
একটা ব্রিজ—যেটা কখনো ছিল গ্রামের প্রাণ, যোগাযোগের মূল পথ—সেটাই এখন হয়ে উঠেছে মৃত্যুফাঁদ। বলছি ঝিনাইদহের শৈলকুপার পৌর এলাকার মাঠপাড়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজ যা প্রায় তিন বছর ধরে ভেঙে পড়ে আছে। এলাকাবাসী বারবার কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করেও ব্রিজটি সংস্কার বা পুনঃনির্মাণের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। স্কুলপড়ুয়া শিশু, বৃদ্ধ ও রোগীসহ প্রতিদিন শত শত মানুষ বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হচ্ছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। ব্রিজটি দিয়ে হাসনাভিটা, ইটালী, জামসেদপুর, মজুমদারপাড়া, হরিদেবপুরসহ অন্তত ৬টি গ্রামের হাজারো মানুষ প্রতিদিন চলাচল করে। ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ার পর মানুষের দুর্ভোগ পেরিয়ে গেছে সীমাহীন
এটি শৈলকুপা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মাঠপাড়া এলাকার অবস্থিত। ব্রিজটি ভেঙে পড়েছে প্রায় তিন বছর আগে। প্রবল বর্ষণের ফলে ব্রিজ এর একাংশ ধসে পড়ে। সৃষ্টি হয়েছে বিশাল গর্ত। ইট ও পাথরের ভাঙা স্ল্যাবগুলো এখনো পড়ে আছে, যেন কেউ দেখার নেই। জায়গায় জায়গায় বাঁশ দিয়ে বানানো হয়েছে অস্থায়ী সাঁকো। একটু অসতর্ক হলেই নিচে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা। পাশে দাঁড়িয়ে থাকলেও ভয় লাগে। স্থানীয়রা বালুর বস্তা ফেলে, মাটি চাপিয়ে কোনো রকমে যানবাহন ও মানুষ চলাচল করছে। এর পরেও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। আশ্বাস অনেক পাওয়া গেছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। জনবহুল এ অঞ্চলের মানুষ প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো ও কাঁচা মাটি ব্যবহার করে চলাচল করছেন। বর্ষা মৌসুমে এই পথ পুরোপুরি বিপজ্জনক হয়ে পড়ে।
প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া শিশুদের কষ্ট সীমাহীন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেক সময় পড়ে গিয়ে জামাকাপড় ভিজে যায়, কেউ কেউ ব্যথা পায়। গর্ভবতী নারী বা বৃদ্ধ রোগীদের হাসপাতাল নেওয়া হয় ভ্যান বা বাইকে—ঝুঁকি নিয়ে।
বৃদ্ধ আব্দুল মান্নান বলেন,
আমি ডাক্তার দেখাইতে যাইছিলাম। ব্রিজের মাথায় গিয়ে থামছি, ছেলেটা (ভ্যানচালক) বললো পার হইতে হইবে হেঁটে এই বয়সে নামবো কিভাবে, উঠবো কিভাবে।
এলাকাটি কৃষিপ্রধান, অধিকাংশ লোক কৃষি কাজের সাথে জড়িত ধান, শাকসবজি, কলা, পেঁপে, কচু, চালকুমড়া ইত্যাদি নিয়মিত উৎপাদিত হয়। ব্রিজটা ছিল কৃষিপণ্য বহনের অন্যতম প্রধান পথ। আশেপাশে এলাকার সব কৃষকদের এই ব্রিজ পার হয়ে যেতে হতো মাঠে , এই ব্রিজটি ভেঙে পড়াতে কৃষকেরা পণ্য বাজারে নিয়ে যেতে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে । প্রায় তিন কিলোমিটার ঘুরে যেতে হচ্ছে। এতে লোকসান গুনতে হচ্ছে অনেকের।
স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী মণ্ডল বলেন,,
প্রথম বছর বলছিলো ঠিক করবে, দ্বিতীয় বছর বলছে বরাদ্দ আসবে, এবার তৃতীয় বছর চলছে। এখন তো বলেই না কেউ। সবাই এসে মেপে যায় দেখে যায় কিন্তু কাজ হয় না৷
স্থানীয় এক তরুণ মিনহাজ বলেন
জনগণের টাকায় উন্নয়ন হয়, অথচ জনগণের মৌলিক সমস্যার কথা শুনছে না কেউ। কতদিন এমন চলবে? প্রয়োজন হলে আন্দোলন গড়ে তুলবো।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করেন, স্থানীয় কিছু ওয়ার্ড কাউন্সিলর বা নেতার ‘নিজস্ব এলাকায়’ না হওয়ায় এ সেতুর ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। অথচ এলাকাবাসীর কাছে এটা প্রতিদিনের ভোগান্তি।
এলাকাবাসী বলেন ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি আসে, কাজ আসে না। আমাদের ভাগ্যেই বুঝি ভাঙা ব্রীজ আর খালি কথা।
ভাঙা ব্রিজএর নিচে জমেছে পানির নালা। প্রতি বছর বর্ষায় পানির চাপ আরও মাটি ধসে ফেলে। এতে করে পাশের বসতবাড়ি ও গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যদি সময়মতো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে পুরো রাস্তাটিই এক সময় নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে।
এলাকাবাসী আরো বলেন দ্রুত ব্রিজটি স্থায়ীভাবে নির্মাণ করতে হবে। বর্ষা আসার আগেই অন্তত অস্থায়ীভাবে মজবুত পথ তৈরি করতে হবে। জনগণের ভোগান্তি লাঘবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এ দাবির সঙ্গে মানবতা, দায়িত্ববোধ ও সরকারের উন্নয়ন ভাবনার মিল ঘটুক—এটাই প্রত্যাশা আমাদের ।
Jahan