ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

জোসেলু জাদুতে মুগ্ধ ফুটবল দুনিয়া

স্পোর্টস রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:২০, ৯ মে ২০২৪

জোসেলু জাদুতে মুগ্ধ ফুটবল দুনিয়া

রিয়াল মাদ্রিদের জয়ের নায়ক জোসেলুর উল্লাস

আচমকাই আড়াল থেকে নায়ক বনে গেছেন জোসেলু। ৩৪ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকারের শেষ মুহূর্তে জোড়া গোলে ভর করে আরেকবার হারতে হারতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে পৌঁছে গেছে রিয়াল মাদ্রিদ। যে কারণে জার্মানিতে জন্ম নেয়া স্প্যানিশ তারকাকে নিয়ে হৈচৈ গোটা ফুটবল দুনিয়ায়। ২০২৩ সালে এস্পানিওল থেকে ধারে খেলতে আসা জোসেলু রিয়ালের সেরা একাদশে সুযোগ পান না বললেই চলে। বায়ার্নের বিরুদ্ধেও শেষ দিকে বদলি হিসেবে নেমে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। ম্যাচ শেষে জোসেলু অকপটে বলেছেন, সবচেয়ে সুন্দর স্বপ্নও এতটা আনন্দদায়ক ছিল না। এক মৌসুমের জন্য ধারে ১২ বছর পর রিয়াল মাদ্রিদে খেলতে আসা জোসেলু এখন রিয়ালের নয়নের মণি। এমন সাফল্যের পরও অবশ্য বিনয়ী তিনি। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে নানা বাঁক পেরিয়ে রিয়ালে ফিরে আসা ফুটবলার আরও একবার তুলে ধরেন ক্লাবটির অদম্য মানসিকতা। জোসেলু বলেন, নায়ক বা এরকম কিছু বুঝি না। তবে আমি খুব খুশি। আমাকে দেখে ধারণা করে নিতে পারেন। অবিশ্বাস্য ছিল এটি, অসাধারণ কিছু। এই দল কখনোই হাল ছাড়ে না। শেষ পর্যন্ত লড়াই করাটা দলের রক্তেই আছে। আমরা সেটাই আরেকবার করেছি। যুব দলের ধাপ পেরিয়ে ২০১১ সালে রিয়ালের মূল দলের জার্সিতে অভিষেক হয়েছিল জোসেলুর। বদলি নেমে গোলও পেয়েছিলেন। কিন্তু ওই এক ম্যাচেই থমকে যায় রিয়ালে তার প্রথম অধ্যায়। কারণ তারকায় ঠাসা দলটিতে সেসময় ছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো, করিম বেঞ্জামা ও গঞ্জালো হিগুয়াইনের মতো ফরোয়ার্ডরা। এরপর অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে চলতি মৌসুমে এস্পানিওল থেকে ধারে ফের রিয়ালে ফেরেন জোসেলু। নিয়মিত মাঠে নামার সুযোগ না মিললেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন তিনি।

তবে বায়ার্নের বিরুদ্ধে চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্সে আগের সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছেন জোসেলু। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, এ ধরনের পারফরম্যান্সের স্বপ্ন সবাই দেখে। কিন্তু যা হলো, আমার সুন্দরতম স্বপ্নেও কখনো এটা ভাবতে পারিনি। জোসেলু জোড়া গোল করলেও পুরো ম্যাচে চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেন ব্রাজিলিয়ান তারকা ভিনিসিয়াস জুনিয়র। যে কারণে ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। ম্যাচ শেষে ভিনিও বলেছেন, রিয়াল কখনো হাল ছেড়ে দেই না। ভিনি বলেন, যখন ঘরের মাঠে খেলি, তখন মনে হয় আমরা যে কোনো কিছু করতে পারি। পুরোটাই দলের ঐক্যের কারণে হয়েছে। এটাই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। সবাই যে ত্যাগ স্বীকার করেছে তা অসাধারণ। আমাকে যদি রক্ষণে নামতে হয়, বেলিংহাম বা রডরিগোর মতো কোনো অভিযোগ ছাড়াই এটা করব। এই স্টেডিয়ামে (সান্টিয়াগো বার্নাব্যু) এতবার খেলতে পেরে, এমন রাতের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পেরে আরও একবার এমন কিছু করতে পেরে আমি গর্বিত। এটাই রিয়াল মাদ্রিদ; আমরা কখনোই হাল ছাড়ি না।
অন্যদিকে জেতার পথে থাকা বায়ার্ন মিউনিখের এমন হারের জন্য তাদের গোলরক্ষক ও অধিনায়ক ম্যানুয়েল নিউয়ের ভুল শীর্ষে থাকবে। ভিনিসিয়াসের শট তার হাত থেকে ফসকে যাওয়ার সুযোগেই ৮৮ মিনিটে জোসেলু গোল করে রিয়ালকে সমতায় ফেরান। কার্যত তখনই ফাইনালের আশা শেষ হয়ে যায় বায়ার্নের। যে কারণে ম্যাচ শেষে নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন ৩৮ বছর বয়সী নিউয়ের। তিনি বলেন, এটা সত্যিই আমার জন্য তিক্ত অভিজ্ঞতা। আমি মনে করেছিলাম বলটি ভিন্নভাবে আমার বুকের কাছে এসে পড়বে। যে কারণে আমি কিছুটা উঁচুতে উঠে বলটি ধরতে গিয়েছিলাম। কিন্তু বলের গতি ভিন্ন হওয়াতে আমার হাত থেকে ফসকে যায়। সেই সুযোগে জোসেলু যে শটটি নিয়েছে তা ধরা আমার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছিল।

একজন গোলরক্ষকের জন্য পুরো ম্যাচে দলকে রক্ষা করে শেষ মুহূর্তে এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়ে তা বলে বোঝানো মোটেই সহজ নয়। যাই হোক না কেন গোলটি আমার ভুলে হয়েছে। বায়ার্ন কোচ টমাস টাচেলও বলেছেন অধিনায়কের এ ভুল তার চরিত্রের সঙ্গে যায় না। তিনি বলেন, নিউয়ের দুর্দান্ত খেলেছে। কিন্তু যে ভুল সে করেছে তা ১০০ বছরেও তার পক্ষে আবারও করা সম্ভব না। এটা সত্যিই হতাশার। আমরা সবাই তাকে চিনি। তার মতো গোলরক্ষকের এ ধরনের ভুল করার কথা না। বায়ার্ন কোচ অফসাইডে তাদের একটি গোল বাতিল হওয়ার জন্যও রেফারির কড়া সমালোচনা করেছেন। যোগ করা সময়ের ১২ মিনিটে জসুয়া কিমিচের লম্বা পাসে টমাস মুলারের হেডে ডিফেন্ডার মাথিস ডি লিট বল জালে জড়িয়েছিলেন। কিন্তু গোলের আগে লাইন্সম্যান অফসাইডের পতাকা উঠালে রিয়ালের খেলোয়াড়রা থেমে যান।

এ সিদ্ধান্তের পর টাচেল সাইডলাইনে দৌড়ে গিয়ে চতুর্থ অফিসিয়ালের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। ম্যাচ শেষে এ নিয়ে বায়ার্ন কোচ বলেন, অ্যাকশনটি শেষ হওয়া পর্যন্ত আমাদের পজিশনগুলো দেখতে হবে। এটাই নিয়ম। বিশেষ করে এ ধরনের বড় ম্যাচে একটি ভুল সিদ্ধান্ত অনেক বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। তা ছাড়া বড় ম্যাচে এ ধরনের সুযোগ খুব কম আসে। প্রথম ভুলটি করেছে লাইন্সম্যান। দ্বিতীয়টি এসেছে রেফারির কাছ থেকে। সিদ্ধান্তটি আমার কাছে বিশ^াঘাতকতার মতো মনে হয়েছে।

×