ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বনশ্রীর আলোচিত দুই শিশু হত্যা ॥ রহস্য ঘনীভূত

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ৩ মার্চ ২০১৬

 বনশ্রীর আলোচিত দুই শিশু হত্যা ॥ রহস্য ঘনীভূত

গাফফার খান চৌধুরী ॥ ঢাকার রামপুরায় দুই শিশু হত্যার রহস্যের কিনারা হয়নি। বরং আরও ঘনীভূত হচ্ছে। রহস্য উদঘাটন করতে ঘটনাস্থল থেকে জব্দকৃত আলামতের ডিএনএ ও রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য পুলিশকে অনুমতি দিয়েছে আদালত। এছাড়া ঘটনার রহস্য জানতে শিশুদের পিতামাতা ও এক খালাকে জামালপুর থেকে ঢাকায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে র‌্যাব। এ নিয়ে মোট এগারোজনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করল পুলিশ ও র‌্যাব। এরমধ্যে হোটেলের তিনজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বুধবার রাত পৌনে আটটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হত্যাকা-ের রহস্য সম্পর্কে র‌্যাব বা পুলিশের তরফ থেকে কিছুই জানানো হয়নি। এ সংক্রান্ত কোন মামলাও দায়ের হয়নি। তবে প্রস্তুতি চলছে। এমন ঘটনায় শোকে স্তব্ধ নিহতদের স্কুল আর বাসার আশপাশের এলাকা। শত শত মানুষ আর স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর পদভারে শোকের ছায়া নেয়ে এসেছে পুরো এলাকায়। নিহতদের স্মরণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটিতে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এমন ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, অনেক বিষয় মাথায় রেখেই দুই শিশু হত্যার তদন্ত হচ্ছে। যেদিন ঘটনা ঘটে ॥ গত সোমবার রাজধানীর রামপুরার বাসিন্দা ইশরাত জাহান অরণী (১২) ও তার সহোদর ভাই আলভী আমান (৬) রহস্যজনকভাবে শ্বাসরোধে হত্যাকা-ের শিকার হয়। নিহতদের পিতামাতা ও পরিবারের দাবি, হোটেলের খাবার খেয়ে বিষক্রিয়ায় দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। যদিও পরে চিকিৎসকরা পোস্টমর্টেম শেষে বলেছেন, দুই শিশুকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। তাদের শরীরে শ্বাসরোধে হত্যার সব আলামতই রয়েছে। আটক ও পুলিশের বক্তব্য ॥ রামপুরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, নিহতদের পরিবারের মৌখিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে সোমবারই কেন্ট নামের বনশ্রী এলাকায় অবস্থিত ওই চাইনিজ রেস্তরাঁর ম্যানেজার মামুনুর রহমান মাসুদ, প্রধান বাবুর্চি আসাদুজ্জামান রনি ও তার সহযোগী আতাউরকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা হয়। মঙ্গলবার তাদের ঢাকার সিএমএম আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। রামপুরা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, বুধবার রাত পৌনে আটটা পর্যন্ত শিশুহত্যা সংক্রান্ত কোন মামলা দায়ের হয়নি। তবে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। পরিবারের তরফ থেকে মামলা দায়েরের কথা রয়েছে। যদি পরিবারের তরফ থেকে মামলা দায়ের না হয় তাহলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবে। সেক্ষেত্রে কাদের আসামি করা হবে তা উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে করা হবে। র‌্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার আনোয়ার হোসেন জানান, ঢাকা মেডিক্যালের ফরেনসিক রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে। তার আগে কিছুই বলা সম্ভব নয়। পিতামাতাসহ আটজনকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং র‌্যাবের বক্তব্য ॥ মঙ্গলবার শিশুদের হত্যা করা হয়েছে বলে চিকিৎসকরা পোস্টমর্টেম শেষে অভিমত দেন। এমন বক্তব্যের পরই মঙ্গলবার র‌্যাব-৩ নিহতদের বাড়িটির দুই নিরাপত্তা কর্মী পিন্টু (৩০) ও ফেরদৌস (২৮) এবং নিহতদের গৃহশিক্ষিকা শিউলী আক্তারকে (৩০) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায়। এছাড়া বাড়ি থেকে নিহতদের আত্মীয় ওবায়দুল হক এবং দূর সম্পর্কের এক চাচাকে নিয়ে যায় র‌্যাব। তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। বুধবার জামালপুর থেকে নিহতদের পিতা মোঃ আমান উল্লাহ ও মা মাহফুজা মালেক জেসমিন এবং খালা আফরোজা মিলাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‌্যাব-৩ ঢাকায় নিয়ে আসে। তারা জামালপুর জেলা সদরের নতুন হাইস্কুল রোডের নয়াপাড়ার গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে নিহতদের লাশ দাফন করতে গিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে বর্তমানে আটজনকে র‌্যাব জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এ ব্যাপারে র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে জিজ্ঞাসাবাদে কি তথ্য পাওয়া গেছে, তা জানাতে বুধবার রাত পৌনে আটটা পর্যন্ত অপারগতা প্রকাশ করেছেন তিনি। সংগৃহীত আলামত পরীক্ষার অনুমতি ॥ আমাদের কোর্ট রিপোর্টার জানান, ভাইবোনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় জব্দ করা আলামতের ডিএনএ ও রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য পুলিশকে অনুমতি দিয়েছেন ঢাকা মহানগর হাকিম কাজী কামরুল ইসলাম। এর আগে এ ঘটনায় পুলিশের জব্দ করা আলামত ডিএনএ প্রোফাইলিং ও রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য ঢাকার মুখ্য মহানগরের এই হাকিমের আদালতে আবেদন করেন রামপুরা থানার এসআই সোমেন কুমার বড়ুয়া। জব্দকৃত আলামতের মধ্যে রয়েছে বালিশ, বিছানার চাদর, বালিশের কভার, টিস্যু ও কম্বলসহ ঘটনাস্থলে থাকা নানা জিনিসপত্র। আর রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করা হয়েছে চাইনিজ রেস্টুরেন্টের খাবার ও বোতলের সংরক্ষিত পানি। এ বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বিচারক পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) রাসায়নিক গবেষণা ও বিশ্লেষণ বিভাগের প্রধানকে নির্দেশ দিয়েছেন। ঘটনাস্থল ॥ গত সোমবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে রাজধানীর রামপুরা থানাধীন বনশ্রীর বি ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর জিএম এ্যাপার্টমেন্ট লিমিটেডের তৈরি জিএম শাহনূর নামের সাততলা বাড়ির লিফটের চতুর্থ তলার পূর্ব দিকের ৫/এ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে ইশরাত জাহান অরণী (১৪) ও তার সহোদর ভাই আলভী আমানকে (৬) অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে বাড়ির লোকজন ও আত্মীয়স্বজনরা। প্রথমে তাদের বনশ্রী আল রাজি হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাদের মৃত ঘোষণা করেন। স্থানীয়দের বক্তব্য ॥ দুই শিশুকে মৃত অবস্থায়ই বাসা থেকে উদ্ধার করে আল রাজি হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অরণী ও আলভীর লাশ দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করে। নেয়ার পর পরই রাত পৌনে আটটার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা সহোদরদের মৃত ঘোষণা করেন। বাড়িটির মালিক আইডিয়াল স্কুলের গণিতের শিক্ষক আব্দুল কাদের। তার ছেলে নাজমুস সাকিব। এবার এসএসসি দিচ্ছে। সে জানায়, আলভীদের বাসায় নিহতদের পিতামাতা আর তাদের দাদি বসবাস করত। এছাড়া কেউ বসবাস করত না। পিতা গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। মা গৃহিণী। বাড়িতে বহিরাগত লোকের যাতায়াত ছিল না বললেই চলে। নিহতদের বাসায় আমেনা নামের এক গৃহপরিচারিকা ছিলেন। প্রায় পাঁচ মাস ধরে কাজ করছিলেন আলভীদের বাসায়। তিনি প্রতিদিন একঘণ্টা করে কাজ করে দিতেন। সকাল আটটার দিকে যেতেন নয়-সাড়ে নয়টার দিকে বের হতেন। মাসিক সাত শ’ টাকা বেতনে তিনি শুধু ঘর ও কাপড় পরিষ্কার করতেন। তিনি বাড়িটির কাছেই রাস্তার পাশে পিঠা বিক্রি করেন। তার স্বামী একই রোডের ৭ নম্বর বাড়ির নিরাপত্তা প্রহরী মোজাফ্ফর হোসেন। নিহতদের পরিচয় ॥ অরণী রমনা থানাধীন সিদ্ধেশ্বরীর বেইলি রোডে অবস্থিত ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের স্কুল শাখার পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী। আর আলভী বাসা থেকে আনুমানিক দু’শ’ গজ সামনে একই সড়কে অবস্থিত হলি ক্রিসেন্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এ্যান্ড কলেজের স্কুল শাখায় নার্সারির ছাত্র। নিহতদের পরিবারের দাবি ॥ মঙ্গলবার সকালে শিশুদের খালা আফরোজা মিলা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দাবি করেন, গত রবিবার নিহতদের পিতামাতার ম্যারেজ ডে ছিল। সেদিন তারা বনশ্রীর কেন্ট নামের একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খায়। হোটেলে তাদের কেনা বেশ কিছু খাবার বেশি হয়। সেসব খাবার পার্সেল করে বাসায় নিয়ে রাখে। সোমবার দুপুরে সেসব খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে নিহতরা। সন্ধ্যার দিকে তাদের অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়। খাদ্যে বিষক্রিয়া হওয়ায় দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এমনটা দাবি করেন নিহতদের পিতামাতাসহ পরিবারের প্রায় সকলেই। নিহতদের গৃহশিক্ষিকা শিউলি আক্তার মঙ্গলবার আলভীদের বাড়িতে গিয়ে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, সোমবার বিকেল ৩টায় নুসরাত ও আলভী আমান টিভি রিমোট নিয়ে টানাটানি করছিল। তাদের মধ্যে কোন অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা যায়নি। নিহতদের আত্মীয় ওবায়দুল হক দাবি করেন, তিনি খবর পেয়ে রাত ৩টায় ফুপাত বোন নিহতদের মায়ের বাসায় যান। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় তার কাছে বাসার চাবি দিয়ে নিহতদের পিতামাতা বের হন। আর বাসায় ফেরেনি। নিরাপত্তারক্ষী পিন্টুর দাবি, বাড়িতে কোন মারামারি বা হৈচৈ হয়নি। অপর নিরাপত্তাকর্মী ফেরদৌসও এমনটাই দাবি করেন। বাড়ির মালিক আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজের গণিতের শিক্ষক মোঃ আব্দুল কাদেরের দাবি, গত বছরের ১ আগস্ট থেকে মাসিক ১৯ হাজার টাকায় ওই দম্পতির কাছে ফ্ল্যাটটি ভাড়া দেন। বাড়িতে মারামারি বা হাঙ্গামার কোন খবর তিনি জানেন না। শিশুদের লাশ গ্রহণকারী চাচা আবুল হোসেন জানান, নিহতদের পিতার নাম মোহাম্মদ আমান উল্লাহ। তিনি গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। মা মাহফুজা মালেক জেসমিন। গৃহিণী। নিহতদের স্কুলে বিশেষ মোনাজাত ও দোয়া ॥ আলভীর স্কুলটি বাসা থেকে মাত্র দু’শ’ গজ সামনে। একই সড়কের দুই পাশে স্কুলটি অবস্থিত। আলভীর স্কুলের কো-অর্ডিনেটর মেহেদী হাসান জানান, আলভী বাংলা মিডিয়ামে প্রভাতী শাখায় পড়ত। মৃত্যুর দিনও আলভী পিতার সঙ্গে স্কুলে এসেছিল। প্রায় প্রতিদিনই আলভীকে স্কুল থেকে তার পিতা নিয়ে যেত। ঘটনার দিন কে নিয়ে গেছে, তা তার জানা নেই। আলভী খুবই শান্ত স্বভাবের ছিল। সকাল নয়টা থেকে সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত ক্লাস ছিল আলভীর। মাসিক নয় শ’ টাকা বেতন আর বার্ষিক আট হাজার টাকা টিউশন ফিতে পড়ছিল আলভী। আলভীর জন্য সকালে স্কুলে এ্যাসেম্বলি ক্লাসে বিশেষ দোয়া মাহফিল ও মোনাজাত হয়েছে। বাড়ির বাসিন্দারা জানান, অরণীর স্কুল বাসা থেকে অনেক দূরে হওয়ায় সে যথেষ্ট সকালেই থেকে বের হতো। এজন্য গৃহকর্মীসহ অনেকের সঙ্গেই অরণীর তেমন একটা দেখাসাক্ষাত হতো না। অরণীর স্কুলেও শোক পালনসহ বিশেষ মোনাজাত ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। পোস্টমর্টেম ছাড়াই লাশ নিতে পিতামাতার তদবির ॥ নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মৃত ঘোষণার পর পরই নিহতদের পিতামাতা পোস্টমর্টেম ছাড়াই সন্তানদের লাশ নিয়ে যাওয়ার জন্য পুলিশের কাছে পীড়াপীড়ি শুরু করেন। তারা নানাভাবে পুলিশকে ম্যানেজ করারও চেষ্টা করেছেন। শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে পুলিশের কাছে তদবিরও শুরু করেন। এমনকি সরকারী দলের জামালপুর এলাকার একজন প্রভাবশালী নেতাকে ভুল বুঝিয়ে তাকে দিয়ে পুলিশকে ফোন করায়। যাতে পুলিশ কোন প্রকার পোস্টমর্টেম ছাড়াই লাশ পিতামাতার কাছে হস্তান্তর করে। পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা বিষয়টি ওই নেতাকে বুঝিয়ে বলার পর তিনি গুরুত্ব দেন। এরপর পুলিশ পোস্টমর্টেম ছাড়া লাশ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পুলিশের সন্দেহ ॥ একই খাবার খেয়ে দুই শিশু অসুস্থ হলো, অথচ পিতামাতা অসুস্থ হলো না। এমন ঘটনায় সন্দেহ বাড়ে। সেই সন্দেহ থেকেই শিশু দুইটির সুরতহাল করানো হয়। শেষ পর্যন্ত দুই শিশুর সুরতহাল করার পর তাদের হত্যা করা হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা অভিমত দেন। আর তাতেই পাল্টে যায় পুরো দৃশ্যপট। পিতামাতার পৃথক পৃথক অনৈতিক কোন সম্পর্ক বা ব্যবসায়িক বা পারিবারিক বা আর্থিক লেনদেন বা জমিসংক্রান্ত কোন বিরোধের সূত্রধরেও হত্যাকা-ের ঘটনাটি ঘটা বিচিত্র নয় বলে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দাদের সন্দেহ। চিকিৎসকদের বক্তব্য ॥ মঙ্গলবার দুপুরে শিশু দুইটির হত্যাজনিত মৃত্যু হওয়ার বিষয়টি খোলাসা করেন চিকিৎসকরা। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের ডাঃ প্রদীপ বিশ্বাস জানান, মেয়েটির গলায় এবং ছেলেটির গলা ও পায়ে জখমের চিহ্ন রয়েছে। দুই শিশু অক্সিজেনের অভাবে মারা গেছে। খাবারের বিষক্রিয়ায় দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে পরিবারের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছিল। এজন্য দুই শিশুর পেটে থাকা খাবার পরীক্ষা- নিরীক্ষার জন্য আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ সোহেল মাহমুদ জানান, দুই শিশুর গলায় দাগ রয়েছে। সেখানে আঙ্গুলের ছাপ রয়েছে। থুতনিসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। দুজনেরই জিহ্বায় কামড় লেগে ছিল। আর চোখগুলোতে রক্ত জমাট বেঁধে ছিল। শ্বাসরোধে হত্যা করলে যে ধরনের আলামত দেখা যায়, তার সবই রয়েছে শিশু দুইটির শরীরে। ধারণা করা হচ্ছে, শিশু দুইটিকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। এই চিকিৎসক বলছিলেন, একটি বিষয় মোটামুটি নিশ্চিত, এটা হত্যাজনিত মৃত্যু। তারপরও ভিসেরা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট পেলে হত্যার প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। লাশ দাফন ॥ মঙ্গলবার দুপুর সোয়া দুটার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গ থেকে দুই শিশুর লাশ হস্তান্তর করা হয়। লাশ গ্রহণ করেন নিহতের চাচা আবুল হোসেন। পিতামাতা লাশ গ্রহণ না করায় এবং আগেই জামালপুরের গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য হাসপাতাল ত্যাগ করায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সন্দেহ হয়। মঙ্গলবার রাতেই লাশ গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।
×