ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

‘ভারতকে হারাতে পারলে আমাদের মজাটা বেশি হয়’

প্রকাশিত: ০৭:০১, ১৮ জুন ২০১৬

‘ভারতকে হারাতে পারলে আমাদের মজাটা  বেশি হয়’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা ওপেনার বিবেচনা করতে বসলে তামিম ইকবালকে অবশ্যই এগিয়ে রাখতে হবে। ড্যাশিং ওপেনার। তিন ফরমেটেই এখন সর্বোচ্চ রান। টেস্টে ৩১১৮, ওয়ানডেতে ৪৭১৩ ও টি২০তে ১১৫৪ রান। ২০০৭ সাল থেকেই টানা খেলে চলেছেন। আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতেই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ১০ বছর পূরণ হবে। চলমান ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগেও তার ব্যাটে ঝলক মিলছেই। তামিম ইকবাল সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফাইড পেজে সরাসরি আড্ডা দিয়েছেন সমর্থকদের সঙ্গে। সেখানে ভক্তদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন, আলোচনা করেছেন। শুরুতেই ঢাকা লীগে আবাহনীকে যেন চ্যাম্পিয়ন করাতে পারেন, সেই দোয়া করার জন্য বলেন। তামিমের প্রশ্নোত্তরের চুম্বক অংশ সাক্ষাতকার আকারে তুলে ধরা হলো। -আপনার ক্রিকেট জীবনের সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত কোনটি? তামিম ইকবাল ॥ ক্রিকেটে আমি অনেক কিছুই দেখেছি। ভাল-খারাপ সব। কিন্তু আমি যখন প্রথম জাতীয় দলে সুযোগ পেলাম, সেটাই ছিল আমার ক্রিকেট জীবনের সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত। -আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আপনার প্রিয় প্রতিপক্ষ কে? তামিম ইকবাল ॥ দেখুন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সব দলেরই কিছু না কিছু গুরুত্ব থাকে। তবে আমরা সবাই ভারতের বিপক্ষে খেলতে অনেক পছন্দ করি। আলাদাভাবে একটা চ্যালেঞ্জ থাকে। ওদের হারাতে পারলে আমাদেরও মজাটা কেন জানি বেশি হয়। আমি নিশ্চিত আপনাদেরও এটা হয়। তো উত্তরে আমি ভারতের কথায় বলব। তাই বলে এমন নয় যে, ভারতের সাথেই শুধু খেলব। সব প্রতিপক্ষকেই আমরা সমান গুরুত্ব দেই। -খেয়াল করলে দেখা যায়, সেঞ্চুরি কিংবা হাফসেঞ্চুরি করলে আপনার উদযাপনে কিছু না কিছু ইঙ্গিত থাকেই। এটা কি আগে থেকেই পরিকল্পিত? তামিম ইকবাল ॥ না, একেবারেই না। আমি কখনই পরিকল্পনা করে সেলিব্রেট করি না। আমি যদি জানতাম আমি সেঞ্চুরি করব তাহলে তো প্রতিদিনই এমন কিছু হতো (হাসি)। নতুন নতুন সেলিব্রেশনের আইডিয়া ভেবে বসে থাকতাম। সত্যি কথা বলতে, আমার মন থেকে ওই মুহূর্তে যা আসে, সেটা নিয়েই সেলিব্রেট করি। -লর্ডসে সেঞ্চুরি করার পর আপনার অনুভূতিটা... তামিম ইকবাল ॥ এটা একেবারেই অন্যরকম কিছু ছিল। আপনারা জানেন আমার আব্বার কতোটা কাছের ছিলাম। তিনি ক্রিকেট নিয়ে অনেক পড়াশোনা করতেন। তার কাছ থেকেই আমি প্রথম লর্ডসের ইতিহাস জানি। তার মুখে যখন প্রথম শুনেছিলাম, তখন ছোট ছিলাম। কিন্তু যখন গেলাম লর্ডসে, জানতে পারলাম সেখানকার ইতিহাস তখন বুঝতে পারলাম কতটা স্পেশাল। তো ওখানে সেঞ্চুরি করতে পেরে ব্যক্তিগতভাবেও অনেক ভাল লাগছিল। তাছাড়া আব্বার মুখ থেকে শোনা এবং সেঞ্চুরি করার পুরো ব্যাপারটা সৌভাগ্যের ছিল। -তরুণ ক্রিকেটার যারা উঠে আসছেন, একজন তামিম ইকবাল হতে হলে তাকে কি করতে হবে? তামিম ইকবাল ॥ কঠোর পরিশ্রম। পরিশ্রম ছাড়া কোনকিছুই সম্ভব নয়। অনেকে চাচা-মামার কথা বলেন। আসলে ব্যাপারটা তেমন না। দিন শেষে হয়তো চাচা-মামার হাত ধরে একটা জায়গায় পৌঁছে যেতে পারেন, কিন্তু ধরে রাখতে হবে আপনাকেই। রান করতেই হবে। ভাল আপনাকে খেলতেই হবে। রান করতে না পারলে আপনাকে পৃথিবীর কোন চাচা-মামা-বাবা বাঁচাতে পারবে না। আপনাকে দলে রাখতে পারবে না। আমাকে নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। আমার কাছে এসব অর্থহীন মনে হয়। প্রথমদিকে আমার খুব গায়ে লাগতো। কিন্তু এখন আর বিরক্ত নই। কারণ আমার পরিসংখ্যান আমার কথা বলবে। -মোহাম্মদ আশরাফুল প্রসঙ্গে আপনার মতামত? তামিম ইকবাল ॥ খুবই একটা সেনসিটিভ ইস্যু। কমবেশি আমরা সবাই জানি উনার শাস্তির ব্যাপারে। তো আমার মনে হয়, যখন উনি শাস্তি ভোগ করে ফিরবেন, তখন আবার আমাদের মতো একজনই হয়ে যাবেন। তখন মাঠে নামলে আমার মনে হয় না তাকে অন্য চোখে দেখা উচিত। আমি আশাবাদী তিনি আবার আগের জায়গায় ফিরবেন। আমি এখনও বিশ্বাসী তার মতো ট্যালেন্টেড ব্যাটসম্যান বাংলাদেশে আর জন্মায়নি। -আগামী ১৫ বছর পর বাংলাদেশকে র‌্যাঙ্কিং, ফ্ল্যাগশিপ, আয়োজক ও স্টেডিয়াম তথা ভেন্যুর দিক থেকে কোথায় দেখতে চান? তামিম ইকবাল ॥ আমি যেটা দেখতে চাই, আগামী ১৫ বছরের মধ্যে আমাদের দল সেরা তিনে থাকুক। আর স্টেডিয়াম নিয়ে যেটা বলব, আমাদের আসলেই বিশাল ধারণক্ষমতার স্টেডিয়াম দরকার। এটা নিয়ে ক্রিকেটার বলেন কিংবা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কর্মকর্তা, সবাই দুঃখ প্রকাশ করেন। পূর্বাচলে আমাদের নতুন স্টেডিয়াম হচ্ছে। আমরা যদি ৭০-৮০ হাজার ধারণক্ষমতার স্টেডিয়াম বানাতে পারি তাহলে আশাকরি কোন সমস্যা হবে না। তো সেখানে যারা স্টেডিয়াম করছেন, তারা বাংলাদেশের সমর্থকদের কথা মাথায় রেখেই এগুলো করবেন বলে আমি আশাবাদী। -আপনার ভক্তদের উদ্দেশে কি বলবেন? তামিম ইকবাল ॥ আমি শুধু এটুকুই বলতে চাই, আমার ভাল সময়ে যেমন পাশে আছেন, খারাপ সময়েও থাকবেন। যখন ফর্মে থাকি, তখন সবকিছু সহজ হয়ে যায়। কিন্তু যখন ফর্ম খারাপ থাকে তখনই সমস্যা শুরু হয়। মন খারাপ থাকে, বাইরে গেলে নেতিবাচক মন্তব্য শুনতে হয়। তো আমার ভক্তদের বলব, ভাল সময়ে পাশে থাকা খুব সহজ। খারাপ সময়েই বন্ধু চেনা যায়। আমি ও দলের ওই ১৫ জন ক্রিকেটার আসলে খারাপ সময়ের ওই বন্ধুদের দিকেই তাকিয়ে থাকি।
×