ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২

ওসি-এসআই প্রত্যাহার, প্রশ্নপত্র কাণ্ডে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন!

মোঃ রিজভী আহম্মেদ রিজোয়ান, নওগাঁ

প্রকাশিত: ২১:১০, ২২ জুন ২০২৫

ওসি-এসআই প্রত্যাহার, প্রশ্নপত্র কাণ্ডে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন!

ছবি: জনকণ্ঠ

নওগাঁর ধামইরহাট থানায় রক্ষিত প্রশ্নপত্রের ট্রাঙ্ক খোলা অবস্থায় পাওয়ার ঘটনায় ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) আরও চার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করেছে জেলা পুলিশ।

নওগাঁর পত্নীতলা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. শরিফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ধামইরহাট থানা থেকে প্রত্যাহার হওয়া পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যরা হলেন, ধামইরহাট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মালেক, পুলিশ সদস্য মো. রেজুয়ানুর রহমান, আতিকুর রহমান ও মেহেদী হাসান। এ ঘটনায় এর আগে আরও দুই পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়। তাঁরা হলেন—ধামইরহাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাকিরুল ইসলাম ও পুলিশ সদস্য ইকবাল হোসেন। থানায় রক্ষিত প্রশ্নপত্রের ট্রাঙ্ক খোলা পাওয়ার ঘটনায় ধামইরহাট থেকে মোট ছয় পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহারের ঘটনা ঘটলো।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরিফুল ইসলাম বলেন, আসন্ন এইচএসসি প্রশ্নপত্রের বেশ কয়েকটি বাক্স ধামইরহাট থানা হেফাজতে রাখা হয়। প্রশ্নপত্রের বাক্সগুলো থানার মালখানা কক্ষে রাখার কথা ছিল। কিন্তু কয়েকটি বাক্স ধামইরহাট থানায় আসামি রাখার হাজতখানা ঘরে রাখা হয়েছিল। ওই হাজতখানায় গত মঙ্গলবার (১৭ জুন) রাতে মাদক মামলার এক আসামিকে রাখা হয়। গভীর রাতে ওই আসামি ট্রাঙ্কের সিলগালা উঠিয়ে তালা খুলে ফেলে। ট্রাঙ্কের ভেতরে প্যাকেটবন্দি অবস্থায় থাকা প্রশ্নপত্র বের করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে হাজত ঘরের মধ্যে। কয়েকটি প্রশ্নপত্র ছিঁড়েও ফেলে। পরদিন সকালে থানার কর্তব্যরত অফিসারের নজরে আসে বিষয়টি।

ঘটনা জানার পর ওই দিন থানার লকআপ বা হাজত পাহারার দায়িত্বে নিয়োজিত একজন এসআই ও একজন কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করে নওগাঁ পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়। পরবর্তীতে এ ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে শনিবার ধামইরহাট থানার ওসিসহ আরও চার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করে নওগাঁ পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্তে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য কিংবা অন্য কারও বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার প্রমাণ মিললে তাঁদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, থানা হাজতে থাকা অবস্থায় যে ব্যক্তি প্রশ্নপত্রের ট্রাঙ্ক খোলেন, সেই ব্যক্তিকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ধামইরহাট থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। সরকারি সম্পদ বিনষ্টের অভিযোগে ওই আসামির বিরুদ্ধে নতুন একটি মামলা করেছে ধামইরহাট থানা পুলিশ।

গত বুধবার (১৮ জুন) আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এদিকে থানায় রক্ষিত প্রশ্নপত্রের ট্রাঙ্ক খোলা পাওয়ার ঘটনায় রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষার ইতিহাস দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্র বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড রাজশাহী।

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আ.ন.ম মোফাখখারুল ইসলাম বলেন, ইতিহাস বিষয়ের যে সেটটি থানায় নষ্ট হয়েছে, সেটিতে আর পরীক্ষা নেওয়া হবে না। রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় আগামী ১৯ জুলাই বিকল্প সেটে পরীক্ষা নেওয়া হবে।

নওগাঁ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাতে নওগাঁর ধামইরহাট থানায় রক্ষিত প্রশ্নপত্রের ট্রাঙ্ক খোলা অবস্থায় পাওয়ার পর নওগাঁ জেলা পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সাদিয়া আফরিন জানান, ওই প্যাকেটে ৫০টি প্রশ্নপত্র ছিল। সব কটিই উদ্ধার করা হয়েছে। কয়েকটি ছেঁড়া থাকলেও কোনো প্রশ্নপত্র হারিয়ে যায়নি।

শহীদ

×