ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

মোঃ ফজলুল হক মাস্টার

অভিমত ॥ জঙ্গীবাদ ও সরকারের কাছে প্রত্যাশা

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ২৬ জুন ২০১৬

অভিমত ॥ জঙ্গীবাদ ও সরকারের কাছে প্রত্যাশা

অসহনীয় মৃত্যু আর লাশের পর লাশের মধ্য দিয়ে ইউপি নির্বাচন শেষ হয়ে গেল। ক্ষমতাপ্রাপ্তির তীব্র মোহে এসব হত্যাকা- সংগঠিত হয়েছে এতে যেমন কারোর দ্বিমত নেই, তেমনি দ্বিমত নেই এই বিষয়েও যে, রাজনৈতিক দলগুলোতে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব চরমে। এতে করে তৃণমূলে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি তো হয়ইনি বরং রেষারেষি আর ঝগড়া এখন শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়েছে। জঙ্গীদের গোপনে প্রকাশ্যে হত্যার কারণে মানুষ আতঙ্কিত। চট্টগ্রামের পুলিশ সুপারের স্ত্রী মাহমুদা খানমের হত্যার বিষয়টিতে কি প্রকাশ পায় না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকদের সঙ্গে উগ্রবাদীদের চ্যালেঞ্জ? এবং তা সরকারের বিরুদ্ধেই একরকম চ্যালেঞ্জ। জঙ্গীবাদ, উগ্রতাবাদ যারা সৃষ্টি করেছে তাদের পর্যবেক্ষণমূলক চোখে রাখতে না পারলে জঙ্গীবাদ দমনের মিশন কখনোই সফল হবে না। জিয়াউর রহমানকে যারা খলিফাতুল্য বলে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বিচরণ করার সুযোগ করে দিয়েছিল তারাই উগ্রবাদের বিষবৃক্ষ রোপণ করেছে। যার অস্তিত্ব সকলের জানার মধ্য দিয়ে আজ অকল্পনীয় গভীরে প্রোথিত হয়ে গেছে। যারা রাষ্ট্রকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বানাতে চায় তাদের সংখ্যাকে আমরা যতই নগণ্য মনে করি না কেন, তারা কিন্তু প্রকাশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, পুরোহিত, পাদ্রি আর মুক্তমনা লেখকদের হত্যা করতে সক্ষম হচ্ছে। আমরা হা করে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া প্রবলভাবে তো দূরের কথা ন্যূনতম প্রতিরোধও গড়ে তুলতে পারছি না। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গুপ্তহত্যাকারীরা পার পাবে না। আমরা অনুরূপ বক্তব্যে খুশি কিন্তু নিহতের স্বজনদের আহাজারি এতে কি থামছে? পিতৃহত্যার আহাজারিতে প্রধানমন্ত্রী কতটা বেদনার্ত সেটা তার চেয়ে বেশি আঁচ করার শক্তি তো কারোর নেই। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর আবার একই সুরে কথা হচ্ছে। মানুুষ যদি জীবনের ভয়ে ভীত হয়ে যায় তার দ্বারা ভাল চিন্তা সম্ভব হয় না। বেঁচে থাকার আকুতি থেকে মানুষ ভাল স্বপ্ন আঁকে। এই যে মৃত্যুর হিড়িক উঠেছে। এই যে হত্যার চল শুরু হয়েছে তাতে করে ঘুমের মাঝেও মানুষ মৃত্যু ভয়ে তাড়িত হচ্ছে। উগ্রবাদীরা হত্যা করে চলেছে। মুক্তমনের লেখকরা দুশ্চিন্তায়। এছাড়া সমাজে নন্দিত মানুষ যারা সাদামাটা জীবনযাপন করে কিলিং মিশনের টার্গেটিং ব্যক্তি তারা। আমরা স্পষ্টত দেখছি দেশ অগ্রগামী। আমরা অগ্রসরমান জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছি। যারা হত্যার সেøাগান নিয়ে চলছে তারা কি রাষ্ট্র দখল করতে পারবে? আসলে তারা ফরমায়েসি পেশাদার সন্ত্রাসী। বিশ্ব মুরব্বিদের হাতিয়ার তারা। উন্নত প্রযুক্তিই হোক আর অত্যাধুনিক অস্ত্র বলুন এসব তারা কোথা থেকে পাচ্ছে? যেভাবে জবাই করে হত্যা করা হচ্ছে তাতে তো এটা কল্লা কাটার যুগ হওয়ার পথে। একদিকে খুন অন্যদিকে ব্যাংক লুট দুটোই কল্যাণময় রাষ্ট্রের জন্য অভিশাপ বটে। আর এটাও তো সত্য ব্যাংক রয়েছে উগ্রবাদীদের নিয়ন্ত্রণে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও রয়েছে উগ্রবাদীদের নিয়ন্ত্রণে। উগ্রবাদীরা গণতন্ত্রের চিরশত্রু। এই সাদাসিধে হিসাবটাও আমরা মাথায় রেখে কথা বলি না। রাষ্ট্র গরিব অনাথ সন্তানদের খোঁজ রাখে না বলেই হেফাজতিরা উল্লেখযোগ্য অনাথদের ঢাকায় আন্দোলনের নাম করে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিল। নামে-বেনামে এনজিও গড়ে তুলে অর্থবিত্তের পাহাড় গড়ে তুলেছে উগ্রবাদীরা। জামায়াত নেতা, যুদ্ধাপরাধের দায়ে যার মৃত্যুদ- কার্যকর হয়েছে সেই আলী আহসান মুজাহিদ সমাজকল্যাণমন্ত্রী থাকার সময় এর বীজ রোপণ করে গেছে। মতিউর রহমান নিজামী শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে শিল্পের ক্ষেত্রে একটা শক্ত ভিত তৈরি করে গেছে। তার নিয়ন্ত্রিত জেটিতে ট্রাক অস্ত্র খালাসের তথ্যটি পর্যালোচনা করলে অনায়াসেই মাথায় ঢুকে যাবে রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা ধ্বংসের পথে তাদের পদক্ষেপ কতটা নগ্ন। তাছাড়া রাষ্ট্রের আইন উপেক্ষা করে সশস্ত্র ক্যাডার সৃষ্টির বিষয়টিও সামনে রাখা জরুরী। আমরা ইতিহাস বিকৃত করার অপপ্রয়াসের উপর গুরুত্ব যতটা দেই ততটা গভীরে ঢুকি না যে তারা কীভাবে মিথ্যাটা প্রচার করে একটা অন্ধ সমর্থক গোষ্ঠী তৈরি করে ফেলেছে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেও জামায়াত জোট শাসনামলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠন দাঁড় করাতে প্রকাশ্যে চেষ্টা করেছে। ওরা যেমন রাষ্ট্র দখল করতে মরিয়া তেমনি জয় বাংলা সেøাগানেরও ধারক-বাহক হতে চেয়েছিল। রাজাকার, আলবদর গঠন করে জামায়াত গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে পাকিদের হাতে তুলে দিয়েছে। আর এখন বলতে চাইছে শান্তি কমিটির লোকেরাই মুক্তিযোদ্ধা। এভাবে জামায়াত মিথ্যার ওপর ভর দিয়ে চলে। তাদের জন্মলগ্নের ইতিহাস কালো ইতিহাস। জঙ্গী ধরা হলে তাদের পরিচয় মিলে তাঁরা অতীতে জামায়াত-শিবিরের সমর্থক বা কর্মী। ব্যাংক ডাকাতি হলে তাঁদের পরিচয় মিলে তারা শিবির করত বা করছে। তাহলে জঙ্গীর রূপ কি? জঙ্গী কারা-এটা নতুন চেনানোর দরকার পড়ে না। জামায়াত-শিবির প্রকাশ্যে সেøাগান ধরে ‘খুনের দরিয়ায় দেখি নাইকো ভয়, সংগ্রাম এনে দেবে জয়’। খুনীদের স্বরূপ উন্মোচন এবং কঠিনভাবে দমন দুটোই জরুরী। জামায়াত খুন করার জন্য সেøাগান ধরে কিন্তু খুন প্রতিরোধে আমাদের সেøাগান কই? আমরা যদি গণতন্ত্রের বিকাশের কথা চিন্তা করি তবে গণতন্ত্রবিরোধীদের চিহ্নিত করে চলতে হবে। গণতন্ত্রকে উপেক্ষা করলে সুশাসন আদৌ সম্ভব নয়। যেহেতু আমরা মনে করি আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র চর্চায় অন্যদের চেয়ে একটু এগিয়ে তাই সেখানেই আমাদের প্রত্যাশা বেশি। লেখক : শিক্ষাবিদ
×