ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

৫ উইকেট শিকার, মিরাজসহ অভিষেক সাব্বির ও রাব্বির

অভিষেকেই আলো ছড়ালেন মিরাজ

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ২১ অক্টোবর ২০১৬

অভিষেকেই আলো ছড়ালেন মিরাজ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ইংল্যান্ড সিরিজের আগে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজে কিঞ্চিৎ একটা আশা ছিল জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার, সেটা হয়নি। এমনকি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজেও দলে সুযোগ না পাওয়াতে কিছুটা হতাশই হয়েছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। তাই কিছুটা আফসোসের সঙ্গেই একান্ত আলোচনায় মিরাজ বলেছিলেন, ‘আমি আশা ছাড়ছি না, এখন হয়নি পরে অবশ্যই জাতীয় দলে সুযোগ পাব। সামনে বিপিএল আছে, আশা করছি ওখানে ভাল করতে পারলেই সুযোগ হবে।’ তবে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেই সুযোগটা পেয়ে গেছেন খুলনার এ ১৮ বছর বয়সী অলরাউন্ডার। ওয়ানডে কিংবা টি২০ নয়, মর্যাদার টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হলো তার বৃহস্পতিবার সাগরিকার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুরু হওয়া বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড প্রথম টেস্টে। আর শুরু থেকেই তাকে বল হাতে দিলেন অধিনায়ক মুশফিক। দারুণ সাফল্য পেলেন ডানহাতি অফস্পিনার। প্রথমদিনেই তুলে নিয়েছেন ৫ উইকেট। একইদিনে অভিষেক হয়েছে আরও দু’জনের। পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বি এবং দীর্ঘদিন ধরে ওয়ানডে ও টি২০ খেলা অলরাউন্ডার সাব্বির রহমান রুম্মান পরেছেন টেস্ট ক্যাপ। অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনাল খেলার গৌরব এনে দিয়েছিলেন মিরাজ। ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখানোর কারণে ‘ছোট সাকিব’ নামটা উচ্চারিত হচ্ছিল। অনেকে বলছিলেন ওয়ানডের বিশ্বসেরা এবং টেস্ট ও টি২০ ক্রিকেটে বিশ্বের দুই নম্বর অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের মতো আরেকজনকে পাওয়া গেছে। অচিরেই মিরাজকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেখা যাবে এমনটা বোঝাই যাচ্ছিল ঘরোয়া ক্রিকেটেও তার দারুণ নৈপুণ্যের কারণে। কিন্তু আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টানা দুটি তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ডাকাই হয়নি ১৮ বছর বয়সী এ ক্রিকেটারকে। এ কারণেই কিছুটা আশাহত হয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের শিঁকে ছিঁড়ল দুই টেস্টের সিরিজেই। এক সময় বাংলাদেশ দল স্পিন বোলিংয়ে বিশ্বে অন্যতম ভীতিকর দল হলেও যেন ক্রমেই স্পিনার সঙ্কটে পড়ে গিয়েছিল। ১৪ মাস বিরতি দিয়ে এবার টেস্ট খেলতে নামার আগে এছাড়াও নানাবিধ সমস্যায় পড়েছিল বাংলাদেশ। কারণ টেস্ট ক্রিকেটে বোলিং করার মতো দারুণ মানের পেসারেরও ঘাটতি। সবমিলিয়ে এবার চট্টগ্রামে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজের প্রথম টেস্টে চার নতুন মুখ নুরুল হাসান সোহান, সাব্বির, মিরাজ ও রাব্বিকে ১৪ জনের ঘোষিত দলে রাখা হয়। দল ঘোষণার পরই নিশ্চিত ছিল যে অন্তত দুই ক্রিকেটারের অভিষেক হতে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান সোহান ছাড়া বাকি তিনজনই টেস্ট ক্যাপ পেয়েছেন। ২০০৮ সালে সর্বশেষ এক টেস্টে তিন ক্রিকেটারকে অভিষেক করিয়েছিল বাংলাদেশ দল। সেবার নিউজিল্যান্ড সফরে জানুয়ারির শুরুতে ডানেডিন টেস্টে অভিষেক হয়েছিল তামিম ইকবাল, জুনায়েদ সিদ্দিকী ও সাজেদুল ইসলামের। তবে ঘরের মাটিতে (২০০০ সালে অভিষেক টেস্ট ব্যতীত) এই প্রথম কোন টেস্টে একইসঙ্গে তিন ক্রিকেটারের অভিষেক ঘটাল বাংলাদেশ। দেশের টেস্ট ইতিহাসে রাব্বি ৭৯তম, মিরাজ ৮০তম এবং সাব্বির ৮১তম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট খেলার গৌরব অর্জন করেছেন। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথমদিনেই মাঠে নেমেছেন তিনজন। সাব্বির ও মিরাজ অলরাউন্ডার হিসেবে এবং রাব্বি অন্যতম পেসার হিসেবে বোলিং করার সুযোগ পেয়েছেন টস জিতে ইংল্যান্ড আগে ব্যাটিংয়ে নামার কারণে। তবে এর মধ্যে উজ্জ্বলতম ছিলেন ডানহাতি অফস্পিনার মিরাজ। তাকে টেস্ট ক্যাপ পরিয়ে দিয়েছেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম নিজেই। আবার বোলিংয়ে তরুণ এ স্পিনারের ওপরই আস্থা রাখলেন অধিনায়ক, বল হাতে দিলেন ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই। প্রথম থেকেই বলে দারুণ টার্ন আদায় করে নিচ্ছিলেন তিনি। ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক ওভারে মাত্র ২ রান দিয়েছেন। ক্রমেই দারুণ লাইনে বল ফেলে এ্যালিস্টার কুক ও ডাকেটকে কোণঠাসা করে রেখেছিলেন। অষ্টম ওভারে প্রথম মেডেনটা আদায় করলেন (ব্যক্তিগত চতুর্থ)। বাংলাদেশের প্রথম সাফল্যটাও আসলো মিরাজ আঘাত হানায়। ইনিংসের দশম ওভারের পঞ্চম বলে ইংল্যান্ডের পক্ষে অভিষেক হওয়া বেন ডাকেটকে দারুণ টার্নে পরাভূত করে সরাসরি বোল্ড করে সাজঘরে ফেরালেন, ওভারটিতে মেডেনসহ উইকেট শিকার করলেন তিনি। তখন দুর্ধর্ষ হয়ে উঠেছেন মিরাজ। নিজের পরের ওভারেই আবার আঘাত হেনে গ্যারি ব্যালান্সকে এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে ফেলে ইংল্যান্ড শিবিরে কাঁপন ধরিয়ে দিলেন। দলীয় ২১ রাানেই ৩ উইকেট হারিয়ে চরম বিপদে তখন ইংল্যান্ড। পরের সাফল্যটা পেতে কিছু বিলম্ব হয়েছে। টানা ১০ ওভার বল করে প্রথম স্পেল শেষ করেন মিরাজ ২ মেডেনসহ মাত্র ১৩ রানে ২ উইকেট নিয়ে। বল হাতে আবার ইনিংসের ৩০তম ওভারে ফিরেই আঘাত হানেন। এবার ইংল্যান্ডকে ভাল একটি অবস্থানের দিকে নিতে থাকা জো রুটকে তুলে নিলেন। ৪৯ বলে ৫ চারে ৪০ রান করে ইংল্যান্ডের এ মিডলঅর্ডার ব্যাটিং স্তম্ভ ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিলেন। তাকে সিøপে দাঁড়ানো সাব্বিরের ক্যাচে পরিণত করেন মিরাজ। এরপর ৬৮ রান করা মঈন আলীকে মুশফিকের ক্যাচে পরিণত করে ভেঙ্গেছেন ৮৮ রানের পঞ্চম উইকেট জুটি এবং ৫২ রান করা জনি বেয়ারস্টোকে বোল্ড করে ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচেই ৫ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েন মিরাজ। অভিষেক টেস্টে ৫ উইকেট শিকারের ঘটনা টেস্ট ইতিহাসে এ নিয়ে ১৫৫টি। তবে ২০ বছরের নিচে কোন স্পিনারের অভিষেক টেস্টে ৫ উইকেট নেয়ার ক্ষেত্রে দুই নম্বরে অবস্থান মিরাজের। মাত্র ১৮ বছর ২৩৫ দিন বয়সে পাকিস্তানী অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১৯৯৮ সালের অক্টোবরে করাচী টেস্টে অভিষেক হওয়ার দিনে নিয়েছিলেন ৫২ রানে ৫ উইকেট। ১৮ বছর ৩৬১ দিন বয়সে সেটা করলেন মিরাজ। আর বাংলাদেশের পক্ষে অভিষেকে ৫ উইকেট নেয়ার ঘটনা টেস্টে এটি সপ্তম। এর আগে সোহাগ গাজী (৬/৭৪, প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ২০১২), মঞ্জুরুল ইসলাম (৬/৮১; প্রতিপক্ষ জিম্বাবুইয়ে, ২০০১), ইলিয়াস সানি (৬/৯৪; প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ২০১১), নাইমুর রহমান (৬/১৩২; প্রতিপক্ষ ভারত, ২০০০), মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (৫/৫১; প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ২০০৯) ও তাইজুল ইসলাম (৫/১৩৫; প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ২০১৪) এ কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। প্রথমদিনে ইংল্যান্ড ৭ উইকেটে ২৫৮ রানে শেষ করেছে। খুলনার ক্রিকেটার মিরাজ নিয়েছেন ৫ উইকেট (৩৩-৬-৬৪-৫)! আজ দ্বিতীয়দিনে ছাড়িয়ে যেতে পারেন অনেক অভিষিক্ত সেরা পারফর্মারকেই। কারণ এখনও ৩ উইকেট আছে ইংলিশদের। অপর দুই অভিষিক্ত সাব্বির ৩ ওভারে ১১ রান এবং রাব্বি ৮ ওভারে ৪১ রান দিয়ে উইকেটশূন্যই থেকেছেন।
×