ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

কুড়িগ্রামে নদী শাসনে ১৫ লাখ মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে, জনমনে স্বস্তির নিঃশ্বাস

রফিকুল ইসলাম রফিক, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ২০:৩৯, ২৭ জুন ২০২৫; আপডেট: ২০:৪০, ২৭ জুন ২০২৫

কুড়িগ্রামে নদী শাসনে ১৫ লাখ মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে, জনমনে স্বস্তির নিঃশ্বাস

ছবিঃ জনকণ্ঠ

কুড়িগ্রামের প্রধান তিন নদ-নদী—ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার—এর বাম ও ডান তীর সংরক্ষণ এবং নদী ব্যবস্থাপনায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) প্রায় ২ হাজার ২২৫ কোটি টাকার চারটি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

প্রকল্পগুলো সম্পন্ন হলে জেলাবাসী নদীভাঙনের ভয়াবহতা থেকে মুক্তি পাবেন। পাশাপাশি কৃষি, স্বাস্থ্য ও ব্যবসাসহ নানা খাতে উপকার পাবেন প্রায় ১৫ লাখ মানুষ।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, জেলার সদর, রাজারহাট ও ফুলবাড়ী উপজেলার ধরলা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও তীর সংরক্ষণ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৬২৯ কোটি টাকা, যার ৭২ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। চিলমারী ও উলিপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের ডানতীর ভাঙন রোধ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪৮ কোটি টাকা এবং এ প্রকল্পের ৯৩ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

রৌমারী উপজেলার ঘুঘুমারী হতে ফলুয়ার চরঘাট ও রাজীবপুর উপজেলার সদর হতে মোহনগঞ্জ বাজার পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদের বামতীর সংরক্ষণ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পে ৪৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯৮ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া দুধকুমার নদীর ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৯২ কোটি টাকা, যার ৬১ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

পাউবো জানায়, ২০১৯ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পগুলোর নির্ধারিত সময়সীমা ২০২৫ সালের ৩০ জুন। সময়সীমার মধ্যেই সব প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্যে কাজ চলছে পুরোদমে।

ধরলা নদীর তীরবর্তী সিএনবি ঘাট এলাকার বাসিন্দা কহিনুর রহমান ও গোলজার হোসেন বলেন, “তীর সংরক্ষণের কাজ শেষ হলে বসতবাড়ি, স্কুল, মসজিদ রক্ষা পাবে। আমরা আর্থিকভাবেও লাভবান হবো।”

বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা আমজাদ হোসেন, সুলতান মাহামুদ ও রাজিয়া বেগম জানান, “দুধকুমার নদীর কাজ শেষ হলে ভাঙনের ভয় থেকে মুক্তি পাবো। উন্নয়নের ছোঁয়া আসবে কৃষি ও সংস্কৃতি খাতে।”

চিলমারী উপজেলার রমনা ঘাট এলাকার নুর মোহাম্মদ, জব্বার আলী ও সকিনা বানু বলেন, “প্রতি বছর ভাঙনের কারণে জমি ও বাড়িঘর হারাতে হয়। এ প্রকল্প সঠিক সময়ে শেষ হলে আমাদের কষ্ট অনেকটা কমবে।”

রৌমারী উপজেলার বাসিন্দা মাসুদুর রহমান ও আওরঙ্গজেব বলেন, “ব্রহ্মপুত্রের বামতীর সংরক্ষণের কাজ শেষ হলে এই অঞ্চলের মানুষ স্থায়ীভাবে ভাঙন থেকে রেহাই পাবে।”

প্রকল্পগুলোর অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রহ্মপুত্রের বামতীর ভাঙন রোধ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী আহসান হাবীব বলেন, “৯৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। জুনের মধ্যেই বাকি কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।”

ধরলা ও দুধকুমার প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান বলেন, “ধরলা প্রকল্পে ৭৩ শতাংশ এবং দুধকুমারে ৬১ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময়েই আমরা কাজ শেষ করব।”

ব্রহ্মপুত্রের ডানতীর ভাঙন রোধ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, “ডানতীর সংরক্ষণের ৯৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। পাউবোর অন্যান্য উন্নয়ন কাজও সময়মতো শেষ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

নদীভাঙন রোধে সরকারের এমন উদ্যোগে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন জেলার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।

আলীম

×