ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

জীবনযুদ্ধে হেরে গেলেন মার্টিন ক্রো

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৪ মার্চ ২০১৬

জীবনযুদ্ধে হেরে গেলেন  মার্টিন ক্রো

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দীর্ঘদিন ধরেই ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন মার্টিন ক্রো। শেষ পর্যন্ত সেই লড়াইয়ে পরাজয় মানতে বাধ্য হয়েছেন নিউজিল্যান্ডের সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান। জীবনযুদ্ধে পরাজিত হয়ে মাত্র ৫৩ বছর বয়সেই বৃহস্পতিবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। এক বিবৃতিতে মার্টিনের পরিবারের পক্ষ থেকে তার মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করা হয়েছে। সেখানে আরও বলা হয়েছে যে, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথমবারের মতো মার্টিনের শরীরে ক্যান্সারের জীবাণু ধরা পড়ে। দীর্ঘদিন সেই ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে বৃহস্পতিবার অকল্যান্ডে অনেকটা নীরবেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন তিনি। এ সময় তার চারপাশে পুরো পরিবার ছিল। জীবনের শেষ সময়টা তিনি পরিবারের সঙ্গে থাকতেই বেশি পছন্দ করতেন। ১৯৮২ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করেন তিনি। দীর্ঘ ১৩ বছরের বর্ণাঢ্য আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার উপভোগ করে ১৯৯৫ সালে হাঁটুর চোট নিয়েই ক্রিকেটকে বিদায় বলেন তিনি। সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে চার বছর নিউজিল্যান্ডের অধিনায়কত্বও পালন করেছেন মার্টিন ক্রো। ক্যারিয়ারে ৭৭টি টেস্ট ম্যাচে তার ব্যাটিং গড় ছিল ৪৫.৩৬। যখন তিনি অবসরে যান তখন নিজের নামের পাশে বেশ কয়েকটি রেকর্ড রেখে যান। নিউজিল্যান্ডের হয়ে টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান (৫৪৪৪), সর্বোচ্চ টেস্ট স্কোর (২৯৯), সর্বাধিক অর্ধশতক (৩৫টি) ও সর্বাধিক সেঞ্চুরি (১৭) গড়ার অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়েন তিনি। অবসরের সময় মার্টিন ক্রো আরেকটি কাজ করে গেছেন; যে কারণে পুরো ক্রিকেট বিশ্বই তাকে মনে রাখবে। আধুনিক ফর্মেটের টি২০ ক্রিকেট মূলত মার্টিন ক্রোর মস্তিষ্কপ্রসূত। যে কারণে তাকে টি২০ ক্রিকেটের জনক বললেও খুব একটা ভুল বলা হবে না। এমন এক কিংবদন্তির মৃত্যুতে পুরো ক্রিকেট বিশ্বেই নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জন কি বলেন, ‘মার্টিন সত্যিকার অর্থেই একজন অসাধারণ ক্রীড়াবিদ ছিলেন। আমাদের দেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। তার ক্রিকেটীয় মেধা অনেকের কাছে অনুকরণীয় ছিল।’ তার মৃত্যুতে মর্মাহত দেশটির সাবেক অধিনায়ক স্টিফেন ফ্লেমিং। ক্রো সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে একজন সত্যিকারের লড়াকু ব্যাটসম্যান হিসেবেই অভিহিত করেছেন তিনি। এ বিষয়ে নিজের টুইটারে স্টিফেন ফ্লেমিং লিখেছেনÑ ‘মার্টিন ক্রো শুধু আমার কাছেই নয়, বরং ক্রিকেট বিশ্বের অনেকেরই অনুপ্রেরণার উৎস ছিলেন তিনি।’ প্রিয় বন্ধুর এমন আকস্মিক মৃত্যুকে মেনে নিতে পারছেন না নিউজিল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার ইয়ান স্মিথ। এ বিষয়ে দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তিনি বলেন, ‘মাত্র ৫৩ বছর বয়সেই আমাদের ছেড়ে চলে গেল সে, তা কিছুতেই উপলব্ধি করতে পারছি না। আমার কাছে সম্পূর্ণরূপেই বিস্ময়কর মনে হচ্ছে।’ মার্টিন ক্রোর খালাত ভাই হলেন হলিউডের তারকা অভিনেতা রাসেল ক্রো। রাসেলের চোখে মার্টিন ছিলেন একজন নায়ক, একজন সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার চ্যাম্পিয়ন, আমার নায়ক, আমার বন্ধু। তোমাকে আজীবন ভালবাসব। তুমি এখন শান্তিতে ঘুমাও।’ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) হল অব ফেমেও নাম লিখিয়েছিলেন মার্টিন ক্রো। অসুস্থ হওয়ার আগের সময়টাতে নিউজিল্যান্ডের বর্তমান তারকা রস টেইলর, মার্টিন গাপটিলদের মেন্টর হিসেবে কাজ করছিলেন। শুধু তাই নয়, গত বছর আইসিসি বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের দুর্দান্ত পারফর্মেন্সে দারুণ সন্তুষ্ট হয়েছিলেন তিনি। ওই সময় তিনি বারবার বলেছেন, বিশ্বকাপে নিজের দেশের ক্রিকেটারদের এ পারফর্মেন্স দেখে যেতে পারায় তিনি সত্যিই খুব আনন্দিত এবং রোমাঞ্চিত। বিশ্ব ক্রিকেটের কিংবদন্তি মার্টিন ক্রোর মৃত্যুতে ক্রিকেট নিউজিল্যান্ড ও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকেও শোক জানানো হয়েছে। আগামী ১০ মার্চ অকল্যান্ডের হলি ট্রিনিটি ক্যাথেড্রালে মার্টিনের শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
×