ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দায়ী সরকারদলীয় গ্রুপিং আর অবৈধ টাকা-পয়সার ভাগবাটোয়ারা

আগ্রাবাদে রক্তপাত সন্ত্রাসের নেপথ্যে আধিপত্যের লড়াই

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৪ নভেম্বর ২০১৬

আগ্রাবাদে রক্তপাত সন্ত্রাসের নেপথ্যে আধিপত্যের লড়াই

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে বাণিজ্যিক এলাকা আগ্রাবাদে সরকারদলীয় নেতাকর্মীর বিভিন্ন গ্রুপিং কোন্দলে যত সংঘাত ও রক্তপাতের ঘটনা ঘটছে তার বেশিরভাগই দরপত্রবাজি, অবৈধ বাজার, ফুটপাথ, মাদক ব্যবসা, টেম্পোস্ট্যান্ড দখলসহ কয়েকটি অবৈধ আর্থিক উৎসের নিয়ন্ত্রণ ও ভাগভাটোয়ারা থেকে হচ্ছে। গত মঙ্গলবারসহ চলতি দশ মাসে এলাকাটিতে এ ধরনের বিভিন্ন ইস্যুতে ছোটবড় অন্তত বিশটির অধিক সংঘর্ষ ও ধাওয়া, পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকার সমর্থিত দুই শীর্ষ নেতার অনুসারীরা বিভিন্ন পক্ষের কাছ থেকে অবৈধ আর্থিক উৎসগুলোর নিয়ন্ত্রণ ও ভাগবাটোয়ারা পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে। এতেও ক্ষান্ত থাকেনি সেসব নেতাকর্মী। এখন অবৈধ আর্থিক সুবিধা আদায়ে প্রতিপক্ষ ছাড়াও বর্তমানে নিজেদের মধ্যেই কোন্দলে লিপ্ত হয়েছে। স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, ১ নবেম্বর আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনিতে ছাত্রলীগের বহিষ্কৃতদের অনুসারীদের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে যে সংঘর্ষ হয়েছে তার নেপথ্যে রয়েছে মাদক, ফুটপাথসহ বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা। গত তিন মাস আগে এসব অবৈধ উৎসের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়ে লিমনের অনুসারীদেরক এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেয় সোহেলের অনুসারীরা। এই ব্যাপারে সোহেলের ঘনিষ্ঠ এক সহযোগী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মাদক, চাঁদাবাজিসহ নানা অবৈধ কর্মকা- আবার চালু করতে লিমনের অনুসারী জাহাঙ্গীর, রনিসহ অন্যরা মিলে কলোনি দখল করতে চাইছিল। কলোনিসহ আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় এখনও দেদার চলছে মাদক বেচাকেনা, ফুটপাথ ও অবৈধ বাজার, ঘর বসিয়ে চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য অবৈধ কর্মকা-। জানতে চাইলে তিনি বলেন, কলোনিতে এখনও মাদক ব্যবসা চলছে তা ঠিক। আগের তুলনায় অনেক কম। আর ফুটপাথ, অবৈধ বাজার এসবের কোনটিতেই আমরা কেউ জড়িত নই। এসব মিথ্যা। এগুলো থেকে পুলিশই চাঁদা তুলছে। সিজিএস কলোনির ঘটনার একদিন আগে হালিশহর ছোটপুল এলাকায় হকারদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য নিয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের তিন অনুসারীর মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ হয়। উভয়পক্ষের সংঘর্ষে এক পথচারীসহ চারজন আহত হন। এই ঘটনায় সড়কের অর্ধশতাধিক দোকান ও ৪/৫ গাড়ি ভাংচুরের পাশাপাশি স্থানীয় একটি গ্যারেজে প্রবেশ করে ১৫/১৬ সিএনজি অটোরিক্সা, একটি প্রাইভেটকার ও একটি নোয়া গাড়ি ভাংচুর করা হয় বলে জানিয়েছেন নজরুল নামে সেখানকার এক অটোচালক। এর আগে গত ১৭ অক্টোবর আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনিতে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুলাল নামে এক যুবককে আটক করেছিল। এগুলোর বাইরেও গত কয়েক মাসে আগ্রাবাদে পিডব্লিউডি, পিডিবিসহ বিভিন্ন দফতরে দরপত্র প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ, আগ্রাবাদ টিএ্যান্ডটি স্কুলের সামনে অবৈধ বাজার, টেম্পোস্ট্যান্ড দখল, বিভিন্ন শিপিং অফিস থেকে জাহাজের ভেন্ডর ওয়ার্ক পারমিট আদায়, ভূমিদস্যুগিরি নিয়ে স্থানীয় বিভিন্ন নেতাকর্মী, সমর্থকের মধ্যে কয়েকবার ধাওয়া,পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এর মধ্যে দরপত্র নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে, আগ্রাবাদে সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দরপত্র কাজ বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রাখছেন দু’জন কাউন্সিলরসহ ক্ষমতাসীন স্থানীয় রাজনৈতিক দলের এক ডজন নেতা। এরা সরকারদলীয়। এর আগে আগ্রাবাদে অবস্থিত বিদ্যুত ভবন ও পিডব্লিউডির দরপত্র কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন সরকারদলীয় এক নেতার অনুসারী যুবলীগ নেতা। এরা সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতার অনুসারী। আরেকজনের কাতারে ছিলেন ইসলামিয়া কলেজের সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতা, কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক এক সভাপতিসহ কয়েক স্থানীয় নেতা। গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর এলাকাটির স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নগর যুবলীগ নেতা ও দুই কাউন্সিলরসহ প্রভাবশালী কয়েক নেতা দরপত্রের নিয়ন্ত্রণ পেতে জোরালোভাবে মাঠে নামেন। ফলে দরপত্র নিয়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে তারা বিভিন্ন সময় সংঘর্ষে জড়িয়ে যায়। এ ব্যাপারে এক কাউন্সিলর বলেন, আমি এ কাজে জড়িত নই। বিদ্যুত ভবনে আমার ঠিকাদারি লাইসেন্স আছে। সে সূত্রে আগে বিভিন্ন কাজ করেছি এখনও করছি। এছাড়া পিডব্লিউডিতে আমার কোন লাইসেন্স নেই। পিসি পোলে আমি যাইও না। তিনি আরেক কাউন্সিলরকে অভিযুক্ত করে বলেন, তিনিই এসব দরপত্র বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ করছেন। তিনি ছাড়াও কমবেশি সবাই এসব কাজে জড়িত। সবাই তো এখান (সরকাীর প্রতিষ্ঠান) থেকে খাচ্ছে। তা আপনারা ভাল জানেন। একই সময় আরেক কাউন্সিলর জানান, পিডব্লিউডি টেন্ডারবাজিতে কারা জড়িত তা সবাই জানে। পোস্টটি হুবহু দেয়া হলো ‘‘ট্রেড লাইসেন্স, চেম্বারের সদস্য কার্ড, ওয়ার্ক অর্ডার, জাহাজের ক্যাপ্টেন কর্তৃক ইস্যুকৃত সার্টিফিকেট- এইগুলো আমার কর্ম ও রোজগারের সনদ। আমি ভূমি দস্যুগিরি, ভর্তি বাণিজ্য ও অবৈধ কাজের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করি এমন প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না। কে কি উপায়ে রোজগার করে তা সকলেই জানে। তবে অনেক হয়েছে চামড়ার দালাল, সুদখোর, এবার তোদের ধোলাই হবে।’
×