ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রত্যাশার কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পথে কঠিন চ্যালেঞ্জ

যোগ্যতা প্রমাণের বিশ্বকাপ বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

যোগ্যতা প্রমাণের বিশ্বকাপ বাংলাদেশের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ গত বছরটা খুব বাজে কেটেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। পুরো বছরজুড়েই ছিল পরাজয়ের কালো ছায়া। তবে কথায় আছে শেষ ভাল যার সব ভাল তার। বছরের শেষটা দুর্দান্ত হয়েছে বাংলাদেশের। নিজেদের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী জিম্বাবুইয়েকে ঘরের মাঠে হোয়াইটওয়াশ করে নিজেদের আত্মবিশ্বাসটা একটু হলেও ফিরে পেয়েছেন ক্রিকেটাররা। আর সেটাকে পুুঁজি করেই এবার অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে আসন্ন বিশ্বকাপ মঞ্চে অবতীর্ণ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ দল। ইতোমধ্যেই অসি ভূমিতে পদাপর্ণ করে অনুশীলনে নেমে পড়েছে মাশরাফি বিন মর্তুজা শিবির। ১৮ ফেব্রুয়ারি সহযোগী সদস্য দেশ বিশ্বকাপে নবাগত আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ক্যানবেরায় নিজেদের প্রথম ম্যাচ দিয়ে অভিযানের শুরু। তবে অপরিচিত ও ভিন্ন পরিবেশ, ব্যতিক্রম উইকেটে দুই আয়োজক দলসহ শ্রীলঙ্কা ও ইংল্যান্ডের মতো দুই শক্তিধর প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কতটা ভাল করতে পারে বাংলাদেশ সেটাই শঙ্কা। কারণ জিম্বাবুইয়ের সঙ্গে জিতলেও বড় কোন দলের বিরুদ্ধে গত বছর খুব খারাপভাবে হেরেছে বাংলাদেশ নিজেদের মাটিতেও। এমনকি আফগানদের বিরুদ্ধেও পরাজয়ের কালিমা লেগেছে। সে কারণে এবার বিশ্বকাপে নিজেদের সামর্থ্য, যোগ্যতা এবং শক্তিমত্তা প্রমাণের চ্যালেঞ্জ টাইগারদের। বড় পরাজয়, অস্বাভাবিক বিপর্যয়, খেলোয়াড়দের মধ্যে অসন্তোষ এর সবই বড় প্রভাব ফেলেছিল বাংলাদেশ দলের মাঠে নৈপুণ্য প্রদর্শনের ক্ষেত্রে। গত বছরটা এতকিছুর মধ্য দিয়েই গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। পুরো বছরের মধ্যে নিজেদের অস্তিত্ব আর যোগ্যতার প্রমাণ বলতে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে শতভাগ সাফল্য। এসবের মধ্যে দু’-একটি ম্যাচে আবার দারুণ খেলেও জয়ের দেখা মেলেনি। এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৩২৬ রানের সংগ্রহ গড়েও হেরেছে। শ্রীলঙ্কাকে একটি ম্যাচে ৬৭ রানে ৮ উইকেট ফেলে দিয়েও পরাজয়, ভারতকে ১০৫ রানে গুটিয়ে দিয়েও হার। এ কয়েকটি পরাজয় যেন আর বিভীষিকাময় ছিল। এসবের প্রভাবে ক্রিকেটাররা ছন্দ হারিয়েছেন, আত্মবিশ্বাস খুইয়েছেন। জুন মাসের মধ্যেই দলের পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছিল যে ২০১১ সালে যে বিপর্যস্ত দলে পরিণত হয়েছিল বাংলাদেশ সে অবস্থাটাই ফিরে এসেছিল। সেখান থেকে অন্তত নিজেদের ক্ষতটা একটু হলেও উপশম করার মতো উপজীব্য পেয়েছে জিম্বাবুইয়েকে হারিয়ে বছরের শেষে। এরপর আর কোন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেনি বাংলাদেশ। প্রায় দুই মাসের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিরতি নেয়া দল আসন্ন বিশ্বকাপে কেমন করবে তা এক শঙ্কার বিষয়! গত চার বছরে অস্ট্রেলিয়া কিংবা নিউজিল্যান্ড সফর করেনি বাংলাদেশ দল। আর সে সময় যারা দলের হয়ে খেলেছেন তাদের মধ্যে মাত্র ৪-৫ জন আছেন বর্তমান দলে যাদের অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে পূর্বে খেলার অভিজ্ঞতা নেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনভিজ্ঞ এমন ক্রিকেটারই এবার বিশ্বকাপ স্কোয়াডে আছেন ৫ জন। অথচ এবার সেখানেই দুর্দান্ত ফর্মে থাকা স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে মুখোমুখি হতে হবে গ্রুপ পর্বে। নিজেদের গ্রুপে আরও আছে ১৯৯৬ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ও গত দু’বারের রানার্সআপ শ্রীলঙ্কা। এ পরিবেশের সঙ্গে দারুণ মানানসই ইংল্যান্ডও শক্তিমত্তায় অনেক খানি এগিয়ে। এ চারটির দলই ফেবারিট কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার ক্ষেত্রে। এবার কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার প্রত্যয় নিয়ে দেশে ছেড়েছেন মাশরাফিরা। সেক্ষেত্রে এ চারটি দলের মধ্যে অন্তত একটির বিরুদ্ধে জিততেই হবে। গ্রুপে থাকা আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে কাগজ-কলমের হিসাবে জয় পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকেই যদি ফেবারিট ধরা হয় তখন এ হিসাবটা আসে। এখন পর্যন্ত টানা আগের চার বিশ্বকাপ খেলেছে বাংলাদেশ দল। ২০০৭ সালে একমাত্র ব্যতিক্রম হিসেবে গ্রুপ পর্ব উতরে সুপার এইট নিশ্চিত করতে পারলেও বাকি তিনবার প্রাথমিক পর্বের গ-িতেই শেষ হয়েছে বিশ্বকাপ অভিযান। এবারও একই পরিস্থিতির উদ্ভব হওয়ার শঙ্কাটা জোরালো। মর্যাদা টিকিয়ে রাখার ম্যাচ তাই আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে। এ দুটি দেশই এক মাসেরও বেশি সময় ধরে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের পরিবেশে অনুশীলন করে নিজেদের মানিয়ে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়েছে। তার চেয়েও বড় বিষয় গত বছর এশিয়া কাপে আফগানদের কাছে পরাজয়ের একটি কালিমা আছে। তবে বাংলাদেশ আশা করতেই পারে। কারণ ওয়ানডের আতঙ্ক হিসেবে নিজেদের ২০১২ সালেই প্রমাণ করতে পেরেছিল দলটি। সেবার এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলেছিল বাংলাদেশ দল। মাশরাফির নেতৃত্বে বেশ ভালমানের একটি পেস বিভাগ এবং চিরাচরিত নিয়মে দুর্দান্ত একটি স্পিন বিভাগ আছে দলের।
×