ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

খেলায় আমার কোন ক্লান্তি নেই- রানী হামিদ;###;তোফায়েল আহমেদ

রানীর সাম্রাজ্য..

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ১৩ এপ্রিল ২০১৬

রানীর সাম্রাজ্য..

শখ করেই বাবা সৈয়দ মমতাজ আলী মেয়ের নাম রেখেছিলেন রানী। ব্রিটিশ শাসন আমলের যে সময়টায় মেয়ের জন্ম তখন রাজ্য চালাতেন রানীরাই। মহারানী ভিক্টোরিয়ার ভক্ত ছিলেন বলেই হয়ত মেয়ের ওমন নাম রাখলেন তিনি। ছোট্ট রানীকে রাজা-রানীর গল্প শোনাতে গিয়ে রাজ্য এনে দেয়ার প্রতিজ্ঞাও কি করেছিলেন কখনও? হবে হয়ত। তবে মমতাজ আলী-কামরুন্নেসা দম্পতিকে তাদের তৃতীয় সন্তানের জন্য রাজ্য এনে দিতে হয়নি। বড় হয়ে মেয়ে নিজেই তৈরি করেছেন নিজের রাজ্য। বিয়ের পর সৈয়দা জসিমুন্নেসা খাতুন নামটা সংক্ষিপ্ত করে বাবার দেয়া রানী নামের সঙ্গে স্বামী কর্নেল হামিদের নাম যোগ করে পরিচিত হন রানী হামিদ নামে। পরে যে নামটি হয়ে ওঠে বাংলাদেশ মহিলা দাবার প্রতিশব্দ। শুধু মহিলা দাবা কেন রানী হামিদ নামটি তো বাংলাদেশ দাবারই প্রতিশব্দ। এক দুপুরে দেশের দাবার রানী বনানীর ডিওএইচএসের নিজ বাসায় বসে সাক্ষাতকার দিলেন জনকণ্ঠকে। আড্ডা আর গল্পে গল্পে বেরিয়ে এলো তার দাবাড়ু জীবনের জানা-অজানা নানা কথা। বসার ঘরের দুই পাশটাজুড়ে সাজিয়ে রাখা কেবল ক্যারিয়ারের নানা অর্জন আর স্বীকৃতির সব স্মারক দিয়ে। এত ট্রফি যে প্রতিটায় ভাল করে চোখ বুলাতে গেলে সময় লেগে যাবে কয়েক ঘণ্টা। ভেতরের কক্ষ থেকে যখন বসার ঘরটায় এসে ঢুকেন রানী হামিদ, সেই ট্রফিগুলো যেন ঝিলিক দিয়ে ওঠে। সমুচ্চারে ঘোষণা দিয়ে যায় রানীর শ্রেষ্ঠত্ব। অথচ রানী হামিদ নিজেও নাকি কখনও ভাবেননি এভাবে দাবায় আপন ভুবন তৈরি করবেন, এমন রাজত্ব কায়েম করবেন। এসব গল্পই বেরিয়ে এলো রানী হামিদের সঙ্গে এই আলাপচারিতায়। কিন্তু ইদানীং সাক্ষাতকার দিতেই যে তার ভাল লাগে না। বাসায় যাওয়ার আগে মুঠোফোনে যখন সময় চাওয়া হয়, অপারগতার কথা বলছিলেন বার বার। এই আলাপচারিতায় তাই প্রথম জিজ্ঞাসা, কেন সংবাদ মাধ্যমকে এড়িয়ে চলতে চাওয়া? রানী হামিদ কোন অজুহাত দাঁড় করাতে চান না। সরাসরিই বলে দেন নিজের মনের কথা, ‘আসলে এখন আর এসব ভাল লাগে না। কেমন যেন একঘেয়েও মনে হয়।’ একঘেয়ে মনে হওয়ারই কথা। পঁচাত্তরের উর্ধ বয়সে এখন একটু নিরিবিলি সময় কাটাবেন এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু কোথায় কি? রানী হামিদের আবেদন যে ফুরোয় না! ফুরোবে কি করে? জাতীয় দাবায় ১৮টি শিরোপা জেতা রানী হামিদ এখনও যে প্রতিযোগিতায় নাম লিখান, ঘরে ফিরেন নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে। কিভাবে সম্ভব বছরের পর বছর এভাবে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখা? এই একটি প্রশ্নের উত্তরই তো খুঁজে বেড়ায় সবাই। রানী হামিদ যে প্রশ্নের উত্তর দেন এক কথায়, ‘এখনও আমি দাবা খেলাকে শুরুর দিনগুলোর মতো সমান উপভোগ করি তাই।’ সম্পূরক প্রশ্নে রানী যোগ করেন, ‘কোন কিছু অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে তো খেলা শুরু করিনি। যখন খেলা শুরু করি তখন সাধারণ একজন গৃহিণী ছিলাম। ভাল লাগত বলেই খেলতান। এখনও ভাল লাগে বলেই খেলে যাচ্ছি। এখন যা কিছু পাচ্ছি এটা অতিরিক্ত হিসেবেই আসছে আমার জন্য। কিন্তু আমি আমার মনের আনন্দেই খেলে থাকি সবসময়।’ শুধু মনের আনন্দে খেলেছেন বলেই কি সাফল্য এভাবে ধরা দিয়েছে হাতের মুঠোয়? এটাকে বড় কারণ বলে মানেন। তবে একজনের প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই রানীর, ‘এটা আমার সৌভাগ্য ছিল যে ক্যান্টনমেন্টের কোয়ার্টারে থাকার সময় (১৯৭৪-৭৫) তখনকার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন ড. আকমল হোসেন আমার প্রতিবেশী ছিলেন। ওনার সহযোগিতায় আমি দ্রুত উন্নতি করতে পেরেছিলাম দাবাতে।’ ক্যারিয়ারে তার অর্জনের শেষ নেই। শুধু অর্জনের গল্পগুলো লিখতে গেলে পুরো একটি মহাকাব্য হয়ে যাবে সেটি। টানা ৬ বার জাতীয় দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিরল রেকর্ড গড়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন। ব্রিটিশ দাবায় তিন তিনটি শিরোপা জিতে (১৯৮৩,১৯৮৫,১৯৮৯) দেশকে তুলে ধরেছেন বিশ^ দরবারে। সাধারণ একজন গৃহবধূ থেকে হয়েছেন দেশের ক্রীড়াক্ষেত্রের একটি অঙ্গনের রানী। একটি অঙ্গন কেন? আসলে পুরো ক্রীড়াঙ্গনেরই তো রানী তিনি। তারপরও দাবার কথা বলতে বলতে কিছু আক্ষেপ, বুকের কোণে চাঁপা একটা কষ্ট প্রতীয়মান হয়ে ওঠে তার কণ্ঠে। বাংলাদেশের দাবা যে এগোচ্ছে না। ‘আমরা অনেক পিছিয়ে গেছি এবং ক্রমশও পেছাচ্ছি। ভারতের সঙ্গে একটা সময় সমানে সমানে লড়েছি আমরা। আর এখন তো কোন তুলনাই হয় না ওদের সঙ্গে।’, বলতে বলতে রানী হামিদের হাস্যোজ্জ্বল চেহারাও কেমন বিষণœতায় ছেয়ে যায়। বিষণœ সেই বদন নিয়ে খোলা চোখে যখন তাকান দাবার সামগ্রিক চিত্রের দিকে, তখন দেখেন মহিলারা আজও অবহেলিত সেখানে, ‘আমাদের সেই শুরুর সময়ের চিত্র এখনও বদলায়নি। সমানভাবে আমরা মূল্যায়ন পাচ্ছি না। এক কথায় বললে মহিলা দাবা আজও অবহেলিত। উদাহরণ হিসেবে যদি বলি তাহলে বলব, এশিয়ান ন্যাশন্স চ্যাম্পিয়নশিপ হলো। যেখানে শুধু ছেলেদের টিমকে পাঠানো হয়। মহিলা টিম পাঠানো হয়নি। এমন হলে মহিলারা পিছিয়ে যাবে এটাই তো স্বাভাবিক। কত বছর পর অমরা এই সুযোগটা পেয়েছি। ওখানে থাকা খাওয়া সবই ফ্রি। অথচ শুধু একটা টিকেটের জন্য আমরা বঞ্চিত হয়েছি। এটা তো এক ধরনের বঞ্চনাই।’ এই বঞ্চনা আর অবহেলার কারণে বাংলাদেশে দাবা এগোচ্ছে না বলে বিশ^াস তাঁর, ‘বাংলাদেশে দাবাড়ু ওঠে আসছে না এমনটা কিন্তু বলা যাবে না। দুই-একজন করে ওঠে আসছে ঠিকই কিন্তু তাদের ধরে রাখা বা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো কোন প্রচেষ্টা আমাদের নেই। টাকা পয়সা বা সুযোগ-সুবিধা সবচেয়ে বড় ব্যাপার। আমরা সেই জিনিসটা দিতে পারছি না মেয়েদের। দুই একটা ক্লাব/প্রতিষ্ঠান হয়ত এগিয়ে আসছে। কিন্তু এতে হাতে গোনা কয়েকজনই আমরা সুবিধা পাচ্ছি। সামগ্রিক যে ব্যাপার থাকে সেই জিনিসটি কিন্তু নেই। তারপরও এখন চেষ্টা করা হচ্ছে দবাকে এগিয়ে নেয়ার, এমনটাই আমি শুনেছি। হয়ত পরবর্তীতে চিত্রটা বদলাবে। এখন যেহেতু একটু তোড়জোড় শুরু হয়েছে তাতে আশা করা যায় আগামী ৫ বছর পরে এর একটা ফল পাওয়া যাবে।’ রানী হামিদের মতে দাবা কিংবা যে কোন খেলাতেই আর্থিক নিশ্চয়তা না থাকলে খেলোয়াড় ওঠে আসা নিয়ে হাহুতাশ করে যেতেই হবে ক্রীড়াঙ্গনকে, ‘কেউ যদি দাবাকে পেশা হিসেবে নিতে চায় তবে সেটা সম্ভব না। আমাদের খেলাধুলায় টাকা পয়সা এত কম যে এখানেই মূলত উন্নতি হচ্ছে না। কেউ খেলাধুলায় নিজেকে উজাড় করে দেবে ঠিক আছে। কিন্তু কিসের আশায় দেবে? এই যে আমি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি, যেটা একটা বিরল সম্মান। কিন্তু সেই সম্মাননা দিয়ে ব্যবহারিক জীবনে তো লাভবান হতে পারছি না। এই রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিগুলোর পাশাপাশি যদি আমরা বিভিন্ন টুর্নামেন্ট খেলার জন্য সুযোগ-সুবিধা পেতাম, বিদেশে খেলতে যাওয়ার নিশ্চয়তা পেতাম, তাহলে সেটা আমাদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য বড় ধরনের ভূমিকা হতো। সেগুলোর কিছুই তো আমরা পাচ্ছি না।’ দারা সামগ্রিক চিত্র থেকে এবার তার নিজের গল্পে ফেরা যাক। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে চির তরুণী তিনি। এই সত্তর-উর্ধ বয়সেও লড়েন এখনকার প্রজন্মের সঙ্গে। যখন এই সময়ের খেলোয়াড়দের সঙ্গে লড়াইয়ে নামেন, কেমন লাগে অনুভব হয় তার? উত্তর দিতে গিয়ে হাসেন দাবার রানী, ‘খুবই ভাল লাগে ওদের সঙ্গে খেলতে। নতুনরা অনেক বেশি জানে এবং বুঝে আমাদের থেকে। আমাদের সময় আমরা তো এত সুযোগ-সুবিধা পাইনি। এখন তারা ইন্টারনেটে সবকিছু দেখতে পাচ্ছে। সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েই তারা খেলতে আসে। আমাদের সময় তো এগুলোর কিছুই জানতাম না। দাবা খেলার জন্য যে বই পড়তে হয় এটাও জানা ছিল না। হয়ত তখন তেমন কোন বইও ছিল না।’ দাবাড়ু রানী হামিদের গল্প থেকে তাঁর ব্যক্তি জীবনের গল্পে প্রবেশ করলে দেখা যায় সেখানেও তাঁর গল্প কেবল সফলতায় ভরা। যেখানে রানী হামিদ শুধু একজন সফল দাবাড়ুই নন, একজন সফল স্ত্রী এবং কি সফল মাও। সেখানে তাঁর পুরো পরিবারকে শুধু ক্রীড়া অন্তঃপ্রাণ বললেও ভুল বলা হবে, আসলে আগাগোড়াই তারা এক ক্রীড়া পরিবার। ১৯৫৯ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন যার সঙ্গে, তখনকার সেনা কর্তকর্তা মোহাম্মদ আবদুল হামিদ (কর্নেল হামিদ) শুধু একজন ক্রীড়াপাগল মানুষই ছিলেন না, ছিলেন একজন সফল ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠকও। তৎকালীন পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর হয়ে সাঁতারে রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি। সংগঠক হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। আর ছেলেদের মধ্যে সবার বড় কায়সার হামিদ তো বাংলাদেশ ফুটবলের বড় নক্ষত্রগুলোর একটি। মেজো ছেলে মোহাম্মদ সোহেল হামিদ স্কোয়শ ফেডারেশনের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক। ছোট ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ক্যারিয়ার গড়লেও তিনিও খেলাধুলা করতেন নিয়মিত। সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর করা মেয়ে জেবিন হামিদ খেলতেন দাবা। রানী হামিদ তার পরিবার এবং ছেলে মেয়ের গল্প বললেন এভাবে, ‘কায়সার যখন খেলত তখন একটা প্লেয়ার সবকিছুই খেলত। সে যে শুধু ফুটবল খেলত তা নয়। ক্রিকেট, হ্যান্ডবল থেকে শুরু করে আরও অনেক খেলাই খেলত। আমার ছেলে-মেয়েদের আমি দাবাও খেলিয়েছি। স্কুলের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হলে সেখানেও ওরা চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়ন হতো। আমার মেয়ে জেবিন হামিদ মিতা সাংবাদিকতায় পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরে কিছুদিন সাংবাদিকতাও করেছেন। ছাত্রী জীবনে সে হলিক্রস চ্যাম্পিয়ন ছিলেন দাবাতে। এখন খেলার সঙ্গে যুক্ত আমার মেজো ছেলে সোহেল হামিদ। কায়সার তো ফুটবল নিয়েই জড়িত আছে। ছোট ছেলে খেলার সঙ্গে সেভাবে আর নেই। তবে এলাকাভিত্তিক যে খেলাগুলো হয় সেগুলোতে এখনও খেলে। ওর মেয়ে সামাহা স্কলাস্টিকা স্কুলে একজন নামকরা খেলোয়াড়। জাতীয় হ্যান্ডবল টিমের হয়ে সে ইতালিও ঘুরে এসেছে। দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছে।’ এক পরিবারের তিন তিনজন জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত তারা- কর্নেল হামিদ, রানী হামিদ এবং কায়সার হামিদ। কায়সার হামিদের মাঠ মাতানোর সময়ের কথা ওঠতেই রানী হামিদ স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন দাবার রানী, ‘খুবই উপভোগ করতাম ওই সময়। ওর বাবা আর আমি তো খেলা দেখতে নিয়মিত মাঠে যেতাম। মনে হয় আমিই একমাত্র মহিলা দর্শক হিসেবে মাঠে থাকতাম তখনকার সময়ে। সে যতদিন খেলেছে আমরা দুজন কোন খেলাই মিস করতাম না। মাঠের খেলার ভিডিও রেকর্ড এনে সেই খেলা আবার ঘরে বসে দেখতাম। ওর বাবা ভুল কোথায় কোথায় হয়েছে সেগুলো বলে দিত। তিনি কোন দিন পড়া নিয়ে ওদের সঙ্গে কথা বলেননি। কোন দিন বলেনি, কাল কি পরীক্ষা বা পড়াশোনা ঠিকমতো করছ কিনা। বলটা এভাবে না মেরে ওভাবে মারলে ভাল হতো বা ওখান দিয়ে মারলে গোলটা হতো। এগুলোই কেবল বলতেন।’ নিজে একজন বড় খেলোয়াড় কিংবা বড় খেলোয়াড়-সংগঠকের মা কিংবা একজন সফল খেলোয়াড়-সংগঠকের স্ত্রী হিসেবে যখন দেশের ক্রীড়াঙ্গনের সামগ্রিক চিত্রের দিকে তাকান রানী হামিদ, তাখনও তার কণ্ঠে হতাশার প্রতিধ্বনি, ‘কায়সাররা যখন খেলত তখন তো ফুটবলের মান অনেক ওপরে ওঠেছিল। প্রেসিডেন্স কাপেই না কোন বড় খেলায় যেন একবার ইরানকে বোধহয় হারিয়ে দিল বাংলাদেশ। সেই ফুটবলের মানও হঠাৎ করেই নিচে নেমে গেল। টাকা পয়সা চলে গেল আর ফুটবলেরও মান নিচে নেমে গেল। এখান থেকে এই জিনিসটা ভালই বোঝা যায় যে টাকা পয়সা যদি আসে, তাহলে খেলার মান ওপরে ওঠতে বাধ্য। তার উদাহরণই হলো ক্রিকেট। এ অবস্থায় সরকারের উচিত সব ফেডারেশনকে নির্দিষ্ট আয়ের ব্যবস্থা করে দেয়া।’ আর দাবার উন্নতিতে তাঁর পরামর্শ যত দ্রুত সম্ভব স্কুল পর্যায়ে দাবাটা শুরু করা, ‘সব থেকে সহজ পদ্ধতি স্কুল পর্যায়ে যদি সরকার দাবাকে বাধ্যতামূলক করে। স্পোর্টসের একটা সাবজেক্ট হিসেবে দাবাকে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। যেমন- আমরা যখন পড়াশোনা করতাম সেখানে যদি দাবা নিয়ে একটা সাবজেক্ট থাকত তাহলে সেটা আমার জন্য কত কাজে লাগত। অথচ যেসব পড়েছি সেগুলোতে বিসারদ তো হতে পারেনি। স্কুল পর্যায়ে দাবার প্রচলন করা হলে আরও ওপরের লেভেলে আমরা চলে যেতে পারব। কারণ বাচ্চাদের ব্রেনই ভাল কাজ করে। বড়দের থেকে তারা খুব সহজেই ক্যাপচার করতে পারে যে কোন কিছু।’ বিদেশে গিয়ে দেখেছেন এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে তাঁরা। বাংলদেশের দাবাও সেভাবে এগিয়ে যাক এটাই চান তিনি। আর কতদিন খেলে যাবেন? এমন একটা প্রশ্ন সব সময়ই জানার থাকে তার কাছে। গল্প আর আড্ডার শেষ দিকে এসে যখন এই প্রশ্নটা ছুড়ে দেয়া হলো রানী হামিদকে, উত্তরে বললেন যতদিন উপভোগ করবেন খেলে যেতে চান তিনি, ‘ অন্য সবকিছুতেই ক্লান্তি আসে কিন্তু দাবা খেলাতে আমার কোন ক্লান্তি নেই। তাই যতদিন উপভোগ করছি খেলে যেতে চাই।’ বাংলাদেশের দাবাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া রানী হামিদ দাবা খেলা উপভোগ করে যান আজীবন- এটাই চাইবে সবাই।
×