ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে দুইদিনের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ দল;###;শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ সিরিজ

বৃহস্পতিবার থেকে ‘ব্যাট-বলে’র লড়াই শুরু

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১ মার্চ ২০১৭

বৃহস্পতিবার থেকে ‘ব্যাট-বলে’র লড়াই শুরু

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ভারতের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট ম্যাচটি শেষে এখনও বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা ‘ব্যাট-বলে’র লড়াইয়ে নামতে পারেননি। বৃহস্পতিবার থেকেই শ্রীলঙ্কায় সেই লড়াইয়ে নামবেন। এদিন দুইদিনের প্রস্তুতি ম্যাচ শুরু হবে। শ্রীলঙ্কা একাদশের বিপক্ষে বাংলাদেশ দল প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে। ম্যাচটি মরাতুয়ার তাইরন্নে ফার্নান্দো স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে বৃষ্টির কবলে পড়েছে বাংলাদেশ দল। সোমবারই শ্রীলঙ্কায় পৌছে গেছে দল। মঙ্গলবার ঐচ্ছিক অনুশীলন করার কথাও ছিল। কিন্তু বৃষ্টির জন্য তা করা হয়নি। আজ অনুশীলন করে বৃহস্পতিবারই ‘ব্যাট-বলে’র লড়াইয়ে নামবেন ক্রিকেটাররা। এ ম্যাচ দিয়ে শ্রীলঙ্কায় প্রায় চার বছর পর আবারও ‘ব্যাট-বল’ হাতে নামবেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। ৭ মার্চ গলে প্রথম টেস্ট শুরুর আগে ক্রিকেটাররা বুঝেও যাবেন, কিভাবে খেলতে হবে। ম্যাচটিতে স্বাভাবিকভাবেই ‘জয়-পরাজয়’ মুখ্য নয়। মুখ্য হচ্ছে, বাংলাদেশ দল কতটা প্রস্তুতি সেরে নিতে পারল। শুরুতে শ্রীলঙ্কা সফরে হবে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। ৭ মার্চ প্রথমটি ও ১৫ মার্চ কলম্বোয় দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচটি শুরু হবে। টেস্ট সিরিজের আগে বাংলাদেশ দল এ একটি প্রস্তুতি ম্যাচই খেলার সুযোগ পাচ্ছে। সেই প্রস্তুতি ম্যাচটি স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ দলের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূূর্ণ হয়ে উঠছে। এ ম্যাচটিতে যে আবার পেসারদের ভালভাবে পরখ করেও নেয়া হবে। সঙ্গে ওপেনিংয়ে সৌম্য সরকার না লিটন কুমার দাসকে খেলানো হবে, তারও ফয়াসালা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই প্রস্তুতি ম্যাচটি খুবই গুরুত্বপূূর্ণ হয়ে উঠেছে। এবার শুধু প্রস্তুতি ম্যাচই নয়, দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের পর ২৫, ২৮ মার্চ ও ১ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়ানডে এবং ৪ ও ৬ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় প্রথম ও দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচের সিরিজও গুরুত্বপূূর্ণ। বিশেষ করে টেস্ট সিরিজের দিকেই সবার দৃষ্টি রয়েছে। টেস্টে শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা অনুপস্থিত। এমন সুযোগে বাংলাদেশ ভাল করবে, জয় তুলে নিতে পারবে; সেই বিশ্বাস সবার মধ্যে জন্মে গেছে। এখন বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের সেই ‘জয়’ এনে দেয়ার পালা। গলে প্রথম টেস্ট হবে। যেখানে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ প্রথমবার খেলতে নেমেই ঝলক দেখিয়েছিল। সেই টেস্ট সিরিজটিই শ্রীলঙ্কার মাটিতে বাংলাদেশের সর্বশেষ টেস্ট সিরিজ ছিল। চার বছর পর আবার টেস্ট খেলতে শ্রীলঙ্কায় গেছে বাংলাদেশ দল। সেই গলের স্মৃতি অনুপ্রেরণাও যোগাচ্ছে। সেই গল টেস্টে তিলকারতেœ দিলশান, কুমার সাঙ্গাকারা, লাহিরু থিরিমান্নে, এ্যাঞ্জলো ম্যাথুস, দিনেশ চান্দিমাল, নুয়ান কুলাসেকারা, রঙ্গনা হেরাথ, অজন্থা মেন্ডিসের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা খেলেছেন। খেলেননি শুধু মাহেলা জয়াবর্ধনে ও থিলান সামারাভিরা। ম্যাথুসের আবার টেস্ট নেতৃত্বে প্রথম ম্যাচ ছিল সেটি। ম্যাচটিতে বাংলাদেশ দুর্দান্ত নৈপুণ্য প্রদর্শন করে। ড্র করে। কুমার সাঙ্গাকারা, থিরিমান্নে, চান্দিমাল সেঞ্চুরি করেন। ৫৭০ রান করে শ্রীলঙ্কা। মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ বিপাকেই পড়ে গেল। কিন্তু জবাবটা কি দারুণ দেয় বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহীম ডাবল সেঞ্চুরি করেন। যা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তিগত ডাবল সেঞ্চুরির ইনিংস। মোহাম্মদ আশরাফুল ১০ রানের জন্য ডাবল সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেন। আর নাসির হোসেনও শতক করেন। এ তিন ব্যাটসম্যানের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ম্যাচটি ড্র হয়। সেই স্মৃতি এখনও ক্রিকেটারদের অনুপ্রেরণা দিয়ে যায়। এবারত শ্রীলঙ্কা দলটি আবার আগের চেয়ে অনভিজ্ঞ। অভিজ্ঞ দিলশান, সাঙ্গাকারা, জয়াবর্ধনে, কুলাসেকারা, মেন্ডিস, ম্যাথুস নেই। তাই এবার ড্র নয়, শ্রীলঙ্কাকে হারানোর সুযোগই দেখা হচ্ছে। বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক মুশফিকও সেই ভাবনাই করেছেন। সফর পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে সিরিজটিতে জয়ের মোক্ষম সুযোগ হিসেবেই দেখছেন। বলেছেন, ‘সুযোগ (সিরিজ জেতার) তো অবশ্যই। প্রতি সিরিজেই নতুন নতুন সুযোগ থাকে ভাল কিছু করার জন্য। ওদের দলে অনেক দিন ধরে ভাল খেলেছেন, এমন কয়েকজন (কুমার সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধনে, তিলকারতেœ দিলশান, অজন্থা মেন্ডিস, নুয়ান কুলাসেকারা) নেই। নিয়মিত অধিনায়ক এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসও নেই। বাংলাদেশ অনেক দিন ধরেই ভাল ক্রিকেট খেলছে। সবদিক বিবেচনা করে বলব যে, অবশ্যই সুযোগ আছে। কিন্তু সবকিছু নির্ভর করছে আমরা কতটা সেরা ক্রিকেট খেলতে পারব, সেটার উপর। আমরা যদি নিজেদের সেরাটা খেলতে পারি, তাহলে আমাদের পক্ষেই রেজাল্ট আসবে। আমাদের কোচিং স্টাফদের মাধ্যমে কিছু তথ্য আমরা সংগ্রহ করতে পেরেছি। সেটাও হয় তো কাজে দেবে।’ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের আগে ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও ভারতের বিপক্ষে টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। টেস্টগুলোতে সব ধরনের অভিজ্ঞতারই সম্মুখীন হয় দল। তাই সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষাও নেয়া হয়েছে। এবার সেই শিক্ষা কাজে লাগানোর পালা। মুশফিক মনে করছেন, ‘এটা সত্য যে, আমরা আমাদের ক্রিকেটের লেভেলটা একটু উপরে নিয়ে আসতে পেরেছি। ফলে প্রত্যাশা একটু একটু করে বাড়ছে। টেস্ট বা ওয়ানডে, টি২০; যাই হোক না কেন, মানুষ মনে করে যে, বাংলাদেশ যে কোন দলের বিপক্ষে ভাল খেলে জিততে পারে। এটা আমাদের জন্য খুব ভাল বিষয়। একটা কথা বলব যে, সাকিব, মুস্তাফিজ, মিরাজ; এ রকম তিনজন আলাদা আলাদাভাবে স্কিল ফুল বোলার যখন একটা দলের হয়ে বোলিং করবে, তখন প্রতিপক্ষের জন্য সেটা চাপের বিষয়ই হবে। এটা আমাদের দলের জন্য দারুণ বিষয়। এছাড়া আমরা টানা তিনটা টেস্ট খেলে এই সিরিজ খেলতে যাচ্ছি, এটাও আমাদের এগিয়ে রাখবে। প্রস্তুতির জন্য এটা ভাল সুযোগ ছিল।’ সুযোগ এখন কাজে লাগাতে হবে। শ্রীলঙ্কায় চার বছর খেলা হয়নি। তাই সবকিছু নতুন করেই শুরু করতে হবে। শুরুতেই তাই প্রস্তুতি ম্যাচটি দারুণ কাজে দেবে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের। আর এ ম্যাচটি দিয়েই ‘ব্যাট-বলে’র লড়াইও শুরু হয়ে যাবে। হোক সেটি প্রস্তুতি ম্যাচ। টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে লঙ্কান মাটিতে ম্যাচ খেলার সুযোগ তো মিলল। তাই মুশফিক বলেছেন, ‘সব ঠিক আছে। শ্রীলঙ্কায় অনুশীলন ম্যাচ দিয়ে সিরিজ শুরু হবে। প্রত্যাশা থাকবে, সেখানে যাতে সবাই নিজেদের দক্ষতার সেরা ছন্দটা ফিরে পায়।’
×