ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়েলসের পেছনে শেষ ষোলোতে ইংল্যান্ডও

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ২২ জুন ২০১৬

ওয়েলসের পেছনে শেষ ষোলোতে ইংল্যান্ডও

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ তর্জন-গর্জন ইংলিশদের সবসময়ই একটু বেশি। কিন্তু কাজের বেলায় সেটা খুঁজে পাওয়া যায় না। চলমান ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপে পর্বেও দেখা মিলেছে একই চিত্র। ‘বি’ গ্রুপে তারা অপরাজিত থাকলেও জয় পেয়েছে মাত্র এক ম্যাচে। ড্র করেছে বাকি দুই ম্যাচ। যে কারণে ওয়েলসের পেছনে থেকে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে প্রি কোয়ার্টার ফাইনাল অর্থাৎ শেষ ষোলোর টিকেট পেয়েছে ইংল্যান্ড। সোমবার রাতে সেøাভাকিয়ার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে ইংল্যান্ড। আরেক ম্যাচে ৫৮ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে রাশিয়াকে ৩-০ গোলে হারায় ওয়েলস। ফলে দুই জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেরা ষোলোতে পৌঁছেছে গ্যারেথ বেলের দল। আর ২০১৮ বিশ্বকাপের স্বাগতিক রাশিয়ার বিদায় নিশ্চিত হয়েছে গ্রুপ পর্বেই। তবে প্রথমবারের মতো ইউরো যজ্ঞে খেলতে এসেই চমক দেখিয়ে চলেছে সেøাভাকিয়া। সেরা তৃতীয় দলের একটি হয়ে নকআউট পর্বে খেলার দ্বোরগোরা আছে দলটি। সেøাভাকদের বিপক্ষে বেশ কয়েকজন শীর্ষসারির ফুটবলারদের বিশ্রাম দেন ইংলিশ কোচ রয় হডসন। যার মাশুলও দিতে হয়েছে ফুটবলের জনকদের ড্র করে। প্রথম দুই ম্যাচে চার পয়েন্ট পাওয়া ইংল্যান্ড অধিনায়ক ওয়েন রুনিসহ নিয়মিত একাদশের ছয়জনকে ছাড়াই খেলতে নামে। তারপরও বেশ কয়েকটি সুযোগ আসে হডসনের শিষ্যদের। কিন্তু সেগুলো তারা কাজে লাগাতে পারেনি। ম্যাচে একতরফা খেলা ইংল্যান্ড শুরু থেকেই আক্রমণের পসরা সাজায়। পঞ্চম মিনিটে ডিফেন্ডার নাথানিয়েল ক্লাইনের ক্রসে ডি বক্সের মধ্যে ঠিকমতো শট নিতে ব্যর্থ হন জিমি ভার্ডি। ১৭ মিনিটে গোল করার মতো অবস্থায় বল পেয়েও গোলরক্ষক বরাবর শট মেরে সুযোগ নষ্ট করেন ইপিএলের সবশেষ আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা ভার্ডি। বিরতির পর ৫৩ মিনিটে নিজেদের ভুলে গোল খেতে বসেছিল ইংল্যান্ড। ডিফেন্ডার ক্রিস স্মলিং প্রতিপক্ষের কর্নার বুক দিয়ে নামালেও বিপদমুক্ত করতে ব্যর্থ হন। ফলে সেøাভাকিয়ার মিডফিল্ডার রবার্ট ম্যাক গোল মুখে পেয়ে যান বল। কিন্তু সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। পরের মিনিটেই পাল্টা আক্রমণে ক্লাইনের নেয়া শট রুখে সেøাভাকিয়ার গোলরক্ষক। গোল না পাওয়ায় একই সময়ে শুরু হওয়া গ্রুপের অন্য ম্যাচও মাথায় রাখতে হচ্ছিল কোচ হডসনকে। টুলুজে সে সময়ে রাশিয়ার বিপক্ষে জয়ের পথে ছিল ওয়েলস। বেলরা জিতলে গ্রুপ সেরা হতে ইংল্যান্ডের জয়ের বিকল্প ছিল না। এ কারণে ৫৬ মিনিটে জ্যাক উইলশেয়ারের জায়গায় আক্রমণের সেরা অস্ত্র রুনিকে মাঠে নামান ইংল্যান্ড কোচ। হেরে গেলে ইংল্যান্ডের জন্য পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারত। কিন্তু সেই অঘটন আর ঘটেনি। কিন্তু অধিনায়ক রুনিকে পেয়েও গোলের দেখা পায়নি ইংল্যান্ড। ম্যাচ শেষে ইংল্যান্ড কোচ রয় হডসন হতাশা ব্যক্ত করেন। অন্য ম্যাচে রাশিয়াকে বিদায় করে দারুণ জয় পেয়েছে ওয়েলস। এই ম্যাচেও আলো ছড়ান দলটির সেরা তারকা ও অধিনায়ক গ্যারেথ বেল। রিয়াল মাদ্রিদ তারকা জাতীয় দলের হয়ে ইতিহাস গড়েছেন মাত্র এক বছরেই। ওয়েলসকে প্রথমবারের মতো ইউরোতে নিয়ে যাওয়া, প্রথম দুই ম্যাচেই গোলের পর তৃতীয় ম্যাচেও গোল করে লিখেছেন আরেকটি ইতিহাস। ওয়েলসের ইতিহাসে কোন বড় টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি গোল এখন বেলের দখলে। মাত্র তিন ম্যাচ খেলেই এই রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া ফুটবলার। সেøাভাকিয়া ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচেই ফ্রিকিক থেকে গোল পেয়েছিলেন। পরশু রাতে এ্যারন রামসের পাস থেকে গোল করেছেন সরাসরি। ইউরোতে তিন গোল নিয়ে বেলই এখন সর্বোচ্চ গোলদাতা। ১৯৫৮ সালে সর্বশেষ বিশ্বকাপ ফুটবল খেলেছিল ওয়েলস। ওটাই তাদের সর্বশেষ কোন বড় আসরে খেলা। ওই আসরে দুই গোল করেছিলেন ইভর আলচার্চ। তিন গোল করে বেল এবার তাকে ছাপিয়ে গেছেন। ভেঙ্গে দিয়েছেন ৫৮ বছর ধরে অটুট থাকা ওয়েলসের এই রেকর্ড। ইয়ান রাশ, রায়ান গিগসরা যেটা করতে পারেননি, বেল সেটিই করে দেখালেন। ইউরোতে গ্রুপ পর্বের সব ম্যাচেই গোল করার কীর্তি আগে ছিল মাত্র চারজনের। ১৯৮৪ সালে প্রথম তিন ম্যাচেই গোল পেয়েছিলেন ফরাসী কিংবদন্তি মিশেল প্লাতিনি। ১৯৯৬ সালে সেই কীর্তি করে দেখান বুলগেরিয়ার রিস্টো স্টইচকভ ও ইংল্যান্ডের এ্যালান শিয়ারার। ২০০০ সালে তখনকার যুগসøাভিয়ার হয়ে প্রথম তিন ম্যাচে গোল পেয়েছিলেন সাভো মিলোসেভিচ। এবার গৌরবের এই তালিকায় যোগ হলো বেলের নাম। গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয়ার পর হতাশ রাশিয়ার কোচ লিওনিড সøাটস্কি বলেন, এটাই আমাদের দেশের সেরা দল। দেশের সেরা ২৩ ফুটবলারকে নিয়েই তো খেলতে এসেছিলাম ইউরো এরপরও যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে বুঝতে হবে রাশিয়ান ফুটবল ঠিক পথে চলছে না।
×