জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ পটুয়াখালীতে আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিএনপি-জামায়াত অপচেষ্টা শুরু করে দিয়েছে। অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য সেখানে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে এ কাজে মাঠে নেমেছে জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী দু-তিনজন সুবিধাভোগী নেতা। স্থানীয় প্রশাসনের শীর্ষপর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তাও এ কাজে সহযোগী হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, অপতৎপরতাকারীদের হাত এতটাই লম্বা, যা প্রেসক্লাবের মতো সাংবাদিকদের স্বার্থরক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানে গিয়েও ঠেকেছে। যেসব সংবাদকর্মী স্বাধীনতাবিরোধীদের এ অপতৎপরতা ফাঁস করে দিচ্ছে, তাদের সদস্যপদ স্থগিত পর্যন্ত করে দেয়া হচ্ছে।
পটুয়াখালী থেকে পাওয়া অভিযোগে জানা গেছে, বর্তমানে মানবতাবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পটুয়াখালীর একাধিক যুদ্ধাপরাধীর বিচার চলছে। সদর উপজেলার ইটবাড়িয়া গ্রামের কয়েক বীরাঙ্গনা এসব মামলার সাক্ষী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। পটুয়াখালীতে বিএনপি-জামায়াতের সক্রিয় সমর্থক হিসেবে পরিচিত দুই সাংবাদিক সম্প্রতি দলের পক্ষ হয়ে ইটবাড়িয়া গ্রামে গিয়ে সাক্ষী বীরাঙ্গনাদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। তারা এক বীরাঙ্গনাকে মানবতাবিরোধী মামলার আসামির পক্ষে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার জন্য মোটা অঙ্কের টাকার প্রলোভন দেখায়। মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন মহল এ ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন করে। থানায় ওই বীরাঙ্গনা জিডি করেন। বিষয়টি আন্তর্জাতিক ক্রাইম ট্রাইব্যুনালেও পৌঁছে। এদিকে, এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে দুই সংবাদকর্মীর পক্ষ হয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েক নেতা মাঠে নামেন। স্থানীয় প্রশাসনের একাংশ এতে তাল মেলায়। অভিযোগ উঠেছে, পটুয়াখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা মোশতাক আহমেদ পিনুর অনুগ্রহভাজন কয়েক সাংবাদিক এখন ভোল পাল্টে বর্তমান আওয়ামী লীগের মেয়র ডাঃ শফিকুল ইসলামের কাঁধে ভর করেছে এবং তারাই ইন্ধন যুগিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের মাঠে নামায়।
বিতর্কিত ওই দুই সাংবাদিকের অনৈতিক কর্মকা-ের বিরুদ্ধে যে ক’জন সংবাদকর্মী প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে, তাদেরও শায়েস্তা করতে আওয়ামী লীগের কয়েক নেতা এবং প্রশাসন এককাট্টা। আর এর প্রথম শিকার হয়েছেন দৈনিক জনকণ্ঠের পটুয়াখালী প্রতিনিধি মোখলেছুর রহমান। আগামী ১৯ ডিসেম্বর পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন। এ নির্বাচনকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে পটুয়াখালীর প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের কয়েক নেতা সাংবাদিকদের মধ্যে ঐক্যের ডাক দিয়ে মাঠে নামে। গত ৪ ডিসেম্বর পটুয়াখালী প্রেসক্লাবে স্থানীয় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে বিতর্কিত দুই সাংবাদিকও উপস্থিত ছিল। স্থানীয় প্রগতিশীল সাংবাদিকদের অনেকেই ওই বৈঠক বর্জন করেন। এ নিয়ে দৈনিক জনকণ্ঠে সংবাদ প্রকাশিত হলে কোপানলে পড়েন জনকণ্ঠ প্রতিনিধি মোখলেছুর রহমান। প্রেসক্লাবের নির্বাচনের যে ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয়েছে তাতে মোখলেছুর রহমানের নাম নেই। প্রেসক্লাব নির্বাচনের নির্বাচনী কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রবিউল ইসলাম। এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক একেএম শামিমুল হক সিদ্দিকী বলেন, ভোটার তালিকা প্রনয়ণ করে সংগঠন। এ বিষয়ে তার কিছু করার নেই।