ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

সাকিবই এখন ভরসা

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১৬ জানুয়ারি ২০১৭

সাকিবই এখন ভরসা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের টানা তিনটি দিন দাপট দেখিয়েছে বাংলাদেশ। অথচ চতুর্থদিনে এসেই টালমাটাল হয়ে গেছে দল। এমনই অবস্থা হয়েছে, দলের হারের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। এখন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানই ভরসা। টেস্ট বাঁচাতে পারেন একমাত্র সাকিবই। কারণ সাকিব ছাড়া ভরসা করার মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান যে নেই। মুমিনুল হক আছেন। তিনি ১০ রান নিয়ে আজ পঞ্চমদিনে ব্যাট করতে নামবেন। ব্যাটসম্যান হিসেবে এরপর সাকিব, মুশফিক, সাব্বির আছেন। আছেন ইমরুল কায়েসও। তার মানে হিসেবে আরও পাঁচ ব্যাটসম্যান এখনও আছেন। এরমধ্যে ইমরুল ও মুশফিককে নিয়ে আছে সংশয়। মুশফিক প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে গিয়ে ইনজুরিতে পড়েছেন। প্রথম ইনিংসে ১৫৯ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলার পথে বেশ কয়েকবার নিউজিল্যান্ড বোলারদের বলে শরীরে ও আঙ্গুলে আঘাত পেয়েছেন মুশফিক। মাঠে কয়েকবার আঙ্গুলের শুশ্রƒষা করে আবার খেলা চালিয়ে গেছেন। কিন্তু শনিবার ইনিংস ঘোষণার পর আর মাঠে নামেননি। নামতে পারেননি। আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলী ও ডান হাতের তর্জনিতে। ডানহাতে আবার ব্যথা বেশি। উভয় আঙ্গুলেরই এক্সরে করা হয়েছে। আশার কথা হচ্ছে কোন চিড় ধরা পড়েনি। তবে ব্যথা এখনও আছে। দ্বিতীয় ইনিংসে মুশফিক ব্যাট করতে নামবেন বলেও জানান বিসিবির মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমাম। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ব্যথা নিয়ে আর কতটা এগিয়ে যেতে পারবেন মুশফিক? সেই প্রশ্ন সবার মধ্যেই আছে। যতদূর বোঝা যাচ্ছে, ওপেনার ইমরুলতো আর ব্যাটই করতে পারবেন না। ইনজুরিতে পড়ে ২৪ রান স্কোরবোর্ডে যোগ করে ‘রিটায়ার্ড হার্ট’ হন এ ব্যাটসম্যান। ইনজুরিতে পড়া মুশফিকুর রহীমের বিকল্প হিসেবে ১৪৮.২ ওভার উইকেটের পেছনে দায়িত্ব পালন করেন ইমরুল। লম্বা সময় অনভ্যস্ত কাজটিই করে যান। তার একটা প্রভাবতো থাকবেই। থেকেছেও। নিউজিল্যান্ডের ইনিংস শেষ হতেই ব্যাটিংয়ে নামতে হয়েছে। আর তাই সারাক্ষণ উইকেটের পেছনে একটানা ফিল্ডিং করার যে ধকল তা কাটিয়ে উঠতে পারেননি ইমরুল। ক্লান্তি ধরে যায়। একটু দ্রুত রান নিতে গিয়েই ঝামেলা বাধে। ১৩তম ওভারের পঞ্চম বলে পয়েন্টে বল ঠেলে দিয়েই এক রান নিতে দৌড়ান তামিম। ইমরুলও দ্রুত রান নিতে গিয়ে রানআউট হওয়ার ভয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। আর সেখানেই ঝামেলা বেধে যায়। আর উঠতে পারেননি। মাঠেই যন্ত্রণায় কাতরানোর মতো অবস্থা হয়। কিছুক্ষণ মাটিতে শুয়েও থাকেন। শেষ পর্যন্ত স্ট্রেচারে করে তাকে মাঠের বাইরে নিয়ে যেতে হয়। দলের মিডিয়া ম্যানেজার জানিয়েছেন, ‘ইমরুলের চোট বাঁ উরুতে। এক্সরে করা হয়েছে। কিন্তু কোন সমস্যা ধরা পড়েনি। পরে তার আলট্রাসাউন্ড করানো হবে।’ আলট্রাসাউন্ডের পরই জানা যাবে চোট কতটা গুরুতর। দ্বিতীয় ইনিংসে আর ব্যাট করতে পারবেন কিনা। তবে বাঁ উরুতে ব্যথা আছে। ব্যাট করতে পারলেওতো স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাটিং করতে পারবেন না। তাই ইমরুলের ব্যাটিং নিয়েও আছে সংশয়। তাতে বোঝা যাচ্ছে, এ মুহূর্তে পুরোদস্তুর সুস্থ, ফিট ব্যাটসম্যান হিসেবে শুধু মুমিনুল, সাকিব ও সাব্বিরই আছেন। সাব্বির আবার খুব বেশি টেস্ট খেলেননি। ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্ট খেলতে নেমেছেন। যদিও প্রথম ইনিংসে অপরাজিত ৫৪ রান করেছেন। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে থাকছে ভীষন চাপ। সেই চাপে সাব্বির ব্যাটিংয়ে মূল ভরসা নিশ্চয়ই নন। তার মানে ভরসা হয়ে থাকছেন শুধু মুমিনুল ও সাকিব। চতুর্থদিন শেষে নিউজিল্যান্ড থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে ১২২ রানে। প্রথম ইনিংসে ৫৯৫ রান করে বাংলাদেশ। চতুর্থদিনে দেড়ঘণ্টা আগে নিউজিল্যান্ড ৫৩৯ রান করে অলআউট হয়ে যায়। শুরুতেই ৫৬ রানে এগিয়ে থাকে বাংলাদেশ। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শেষের দেড়ঘণ্টায় ১৮.৩ ওভার খেলে ৬৬ রান করে বাংলাদেশ। কিন্তু হারিয়ে বসে ৩টি উইকেট। ওপেনার তামিম ইকবাল, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও ‘নাইট ওয়াচম্যান‘ হিসেবে ব্যাট হাতে নামা মেহেদী হাসান মিরাজও আউট হয়ে যান। মিরাজ আউট হতেই চতুর্থদিনও শেষ হয়ে যায়। এখন ব্যাট হাতে নামবেন সাকিব। যিনি প্রথম ইনিংসে দেশের হয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২১৭ রানের ইনিংস খেলেছেন। টেস্টে মুমিনুল ভরসাবান ব্যাটসম্যান। সেই প্রমাণ তিনি দিয়েছেনও। তবে তারচেয়ে ভরসা বেশি সাকিবের ওপরই। তিনি যে অনেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। মুমিনুল যতই ভাল খেলুক। এ মুহূর্তে যদি সাকিব দলের হাল না ধরেন তাহলে দল বিপদেই পড়ে যাবে। ম্যাচটি থেকে অন্তত ড্র ফল বের করতে হলে আজ দুইটি সেশন খেলতে হবে। সেই দুই সেশন খেলতে হলে মুমিনুলকেতো থাকতেই হবে। সেই সঙ্গে সাকিবকে আবারও লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং করতে হবে। মুমিনুল যতই উইকেটে থাকুন, পরের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সাকিব যদি হাল না ধরেন, তাহলে ম্যাচ থেকে ভাল ফল বের করে আনা কঠিন। সাকিব উইকেট আঁকড়ে না থাকলেই বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে। আর তাই সবার দৃষ্টি এখন সাকিবের দিকেই। তিনি উইকেটে থাকলে বাকি ব্যাটসম্যানরাও ভরসা পাবেন। আর ভরসা পাওয়া মানেই হচ্ছে এগিয়ে যাওয়া। সেই সঙ্গে সাকিবের সঙ্গে উইকেট আঁকড়ে থাকার সাহসও মিলবে। আর তাই সাকিবের ওপরই এখন ভরসা।
×