ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়ানডে দিয়ে সিরিজ শুরু সোমবার ভোরে

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬

ওয়ানডে দিয়ে সিরিজ শুরু সোমবার ভোরে

মিথুন আশরাফ ॥ আরমাত্র একদিন বাকি। আজকের দিনটি শেষ হলেই বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড সিরিজের ঘণ্টা বেজে যাবে। সোমবারই শুরু হয়ে যাবে সিরিজ। তবে রবিবার দিনটি শেষ হয়ে গভীর রাত হয়ে ভোর হওয়ার আগেই ৪টায় দুই দলের মধ্যকার প্রথম ওয়ানডে শুরু হয়ে যাবে। যে ওয়ানডে দিয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে, তিন ম্যাচের টি২০ ও দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজও শুরু হবে। ক্রাইস্টচার্চে শুরু হবে সিরিজ। শেষও হবে একই স্থানে। সোমবার ক্রাইস্টচার্চে প্রথম ওয়ানডের পর নেলসনে ২৯ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ও ৩১ ডিসেম্বর তৃতীয় ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে। ওয়ানডে সিরিজ শেষে শুরু হবে তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজ। ৩ জানুয়ারি নেপিয়ারে প্রথম টি২০ এবং ৬ জানুয়ারি ও ৮ জানুয়ারি যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় টি২০ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় টি২০ ম্যাচ দুটি মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে অনুষ্ঠিত হবে। নির্ধারিত ওভারের সিরিজ শেষে শুরু হবে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১২ জানুয়ারি ওয়েলিংটনে প্রথম ও ২০ জানুয়ারি ক্রাইস্টচার্চে দ্বিতীয় টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে খেলতে নামতেই দুই বছর পর বিদেশের মাটিতে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামবে বাংলাদেশ। ২০১৪ সালে সর্বশেষ বিদেশে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে খেলেছে। দুই বছর পর বিদেশের মাটিতে আবার খেলবে। এবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলবে। সেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে আবার ২০১০ সালের পর দ্বিপক্ষীয় সিরিজে খেলেনি বাংলাদেশ। ২০০১ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট (৫টি), ওয়ানডে (৬টি) ও টি২০ (১টি) মিলিয়ে ১২ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। সবকটিতে হারে। বড় ব্যবধানেই হার হয়। তবে এখন বাংলাদেশ আর ২০১০ সালের মতো দল নয়। এখন অনেক শক্তিশালী দল। দেশে যে টানা অর্জন মিলেছে, তা বিদেশের মাটিতেও বয়ে নিতে পারে দল। দেশের মাটিতে এখন দুর্দান্ত দল বাংলাদেশ। যে কোন দলকে হারিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। ২০১৪ সালের নবেম্বর থেকেই জয়ের ধারাবাহিকতা শুরু হয়েছে। ওয়ানডেতে তো একের পর এক জয় মিলেছে। এমনকি সিরিজ জয়ও মিলেছে। জিম্বাবুইয়ে, পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকেও সিরিজে হারিয়ে দিয়েছে। দেশের মাটিতে টানা ছয় সিরিজ জেতার পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ হেরেছে। এমনকি ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে হওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপেও চমক জাগানিয়া পারফরম্যান্স দেখিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছে। দেশের মাটিতে দুর্দান্ত সাফল্য মিললেও বিদেশের মাটিতে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে দুই বছর হয়ে গেল বাংলাদেশকে কোন পরীক্ষার মধ্যে পড়তে হয়নি। এবার সেই পরীক্ষায় পড়তে হচ্ছে। কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যখন দ্বিতীয় টেস্ট জিতল বাংলাদেশ, তখন ইংল্যান্ড অলরাউন্ডার ইয়ান বোথামই যেন বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশকে কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হবে, সেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘সত্যিই দারুণ। বাংলাদেশ দারুণ খেলেছে। তবে আসল লড়াইটা হবে বিদেশের মাটিতে। তাদের দেশের বাইরে গিয়ে ম্যাচ জেতার অভ্যাস গড়তে হবে। এখন তাদের বিদেশের মাটিতে জিতে দেখাতে হবে। এই মুহূর্তে এটাই বাংলাদেশের জন্য অগ্নিপরীক্ষা।’ প্রাপ্তি মিলতেও পারে। গত বছর অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে ওয়ানডে বিশ্বকাপ হয়েছে। বাংলাদেশ দল তাতে ভালও খেলেছে। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের আবহাওয়ার মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। নিউজিল্যান্ডে ঠা-া একটু বেশি। সেই কন্ডিশনও মিলে গেছে। অস্ট্রেলিয়ায় প্রস্তুতি ক্যাম্প করতে গিয়ে বৃষ্টির মধ্যে থাকায় ঠা-া একটু বেশি লেগেছে। যে ঠা-ার সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের আবহাওয়ার মিল পাওয়া যাচ্ছে। বিশ্বকাপের মতো আসরে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ডকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতাই এবার সিরিজে প্রেরণা হয়ে ধরা দিতে পারে। তবে নিউজিল্যান্ডে গিয়ে যে নিউজিল্যান্ড একাদশের বিপক্ষে হেরেছে বাংলাদেশ দল, সেটি শঙ্কাও জাগিয়ে রাখছে। সেই সঙ্গে আছে স্বস্তিও। ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজুর রহমান যে আট মাস পর আবার জাতীয় দলের হয়ে খেলার জন্য প্রস্তুত। মুস্তাফিজ খেলা মানেই হচ্ছে দলের শক্তি অনেক বেড়ে যাওয়া। তবে নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যান-বোলাররাও ভয়ঙ্কর। সেই দিকটি নিয়েই বেশি ভাবনা করতে হচ্ছে। এখন দল যতটা ভাল করতে পারে, সেটিই প্রত্যাশা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে খুব ভাল করলে র‌্যাঙ্কিংয়েও উন্নতির সুযোগ আছে। যদিও সেটি অনেক কঠিন। তবে সিরিজ হারলেও র‌্যাঙ্কিং অবনমনের কোন সুযোগ থাকছে না। বাংলাদেশ এখন র‌্যাঙ্কিংয়ের ৭ নম্বরে আছে। যদি নিউজিল্যান্ড ৩-০ ব্যবধানে জিতে যায়, কিউইদের হবে ১১১ পয়েন্ট। বাংলাদেশের চার পয়েন্ট কমে হবে ৯১। তাতে র?্যাঙ্কিংয়ে অবনমন হবে না। আটে থাকা পাকিস্তানের পয়েন্ট যে ৮৯। যদি নিউজিল্যান্ড ২-১ ব্যবধানে জয়ী হয়, তাদের পয়েন্ট আগেরটাই থাকবে, ১০৯। বাংলাদেশের পয়েন্টও অপরিবর্তিত থাকবে, ৯৫। যদি বাংলাদেশ কিউইদের হোয়াইটওয়াশ করে, নিউজিল্যান্ডের চার পয়েন্ট কমে হবে ১০৫। আর নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ১০০ রেটিং পয়েন্ট পাবে। যদি বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জেতে, নিউজিল্যান্ডের ২ পয়েন্ট কমে হবে ১০৭। বাংলাদেশের হবে ৯৭ পয়েন্ট। দেখা যাক, এখন বাংলাদেশ শুরু হতে যাওয়া সিরিজে কেমন করে।
×