ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানকে হারাতে আজ আত্মবিশ্বাসী টাইগাররা

লক্ষ্য এবার ফাইনাল

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ২ মার্চ ২০১৬

লক্ষ্য এবার ফাইনাল

মিথুন আশরাফ ॥ ইস্, যদি বাংলাদেশের ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজুর রহমান খেলতেন! এ আফসোস কী শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে পোড়াবে আজ? পাকিস্তানের বিপক্ষে আজ খেলতে নামার আগেই যে এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে পড়লেন মুস্তাফিজ। যে পেসার তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচটিই খেলেছিলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে। ম্যাচটি জিতেছিলও বাংলাদেশ। সেই ম্যাচ থেকেই যে ত্রাস ছড়ানো শুরু করেন, এখন বিশ্ব ক্রিকেটে মুস্তাফিজ হয়ে উঠেছেন রীতিমতো আতঙ্ক! সেই আতঙ্ক আজ নেই। তবে পাকিস্তানের জন্য আরেক আতঙ্ক বাংলাদেশ দলে যুক্ত হয়ে গেছে। সেই আতঙ্ক হচ্ছেন ওপেনার তামিম ইকবাল। যিনি ব্যাট হাতে খেলে দিলে বাংলাদেশের ম্যাচ জেতাটা সহজ থেকে সহজতর হয়ে ওঠে। আজ পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ জিতে গেলে, সেই ম্যাচে তামিমের ব্যাট থেকে রানের ফোয়ারা বের হলে, তখন সবার মুখে বের হবে- ‘যা হয়, ভালর জন্যই হয়’। মুস্তাফিজ এশিয়া কাপে ‘কাটারে’র সুভাষ ছড়ালেও ৩ ম্যাচে ১২ ওভার বল করে সবচেয়ে বেশি ৭২ রান দিয়ে যে মাত্র ৩ উইকেট নিতে পেরেছেন! তখন মুস্তাফিজ না থাকাটাই হয়ত সৌভাগ্য হয়ে ধরা দেবে। সৌভাগ্য ধরা দিলেই তো বাজিমাত। ম্যাচটিও জিতে যাবে বাংলাদেশ, পাকিস্তানকে হারিয়ে ২০১২ সালের পর আবারও এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলাও নিশ্চিত করে ফেলবে। তবে এখানে ‘যদি’ শব্দটি ব্যবহার করতেই হচ্ছে। এর কারণ একটিই। ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের দিকেই যে দৃষ্টি রাখতে হচ্ছে। মঙ্গলবারই ম্যাচটি হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ম্যাচটি শুরু হয়নি। ম্যাচ শেষ হয় যদি ভারতের জয় দিয়ে, তাহলে মহেন্দ্র সিং ধোনির দল ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে নেবে। শ্রীলঙ্কার বিদায় ঘটবে। তখন বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচে মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহরা জিতলেই ভারতের বিপক্ষে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলা নিশ্চিত করে নেবে। বিদায় ঘটবে পাকিস্তানেরও। তখন ভারত-সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা লীগ পর্বের শেষ ম্যাচটি শুধুই আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হবে। আজ বাংলাদেশ হারলেও ফাইনালে ওঠার সম্ভাবনা শেষ হয়ে যাবে না। বাংলাদেশের পয়েন্ট তালিকায় এরই মধ্যে ২ জয়ে ৪ পয়েন্ট যুক্ত আছে। আজ পাকিস্তান জিতলেও হবে ৪ পয়েন্ট। তখন পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার ম্যাচের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে বাংলাদেশকে। যদি পাকিস্তান হেরে যায়, তাহলে রানরেটে পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে থাকতে পারলেই ফাইনালে খেলার স্বপ্ন পূরণ হয়ে যাবে বাংলাদেশের। অবশ্য বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা আজকের ম্যাচটি যে করেই হোক জিতে নিতে চান। জিতলেই যে ফাইনালে ওঠার আশা পূরণ হয়ে যায়! বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা তাই বলেছেন, ‘আমাদের সামনে আসলেই ফাইনাল খেলার খুব ভাল সুযোগ আছে। সর্বশেষ দুটি ম্যাচ যেভাবে খেলেছি, সেভাবে খেলতে পারলে অবশ্যই সুযোগ কাজে লাগানো যাবে। কিছু ভুলও অবশ্য ছিল। কিন্তু আমরা প্রয়োজনের সময় দরকারী কাজ করতে পেরেছি বলেই ম্যাচ দুটি জিততে পেরেছি।’ মুস্তাফিজ যে নেই, এ বিষয়টি বাংলাদেশ দলকে পোড়াবে স্বাভাবিক। উইকেট পাক, আর না পাক; মুস্তাফিজ এখন আতঙ্ক। পাকিস্তানের জন্য তো সেটি অনেক। মাশরাফিত একধাপ এগিয়ে মুস্তাফিজকে এ মুহূর্তে বিশ্বের সেরা পেসারই বলে দিতে চাইলেন। সঙ্গে তামিমের যুক্ত হওয়াতে যেন স্বস্তিও খুঁজে পাচ্ছেন মাশরাফি, ‘আমি আগেও বলেছি, তামিমের না থাকা সব সময় আমাদের জন্য কিছুটা অস্বস্তিকর বিষয়। সব ফরমেটে সে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান। তামিম অনেক দিন ধরে খেলছে, সে অনেক অভিজ্ঞ। মুস্তাফিজের না থাকা আমাদের জন্য বড় ক্ষতি। ও যেটা দলের জন্য দেয়, সেটা সব সময়ই দলের জন্য অসধারণ কিছু। এটা প্রমাণিত বিষয়। ওর জায়গা নিয়ে খেলার মতো কোন বোলার এখন বিশ্বেই নেই।’ মুস্তাফিজ না থাকাতে এখন আবু হায়দার রনির খেলার সুযোগ ধরা দিতে পারে। রনিও ‘কাটার’ মারতে পারেন। ‘ইয়র্কার’ও দেন। বল ভেতরেও ঢোকাতে পারেন। পাকিস্তানের জন্য রনি হতে পারেন আরেক আতঙ্ক! মাশরাফি এ নিয়ে বলেন, ‘কম্বিনেশনে তো পরিবর্তন হয়েই গেছে। যেহেতু মুস্তাফিজ খেলতে পারছে না। এটা আমাদের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ। তারপরও ওর জায়গায় যে আসবে তার জন্য কাজটা খুবই চ্যালেঞ্জিং হবে। আমরা ওর না থাকা নিয়ে এখন আর ভাবছি না। আমরা সামনের দিকে তাকাচ্ছি। যারা আছে, তাদের সেরাটা নিয়ে আমরা খেলব।’ ভারতের কাছে হারের পর আরব আমিরাতকে যেভাবে হারিয়েছে বাংলাদেশ, তাতেই আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। এরপর লঙ্কানদের হারিয়ে এখন আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে বসবাস করছেন ক্রিকেটাররা। যে আত্মবিশ্বাসে ২০১৫ সালে পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে ছাড় দেয়নি বাংলাদেশ। এবার টি২০তে এমন আত্মবিশ্বাসের বলি হয়ে যেতে পারে পাকিস্তানও। শ্রীলঙ্কাকে হারানোর পরই বাংলাদেশ যে এখন টি২০তেও বদলে যাওয়া দলের লোগো সেটে নিয়েছে। মাশরাফিই যেমন বললেন, ‘জয়-পরাজয় দিয়েই হয়ত সব সময় অনেক কিছু বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়। সবাই জয়ের জন্যই খেলে। জিততে পারলে আত্মবিশ্বাসও বাড়ে-এটাই স্বাভাবিক। একটা দল যখন একটা বাজে পরিস্থিতি থেকে নতুন একটা সাফল্যের পথে যায়, তখন কিন্তু একটু একটু করেই উন্নতির দিকে তাকাতে হয়। রাতারাতি কিছু হয় না। আমরা শ্রীলঙ্কার সঙ্গে জিতেছি, এই জন্য অনেক কিছু ভাবা হচ্ছে। আমার কাছে মনে হয় না সে রকম। ভারতের বিপক্ষেও আমরা কিন্তু সঠিক পথেই ছিলাম। কিন্তু দুঃখজনকভাবে একটা পর্যায়ে গিয়ে আমরা পারিনি। এটাই কিন্তু একটা বিষয়। আবার শ্রীলঙ্কার ম্যাচের দিকে দেখেন- এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস কিন্তু ওই পরিস্থিতি থেকে ম্যাচ বের করে নেয়ার জন্য যথেষ্ট কার্যকর। তার রেকর্ডও কিন্তু তাই বলে। ওই পরিস্থিতিতে আমরা মাথা ঠা-া রেখে খেলেছি। সুতরাং এক বা দুই দিনেই কিছু হবে না। জেতা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু একটা দল উন্নতির পথে থাকে, তখন ওই গ্রাফটাই দেখা উচিত। আমরা ওই দিকটাই ফোকাস করছি।’ বাংলাদেশের সেই উন্নতির ঝড়ের কবলে এখন পাকিস্তান পড়ে গেলেই হয়।
×