ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন। শেন ওয়ার্ন তো তার অন্তভুক্তি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিলেন! সেই তিনিই পুনে টেস্টে জয়ের নায়ক। ১২ উইকেট নিয়ে ভারতের মাটিতে দেশকে প্রায় ১৩ বছরে প্রথম জয়ের স্বাদ দিয়েছেন। দুই ইনিংসে তার বোলিং ফিগার ১৩.১-২-৩৫-৬ ও ১৫-৪-৩৫-৬; ভারতের মাটিতে কোনো ভিনদেশী স্পিনারের এটিই ম্যাচে সেরা বোলিংয়ের নতুন রেকর্ড। ভারতে বিদেশী কোন স্পিনারের পক্ষে এটিই সেরা টেস্ট ম্যাচ বোলিং। তবে সার্বিকভাবে তালিকায় ও’কেফের আগে আছেন শুধু ইংলিশ অলরাউন্ডার ইয়ান বোথাম। তিনি ১৯৮০ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুম্বাই টেস্টে ১০৬ রানে নিয়েছিলেন ১৩ উইকেট। আর অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে এর আগে ভারতের মাটিতে সেরা বোলিং নৈপুণ্য দেখিয়েছিলেন মিডিয়াম পেসার এ্যালান ডেভিডসন। ১৯৫৯ সালেল ডিসেম্বরে কানপুর টেস্টে তিনি দখল করেছিলেন ১২৪ রানে ১২ উইকেট। সেই ২০১৪ সালে টেস্ট ও’কেফের অভিষেক পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। সবমিলিয়ে ৪ টেস্টের ৭ ইনিংস বোলিং করে কখনও এক ইনিংসে ৩ উইকেটের বেশি নিতে পারেননি। ঝুলিতে ছিল মাত্র ১৪ উইকেট। এর আগেই অবশ্য ২০১১ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদযাত্রা শুরু হয়েছিল টি২০ দিয়ে। তারপরও মাত্র ৭ টি২০ খেলতে পেরেছেন। ওয়ানডে ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত অভিষেকই হয়নি মালয়েশিয়ান বংশোদ্ভূত নিউ সাউথ ওয়েলসের ক্রিকেটার ও’কেফের। কিন্তু ভারতের মাটিতে স্পিনবান্ধব উইকেটে খেলতে হবে এমন চিন্তা করেই এবার তাকে স্কোয়াডে রাখে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। ‘আমি যদি বলি সোক (স্টিভ ও’কেফের ডাক নাম) অসাধারণ, তা হলে ওকে বরং ছোট করা হবে! পুনেতে সে যা করেছে, এক কথায় এ্যাম্যাজিং, ও আমাদের নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। বিশ্বাস করতে শেখাচ্ছে ভারতের মাটিতেও টেস্টে সাফল্য পাওয়া সম্ভব।’ বলেন অসি-সেনাপতি স্টিভেন স্মিথ। স্বাভাবিক। ভারতের মাটিতে দীর্ঘ প্রায় ১৩ বছর পর জয়টা যে এসেছে ও’কেফের অবিশ্বাস্য বোলিংয়ে ভর করে। ম্যাচসেরা হয়েছেন আনকোড়া এই বাহাতি অর্থোডক্স বোলার।
×