ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

‘আমি খুব খুশি, সবার প্রতি কৃতজ্ঞ’

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ২৯ আগস্ট ২০১৫

‘আমি খুব খুশি, সবার প্রতি কৃতজ্ঞ’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘আমি খুব খুশি এই এ্যাওয়ার্ড জিততে পেরে। আমার এই প্রাপ্তির সব কৃতিত্ব সতীর্থদের। কারণ তারাই এটাই দাবিদার। সতীর্থদের ছাড়া আমি এই সাফল্য অর্জন করতে পারতাম না। আমি সবসময় ব্যক্তিগত সাফল্যের চেয়ে দলগত অর্জনকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। আমরা গত মৌসুমে ট্রেবল জিতেছি। তারই পুরস্কারস্বরূপ আমি ইউরোপের সেরা খেলোয়াড় হয়েছি। এ জন্য বেশি ভাল লাগছে। আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।’ কথাগুলো সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসির। বৃহস্পতিবার রাতে ২০১৪-১৫ মৌসুমে ইউরোপের সেরা ফুটবলার নির্বাচিত হওয়ার পর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন বার্সিলোনার আর্জেন্টাইন মহানায়ক। ফ্রান্সের মোনাকোতে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের গ্রুপ পর্বের ড্র অনুষ্ঠানে এই এ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়। এবার নিয়ে দ্বিতীয়বার ইউরোপ সেরা হলেন মেসি। মর্যাদার এই পুরস্কার জয়ের পথে সাবেক রেকর্ড টানা চারবারের ফিফা সেরা ফুটবলার পেছনে ফেলেছেন দুই প্রতিদ্বন্দ্বী লুইস সুয়ারেজ ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে। ইউরোপের ৫৪ সাংবাদিকের ভোটে সবার সেরা হয়েছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। ৫৪ জনের মধ্যে মেসিকে সেরা হিসেবে বেছে নিয়েছেন ৪৯ সাংবাদিক। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, দ্বিতীয় স্থানও পাননি রোনাল্ডো। মাত্র ২ ভোট পেয়ে রিয়াল মাদ্রিদের পর্তুগীজ সুপাস্টারের অবস্থান তিন নম্বরে। আর ৩ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন মেসির বার্সিলোনা সতীর্থ লুইস সুয়ারেজ। প্রমীলা ফুটবলের সেরা হয়েছেন জার্মানির সেলিয়া সাসিক। এফএফসি ফ্রাঙ্কফুটের হয়ে খেলা এই ফুটবলার গত মাসে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেন। সবার সেরা হতে তিনি পেছনে ফেলেন ফ্রান্সের আমানডিনে হেনরি ও স্বদেশী জেনিফার মারোজসানকে। দুই সপ্তাহ আগে ১০ জনের আগের তালিকা থেকে তিনজনের সংক্ষিপ্ত তালিকা ঘোষিত করা হয়েছিল। সাংবাদিকদের এই প্যানেলই পরশু রাতে মোনাকোতে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের গ্রুপ পর্বের ড্র অনুষ্ঠানে সেরা খেলোয়াড়ের নাম ঘোষণা করে। সেখানে বিজয়ী মেসির হাতে তুলে দেয়া হয় এ্যাওয়ার্ড। ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের সেরা খেলোয়াড়ের এই পুরস্কারের প্রবর্তন ২০১০-১১ মৌসুমে। প্রথমবার গৌরবময় পুরস্কার জয় করেন মেসি। পরের দুই মৌসুম আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা ও ফ্রাঙ্ক রিবেরি ইউরোপ সেরার মুকুট বাজিমাত করেন। আর গতবার জিতেছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। এবার অনুমিতভাবেই মুকুট পুনরুদ্ধার করে দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোপ সেরা হলেন মেসি। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়া তিনজনই স্প্যানিশ লা লিগায় খেলেন। ইউরোপের অন্য লীগের কোন খেলোয়াড়ই চূড়ান্ত তালিকায় সুযোগ পাননি। গত মৌসুমে বার্সিলোনার ঐতিহাসিক ‘ট্রেবল’ জয়ে আর্জেন্টাইন তারকার অবদান সবচেয়ে বেশি। ৫৭ ম্যাচে ৫৮ গোল করেন চারবারের ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার। কোপা আমেরিকায়ও মেসির নেতৃত্বেই রানার্সআপ হয়েছে আর্জেন্টিনা। রোনাল্ডোর ২০১৪-১৫ মৌসুম কেটেছে অম্লমধুর অভিজ্ঞতায়। পর্তুগীজ তারকার দল রিয়াল মাদ্রিদ একটি শিরোপাও জিততে পারেনি। তবে গত দুবারের ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারকে ব্যক্তিগতভাবে সফলই ছিলেন। সবমিলিয়ে ৫৪ ম্যাচে ৬১ গোল করা রোনাল্ডো লা লিগার সর্বোচ্চ গোলদাতাও হান। বার্সিলোনা সতীর্থ মেসির মতো গোল করতে পারেননি সুয়ারেজ। গত মৌসুমে ৪৩ ম্যাচ খেলে উরুগুয়ের এই স্ট্রাইকার ২৫ গোল করেন। তবে সংখ্যায় কম হলেও সুয়ারেজের বেশ কিছু গোল ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মার্চে রিয়াল মাদ্রিদের বিরুদ্ধে লা লিগায় এবং জুনে জুভেন্টাসের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফাইনালে তার গোলেই শিরোপার পথ সুগম হয়েছিল বার্সিলোনার। কিন্তু মেসিকে টপকানোর মতো পারফর্মেন্স সুয়ারেজ কিংবা রোনাল্ডো কারোরই ছিল না। ইউরোপের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার পাশাপাশি সেরা গোলদাতাও হয়েছেন মেসি। এখানে তিনি হারিয়েছেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রোনাল্ডোকে। সেরা গোলের পুরস্কার পাওয়ার পথে মেসি পান ৩৯ শতাংশ ভোট। দ্বিতীয় হওয়া রোনাল্ডো পেয়েছেন ২৪ শতাংশ ভোট। তৃতীয় স্থানে থাকা আর্সেনালের এ্যারন রামসে পেয়েছেন ৯ শতাংশ ভোট। মেসির ক্লাব সতীর্থ ব্রাজিলের তারকা নেইমার ৭ শতাংশ ভোট পেয়ে চতুর্থ স্থান লাভ করেছেন। ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের সর্বোচ্চ এই আসরে গত মৌসুমে সেমিফাইনালের প্রথম লেগে বেয়ার্ন মিউনিখের জালে অনিন্দ্য সুন্দর গোলটি করেন মেসি। বল পায়ে ডান দিক থেকে ডি বক্সে ঢুকে এক ঝটকায় ডিফেন্ডার জেরোমে বোয়াটেংকে ফেলে দিয়ে চিপ করে গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নিউয়েরকে বোকা বানান মেসি। বার্সিলোনা সভাপতি জোসেফ মারিয়া বার্টোমেউ আশা করছেন তার দলের সেরা ফুটবলার এবার ফিফা ব্যালন ডি’অরের পুরস্কার পুনরুদ্ধার করবে। মেসি ইউরোপ সেরা হওয়ার পর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, মেসি বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়। প্রতি ম্যাচেই সে নিজেকে উজাড় করে দেয়। তার আত্মবিশ্বাস অবিশ্বাস্য। এ কারণেই সে ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছে। উয়েফা বর্ষসেরার পর এবার তার ব্যালন ডি’অর জেতা উচিত। বিশ্বসেরা হওয়ায় সব পুরস্কার যে তার হাতেই উঠবে এটাই তো স্বাভাবিক।
×