
সুনামগঞ্জের ছাতক, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর ও মধ্যনগর সীমান্তজুড়ে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে মাদক পাচার। দিনের আলো হোক কিংবা রাতের অন্ধকার, কোনোটিই যেন বাধা নয় ভারত থেকে আসা মাদকের স্রোত ঠেকাতে।
সীমান্ত পেরিয়ে আসা এসব মাদক এখন গ্রাস করছে সুনামগঞ্জের তরুণ প্রজন্মকে। একদিকে প্রশাসনের অভিযান, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অভিভাবকদের উৎকণ্ঠা, সার্বিক পরিস্থিতি অশনিসংকেতই দিচ্ছে।
সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকে পড়া এসব মাদকের মধ্যে রয়েছে ভারতীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ২২ হাজার ৯৯৫ বোতল মদ, ৭০০ বোতল বিয়ার, ২১ দশমিক ৫ কেজি গাঁজা, ৪৪ হাজার পিস ইয়াবা, সাড়ে ৪ লিটার চোলাই মদ এবং বিপুল পরিমাণ ভারতীয় বিড়ি। সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে জব্দকৃত এসব অবৈধ মাদকের বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা।
বিজিবি জানায়, প্রায় ১২০ কিলোমিটারজুড়ে সুনামগঞ্জ সীমান্তে নিয়মিত টহল ও অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে চোরাকারবারিরা নানা কৌশলে বিজিবির নজর এড়িয়ে অব্যাহত রেখেছে মাদকের চালান। সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত হচ্ছে সীমান্তবর্তী এলাকার কিশোর ও তরুণ প্রজন্ম।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাসিন্দা ফরিদ মিয়া বলেন, “সন্ধ্যার পর অনেক জায়গায় শুরু হয় মাদকসেবীদের উৎপাত। মাতালদের অশোভন আচরণে পথচারীরা যেমন ভোগান্তিতে পড়েন, তেমনি বিপাকে পড়েন স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরাও।”
তাহিরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকা টেকেরঘাটের বাসিন্দা সুলতান আহমদ বলেন, “ভারতীয় নেশাদ্রব্য সহজেই পাচ্ছে তরুণরা। যার কারণে এলাকায় মাদকসেবীদের উৎপাত দিন দিন বেড়েই চলেছে।”
সুনামগঞ্জ-২৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল একেএম জাকারিয়া কাদির বলেন, “শুধু মাদক জব্দ নয়, আমরা স্থানীয়দের সচেতন করতেও নিয়মিত কাজ করছি। সীমান্তে আলোকচিত্র প্রদর্শনী, মাদকবিরোধী আলোচনা সভা এবং সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হচ্ছে। তবুও সমাজ থেকে মাদক নির্মূলে আমাদের আরও সমন্বিত প্রয়াস প্রয়োজন।”
অভিভাবক ও সমাজকর্মীরা মনে করেন, সীমান্তে মাদক-সন্ত্রাস বন্ধ করতে হলে কেবল আইন প্রয়োগ যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রশাসনিক জবাবদিহিতা এবং সর্বোপরি স্থানীয় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ। তা না হলে সুনামগঞ্জের তরুণ সমাজ ধ্বংসের কিনারায় পৌঁছাবে, আর সেই দায় কোনোভাবেই এড়ানো যাবে না।
মিমিয়া