ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ডাভোস সম্মেলনে যোগ দিতে আজ প্রধানমন্ত্রী সুইজারল্যান্ড যাচ্ছেন

শিল্প, বাণিজ্য, বিনিয়োগ উন্নয়ন ও নিরাপত্তা বিষয়ে আলোচনা হবে

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৫ জানুয়ারি ২০১৭

শিল্প, বাণিজ্য, বিনিয়োগ উন্নয়ন ও নিরাপত্তা বিষয়ে আলোচনা হবে

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক সভায় যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রবিবার সুইজারল্যান্ড যাচ্ছেন। বাংলাদেশ থেকে এই প্রথমবারের মতো কোন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ডব্লিউইএফ বার্ষিক সভায় যোগ দিচ্ছেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অন্যান্য দেশের সরকারপ্রধানদের মধ্যে সাইডলাইনে বৈঠক হতে পারে। শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এসব তথ্য জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুইজারল্যান্ড সফর নিয়ে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ছাড়াও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহারিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৬-২০ জানুয়ারি সুইজারল্যান্ড সফর করবেন। ডব্লিউইএফ’এর নির্বাহী চেয়ারম্যান অধ্যাপক ক্লাউস সোয়াবের বিশেষ আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছেন। অধ্যাপক সোয়াব গত সেপ্টেম্বর মাসে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ চলাকালীন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাত করে তাঁকে এ বছরের সম্মেলনে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানান। সুইজারল্যান্ডের ডাভোস সম্মেলনে যোগদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা রয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ডব্লিউইএফ সুইজারল্যান্ডভিত্তিক একটি অলাভজনক সংস্থা যা সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিশ্ব বাণিজ্য বৃদ্ধি ও প্রসারে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে থাকে। সমসাময়িক বিশ্ব-রাজনীতি ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা নিরূপণ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি-প্রকৃতি, নিয়ামক ও করণীয় বিশ্লেষণের মাধ্যমে সম্ভাব্য বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উদ্ভাবনী ধারণা, পন্থা এবং সমাধানের উপায় ব্যাপক আলোচনার মধ্য দিয়ে খুঁজে বের করা সংস্থাটির মূল উদ্দেশ্য। সাম্প্রতিক সময়ে নীতি-নির্ধারক, শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং বাণিজ্য, শ্রম ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ সমাজের সকল পর্যায়ের অংশগ্রহণের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জনে ডব্লিউইএফ বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে থাকে। সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রতি বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত ডব্লিউইএফ-এর বার্ষিক সভায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সরকারী, বেসরকারী, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যমের শীর্ষ স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করে থাকেন। এবারের সভায় সুইডেন, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, শ্রীলঙ্কা, পেরু, জর্দান, মিসর ও কাতারসহ বিশ্বের প্রায় ৪৫টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান এবং ডব্লিউটিও, ইউনেস্কো, ইউএনডিপি, আঙ্কটাড, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রধানরা অংশগ্রহণ করবেন। জাতিসংঘের নব নির্বাচিত মহাসচিব অ্যান্তোনিয় গুতারেস এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন। সংবাদ সম্মেলেন এক প্রশ্নের উত্তরে আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান, সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে অন্যান্য দেশের সরকারপ্রধানদের সাইডলাইন বৈঠক হতে পারে। তবে সে বিষয়ে এখনই বিস্তারিত জানানো সম্ভব নয় বলেও তিনি জানান। আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান, বর্তমান বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতিতে বিরাজমান অস্থিতিশীলতা, অনিশ্চয়তা এবং ক্রমপরিবর্তনশীল মেরুকরণের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের পার¯পরিক মিথষ্ক্রিয়ার মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি, নিরাপত্তা ও অগ্রগতির বিষয়ে ভবিষ্যত কর্মপন্থা প্রস্তাবনার আলোকে এবারের সম্মেলনটি এক বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে। এ বছর ডব্লিউইএফ সভার প্রতিপাদ্য ‘সংবেদনশীল ও দায়িত্ববান নেতৃত্ব’। বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে শিল্প, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, উন্নয়ন এবং নিরাপত্তা বিষয়ক অগ্রগতি ও করণীয় সম্পর্কে এ সভায় আলোচনা হবে। সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বের ভিত্তি ও ক্ষেত্রসমূহ এ সভার মধ্য দিয়ে আরো মজবুত ও প্রসারিত হবে বলে আশা করা যায়। এবারের বার্ষিক সভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পানি, অর্থনীতি, টেকসই উন্নয়ন, আঞ্চলিক সহযোগিতা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, তথ্য প্রযুক্তি এবং নারী নেতৃত্ব ও ক্ষমতায়ন বিষয়ে বিভিন্ন প্লেনারি ও প্যানেল সেশনে অংশগ্রহণ করবেন। এ সকল প্যানেল আলোচনা ও সেশনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা ও মরিশাসের রাষ্ট্রপতিদ্বয়, নরওয়ে, শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডস ও পেরুর প্রধানমন্ত্রীবৃন্দ সহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ সমসাময়িক বৈশ্বিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ আজ এক উন্নয়ন বিস্ময়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, জলবায়ু, দুর্যোগ মোকাবেলা, তথ্য প্রযুক্তি, অভিবাসন ও পানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বে একটি রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ভিশন ২০২১-কে সামনে রেখে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে সক্ষমতা অর্জনে সরকারের নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, এবারই প্রথম ডব্লিউইএফ বাংলাদেশের কোন নির্বাচিত সরকারপ্রধানকে এই সম্মানজনক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ফলে এই আমন্ত্রণ একদিকে যেমন বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের শক্তিশালী ভূমিকা ও অবস্থানকে প্রতিফলিত করে, অন্যদিকে তেমনি প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য ও দূরদর্শী নেতৃত্ব যে আজ তাঁকে বিশ্ব দরবারে এক অনন্য আসনে বসিয়েছে তারও ইঙ্গিত বহন করে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অর্জন, সাফল্য এবং বিনিয়োগ সম্ভাবনার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোকপাত করা এবং বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক ইস্যুতে, বিশেষ করে অর্থনীতি ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বার্থ আরও সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে ডব্লিউইএফ বার্ষিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণ কাক্সিক্ষত ফল বয়ে আনবে বলে আমরা আশা করছি। এর ফলে বিশ্ব পরিম-লে বাংলাদেশকে একটি আধুনিক, উদার, গণতান্ত্রিক ও দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে আরো একবার তুলে ধরার সুযোগ তৈরি হবে। প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণের ফলে এ সম্মেলনটি বিশ্বের শীর্ষ বহুজাতিক কো¤পানি, ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধকরণের ক্ষেত্রেও প্রভাবকের ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা মনে করি। ফলে সার্বিক বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন এ সফরটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ হবে বলে আমরা আশা করছি। ডব্লিউইএফ সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গী দল ১৫ জানুয়ারি ঢাকা ত্যাগ করবেন। সম্মেলনে অংশগ্রহণ শেষে ২১ জানুয়ারি ঢাকায় ফিরবেন বলে তিনি জানান। শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত ডাভোস ॥ জুরিখ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে এবং ডাভোসে সিলভ্রেটা পার্ক হোটেল লবিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে ব্যাপক প্রস্ততি চলছে। তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসী বাঙালীরা বরফ ঢাকা ডাভোসে পৌঁছতে শুরু করেছেন। ডাভোসের বর্তমান তাপমাত্রা মাইনাস ৭/১৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এরই মধ্যে ডাভোসে অবস্থানরত প্রবাসী বাঙালী কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানানোর প্রস্ততি বিষয়ে পর্যালোচনা বৈঠক করেছেন। সব প্রস্ততি মোটামুটি সম্পূর্ণ। এদিকে ডাভোসের বিভিন্ন রাস্তার পাশের লাইটপোস্ট এবং দেয়ালে শোভা পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাস্যোজ্বল ছবি সংবলিত পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানার। তাতে লেখা রয়েছে, ‘বাংলাদেশের মানুষের অধিকারের প্রতীক শেখ হাসিনা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা-স্বাগতম, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন শুভেচ্ছা-স্বাগতম’ ইত্যাদি।
×