ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরে বাঁওড় দখলে মরিয়া প্রভাবশালীরা, ভয়ে তরুণীরা বাড়িছাড়া

প্রকাশিত: ২২:৪২, ২৩ মে ২০১৬

যশোরে বাঁওড় দখলে মরিয়া প্রভাবশালীরা, ভয়ে তরুণীরা বাড়িছাড়া

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোরের চৌগাছা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী কাকুড়িয়া বাঁওড় দখলে চেষ্টা করছে ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় লালিত সন্ত্রাসীরা। এজন্য তারা গত শনিবার ওই গ্রামের জেলে পল্লীতে বসবাসরত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাও চালিয়েছে। মারধর করে হুমকি দিয়েছে জীবননাশের। সেই থেকে এ পল্লীতে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। অব্যাহত হুমকির কারণে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেছেন মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি। আর বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কায় অভিভাবকরা স্কুল-কলেজ পড়ুয়া মেয়েদের পাঠিয়ে দিয়েছেন অন্যত্র। ভয়ভীতি প্রদর্শন ও আটকে রাখার হুমকি দেয়ায় নির্ভয়ে বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে বাস করছেন বাঁওড় পারের জেলে পল্লীর বাসিন্দারা। চৌগাছা উপজেলা সদরের পশ্চিমে ভারত সীমান্ত ঘেঁষা একটি গ্রামের নাম কাকুড়িয়া। এই গ্রামে রয়েছে কাকুড়িয়া নামে একটি বাঁওড়। ৭৪ দশমিক ২৫ একর আয়তনের এ বাঁওড়টিই এখানে বসবাসরত ১৫টি জেলে পরিবারের রোজগারের একমাত্র অবলম্বন। সরকারি নিয়ম মেনে তারা লিজ নিয়ে এখানে মাছ চাষ করে সংসার চালান। কিন্তু গত ৭/৮ বছর ধরে তারা বাঁওড় লিজ নিলেও তাতে মাছ চাষ করতে পারেন না। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালীরা জোর জবরদস্তি করে তাদের কাছ থেকে বাঁওড় লিখে নেন। তারপর তারাই সেখানে মাছ চাষ করেন। চলতি অর্থ বছরেও জেলেরা তাদের সমিতির নামে (কাকুড়িয়া মৎস্য সমবায় সমিতি) ৫ লাখ ২৮ হাজার টাকা জমা দিয়ে বাঁওড়ের ডাক আনেন। তারপর তাতে মাছও ছাড়েন। কিন্তু হঠাৎ করে গত ১৪ মে ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় থাকা সন্ত্রাসী বকুল হোসেন, তরিকুল ইসলাম, শামীম হোসেন ও সন্তোষের নেতৃত্বে ১০/১২ জনের একদল সন্ত্রাসী বাঁওড়ে ৮/১০ হাঁড়ি শুধু পানি ঢেলে তাতে তারা মাছ ছেড়েছেন বলে জেলেদের আর বাঁওড়ে না নামার হুমকি দেন। এ সময় কেউ কেউ এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে সন্ত্রাসীরা জেলেদের ওপর চড়াও হন এবং তাদের মারধর করেন। সন্ত্রাসীদের হামলায় মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি তারক হালদারের স্ত্রী পুষ্পরানী (৫৫), নীল কোমল হালদার (৫০), বিপুল হালদারসহ (৩৫) আরো কয়েকজন আহত হন। সন্ত্রাসীরা যাওয়ার সময় অস্ত্র উঁচিয়ে ঘটনা কাউকে না বলার জন্য শাসিয়ে যায়। সেই থেকে এ জেলে পল্লীতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সন্ত্রাসীদের হুমকির মুখে মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি তারক হালদার বাড়িঘর ও স্ত্রী সন্তান ছেড়ে আত্মগোপনে আছেন। আর ভয়ে পল্লীর স্কুল কলেজে পড়–য়া ছেলেমেয়েরা বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। ক্ষতির আশঙ্কায় কয়েকজন যুবতী শিক্ষার্থীকে তাদের স্বজনরা অন্যত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। যেসব শিক্ষার্থী জেলে পল্লীতে আছে তারা অপহরণ হওয়ার ভয়ে বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। তাদের আশঙ্কা বাড়ি থেকে বের হলে তাদের অপহরণ ও জিম্মি করে তাদের স্বজনদের দিয়ে সন্ত্রাসীরা বাঁওড় লিখে নেবে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, বাঁওড়টি জেলে পল্লীর বাসিন্দাদের আয় রোজগারের একমাত্র অবলম্বন হলেও গত ৭/৮ বছর ধরে তারা এর ভোগ দখল করতে পারছেন না। এর আগে বাঁওড় জবর দখল করে নেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি। এবার বাঁওড় জবর দখল করার চেষ্টা করছেন ক্ষমতাসীন দলের এক পক্ষের নেতাদের ছত্রছায়ায় লালিত সন্ত্রাসী বকুল, টিটো, সন্তোষসহ ১০/১২ জন সন্ত্রাসী। আর তাদের হয়ে নেপথ্যে কাজ করছেন উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ মিশ্র জয়। জেলে পল্লীর বাসিন্দাদের অভিযোগ জয়ও বাঁওড় লিখে দিতে তাদের হুমকি দিচ্ছেন। নিজ সম্প্রদায়ের নেতা তাদের বিপক্ষে থাকায় তারা আরো বেশি ভয় পাচ্ছেন।
×