ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৭ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

ইঞ্জিনের ত্রুটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বিঘ্নিত, বেপরোয়া লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জনগণ

নিজস্ব সংবাদদাতা, হাতিয়া, নোয়াখালী

প্রকাশিত: ১৫:৫৯, ২৭ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৫:৫৯, ২৭ জুন ২০২৫

ইঞ্জিনের ত্রুটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বিঘ্নিত, বেপরোয়া লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জনগণ

ছবি: জনকণ্ঠ

নোয়াখালীর হাতিয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ইঞ্জিনের ত্রুটি দেখা দেওয়ায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবারহ বিঘ্নিত হচ্ছে। এইচএসসি পরীক্ষার এই সময়েও লোডশেডিং দিতে হচ্ছে বারবার। এতে ক্ষুদ্ধ গ্রাহকরা দুষছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বিভাগকে। কিন্তু উৎপাদনে সরকারি এই বিভাগের তদরাকির কোন সুযোগ নেই। যা রক্ষণাবেক্ষণ করছে দেশ এনার্জি নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
 
বৃহস্পতিবার ( ২৬ জুন) সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ ছিল। মাঝেমধ্যে এলেও ১০-১৫ মিনিট পর আবার বিদ্যুৎ চলে যায়। এটি হাতিয়া উপজেলা সদর ওচখালীর চিত্র। আবহাওয়া অনেকটা ভালো, ঝড়-তুফান নেই বললে চলে। বজ্রপাতের কোন আলামত নেই, তবুও বিদ্যুৎ সরবারহ কেন বন্ধ হচ্ছে দেখতে অফিসে যান স্থানীয় কয়েকজন। তাতে দেখা যায় নির্বাহী প্রকৌশলীর অফিসটিও অন্ধকারে পড়ে আছে। খোঁজ নিয়ে দেখা যায় ইঞ্জিনের ত্রুটির কারনে মূল লাইনে বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ থাকায় পুরো উপজেলায় অন্ধাকার নেমে এসেছে।
 
হাতিয়া দ্বীপে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবারহ নিশ্চিত করতে সরকার ১৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে হরেন্দ্র মার্কেট এলাকায় ১৬ একর জায়গায় এটি নির্মাণ করা হয়। দুই ধাপে বরাদ্দ দেওয়া ৬৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ প্রকল্পের নাম ‘হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপ শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন। সরকারি এই অর্থে শুধু সরবারহের কাজে ব্যয় করা হয়েছে। উৎপাদনে চুক্তি করা হয়েছে দেশ এনার্জি নামে একটি প্রাইভেট কোম্পানির সাথে। কিন্তু নতুন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির কাজ শেষ হতে না হতেই ত্রুটি দেখা দেওয়ায় হতাশা ব্যাক্ত করেছেন গ্রাহকরা।
 
হাতিয়া পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্ধা মো: ইব্রাহীম (৫০) জানান, নতুন এই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি পেয়ে এই দ্বীপের বাসিন্দারা অনেক খুশি হয়েছে। হঠাৎ এখানে কালো মেঘের ছায়া দেখা দিয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার ৫ দিন আগ থেকে লোডশেডিং বেপোরোয়া। সকাল-সন্ধ্যা কিংবা গভীর রাত সবসময় লোডশেডিংয়ে পড়তে হচ্ছে। এতে পরীক্ষার মধ্যে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।
 
তিনি আরো জানান, খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে ইঞ্জিনের ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎ সরবারহ সঠিকভাবে দেওয়া যাচ্ছে না। একসময় মানুষ মনে করতো বিদ্যুতের কর্মকর্তারা সরবারহ বন্ধ রেখে জ্বালানী তেল বাঁচিয়ে তা বিক্রি করে অবৈধ টাকা উপার্জন করতো। এখন সুযোগ নেই। কারণ উৎপাদনের বিষয়টা সম্পূর্ণ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিকানায়।
 
২০২১ সালে শুরু হওয়া এই বিদ্যুৎ উপৎপাদন কেন্দ্রটি ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে বিদ্যুৎ সরবারহ শুরু করে। এতে মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা কাজ করে। হঠাৎ করে বেপরোয়া লোডশেডিংয়ে অনেকে সোশাল মিডিয়ায় ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করতে দেখা যায়। কেউ কেউ এই বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজনকে অভিযুক্ত করছেন। আবার অনেকে প্রকৃত সত্য উদঘাটন করে সমাধানের সুপারিশ করছেন।
 
এই বিষয়ে হাতিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমান বলেন, গ্রাহকরা এখনো ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে আমাদেরকে অভিযুক্ত করেন। যা মোটেও সঠিক নয়। উৎপাদন সস্পূর্ণ দেশ এনার্জি কোম্পানির বিষয়। আমরা তাদের কাছে পুরোপুরি জিম্মি। তারা তাদের মতো করে ইঞ্জিন বন্ধ করে আবার চালু করে। এখন এইচদএসসি পরীক্ষা চলছে। সন্ধ্যার সময় বিদ্যুৎ না পেলে গ্রাহক আমাদেরকে গালি দেয়। গত কয়েকদিন ইঞ্জিনের ত্রুটির কথা বলে তারা বার বার বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ রেখেছে। যাতে মানুষজন আমাদেরকে অপমানিত করে। অনেকে ক্ষুদ্ধ হয়ে আমাদের অফিসে আসেন, তারা আমাদের অফিসটিও অন্ধকারে দেখে শান্ত হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন প্রকল্পের শুরুতে দেশ এনার্জির সাথে ৫ হাজার কিলোওয়াটের চুক্তি করা হয়েছে। তখন গ্রাহকের চাহিদা ছিল মাত্র একহাজার থেকয়একহাজার পাঁচশত কিলোওয়াটের। অথচ তারা সরকার থেকে ৫ হাজার কিলোওয়াটের চার্জ নিতেন। এখন গ্রাহক বেড়েছে। চাহিদা ৫ হাজার কিলোওয়াটের চেয়ে বেশি। এতে তারা অতিরিক্ত লোড এর কথা বলে বারবার ইঞ্জিন বন্ধ করছে।
 
এই বিষয়ে দেশ এনার্জি কোম্পানির হাতিয়া বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা মাহফুজ রহমান বলেন, ইঞ্জিনের ত্রুটি থাকতেই পারে। গত কয়েকদিন আমাদের জ্বালানী তেলের সংকট ছিল। এখন জ্বালানী তেল এসেছে। এছাড়া একটি ইঞ্জিনের ত্রুটি ধরা পড়েছে। যা দু-একদিনের মধ্যে মেরামত হয়ে যাবে। তবে লোডশেডিং সম্পূর্ণ তাদের কারণে হয়না বলে জানান তিনি।

আবির

×