ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতাল: একদিনের চিত্র

আব্দুন নুর আজাদ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: ২০:৩৩, ২৭ জুন ২০২৫

ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতাল: একদিনের চিত্র

জরুরি বিভাগে প্রতিদিনই শুরু হয় জীবনের জন্য এক দৌড়। রোগীর কান্না, চিকিৎসকের ছুটে চলা আর স্বজনদের ভরসা সব মিলিয়ে হাসপাতালের প্রতিটি দিন যেন এক অদৃশ্য যুদ্ধ।

সকাল ৮টা। ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে থামে একটি অ্যাম্বুলেন্স। ভেতর থেকে নামানো হয় এক বৃদ্ধকে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তার। পেছনে ছোটেন মেয়েটি, চোখে কান্না, মুখে আকুতি “আব্বাকে একটু দেখেন, দয়া করে!” দৃশ্যটা নতুন কিছু নয়। প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ছুটে আসে কেউ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে, কেউ দুর্ঘটনায়, কেউবা শিশুকে নিয়ে দৌড়ে।

জরুরি বিভাগের ভেতর এক মুহূর্তও ফাঁকা থাকে না। ভিজে কাপড়ে, মলিন মুখে অপেক্ষায় বসে আছেন কেউ। আবার একজন নার্স ওষুধ আনতে দৌড়াচ্ছেন।

একজন কর্মরত নার্স (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, “সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রোগীর চাপ সামলাতে হয়। চেষ্টা করি যেন কাউকে বসিয়ে না রাখি। তবে জনবল কম, সিস্টেমিক চাপ থাকে।”

জরুরি বিভাগে শিফট অনুযায়ী চিকিৎসক থাকলেও রোগীর তুলনায় ডাক্তার কখনও কখনও কম পড়ে যায়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, “সকল শিফটে ডাক্তার নিশ্চিত করার চেষ্টা করি। তবে চাপ বেশি থাকলে একটু সময় লাগে। বেশি জটিলতা হলে দ্রুত রেফার করা হয়।”

একজন বৃদ্ধা কাঁঠালডাঙ্গী থেকে ছেলেকে নিয়ে এসেছেন। “রাত ২টায় গ্যাসের সমস্যা শুরু হয়। ওষুধ খাওয়ালেও কাজ হচ্ছিল না। জরুরি বিভাগে নিয়ে আসতেই স্যালাইন আর ইনজেকশন দিয়ে ঠিক করে ফেলল। ভালো ব্যবহার করেছে।”

তবে কেউ কেউ অভিযোগ করেন, “ওষুধ কিনতে হয়েছে বাইরে থেকে। টেস্ট করাতেও বাইরের ল্যাবে যেতে বলে।”

ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতাল জেলার সবচেয়ে বড় সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র। রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, কিন্তু জনবল ও সরঞ্জামের হার সেভাবে বাড়েনি। স্থানীয়রা মনে করেন, নতুন যন্ত্রপাতি ও আরও চিকিৎসক দিলে অনেক উন্নতি সম্ভব। জরুরি বিভাগে একজন মেডিকেল অফিসার সার্বক্ষণিক থাকলে রোগীদের মধ্যে ভরসা আরও বাড়বে।

ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগ যেন বেঁচে থাকার এক যুদ্ধে সামনে থেকে লড়ে যাওয়া সৈনিকদের ঘর। সীমাবদ্ধতার মাঝেও চিকিৎসক-নার্সদের নীরব লড়াই চলছে প্রতিদিন। সামান্য সাপোর্ট পেলেই এই হাসপাতাল হতে পারে জেলার মানুষের জন্য আরও বড় আশ্রয়।

মিমিয়া

×