ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

যশোরে হাসপাতালের টয়লেটে সন্তান জন্ম দিলেন ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা নারী, ঘটনা নিয়ে চাঞ্চল্য

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস।

প্রকাশিত: ২১:৩৯, ২০ জুন ২০২৫; আপডেট: ২১:৩৯, ২০ জুন ২০২৫

যশোরে হাসপাতালের টয়লেটে সন্তান জন্ম দিলেন ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা নারী, ঘটনা নিয়ে চাঞ্চল্য

জ্বর ও পেটে ব্যাথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৯ মাসের এক অন্তঃসত্ত্বা নারী। ভর্তি হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হাসপাতালের টয়লেটে যান। টয়লেই ভিতরেই ওই নারী কোনো ধরনের চিকিৎসা সহায়তা ছাড়াই সন্তান প্রসব করেন। শুধু বাচ্চা প্রসবই নয়, এরপর নিজের শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করেন সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া ছেলে শিশুটিকে। এরপর নিজেই টয়লেটের ওয়াশরুমে থাকা বদনার পানি দিয়ে নবজাতকের শরীর পরিষ্কার করছিলেন। এসময় শিশুটি কান্নার আওয়াজ শুনে কর্তব্যরত নার্স নবজাতকটি ও প্রসূতিকে উদ্ধার করেন। 

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) মধ্যরাতে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে। বিষয়টি শুক্রবার (২০ জুন) বিকালে জানাজানি হলে তোড়পাড়ের সৃষ্টি হয়। প্রসূতি ওই নারীর নাম রত্না বিশ্বাস (৩৬)। তিনি বাঘারপাড়া উপজেলার জোহরপুর ইউনিয়নের খালিয়া গ্রামের বাসিন্দা রমেশ বিশ্বাসের স্ত্রী।

হাসপাতাল ও প্রসূতি নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রত্মা ও রমেশ বিশ্বাস দম্পতির ঘরে ১০ বছর বয়সী এক মেয়ে ও আড়াই বছর বয়সী এক ছেলে সন্তান রয়েছে। এর মধ্যে আবারও রত্না অন্তঃসত্ত্বা হন। বৃহস্পতিবার রাত ১১ টার দিকে জ্বর ও পেটে ব্যাথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। তবে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের কাছে রত্না ও তার পরিবার ৯ মাস আন্তসত্বার তথ্য গোপন করে। সে কারণে চিকিৎসকেরা তাকে গাইনি ওয়ার্ডে না পাঠিয়ে সাধারণ মেডিসিন বিভাগে রেফার্ড করে। সেখানে মেঝের বিছানাতে চিকিৎসা চলছিলো। হঠাৎ রাত আড়াইটার দিকে তার প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে ওয়ার্ডের টয়লেটে যান।

টয়লেটের ভিতরেই তিনি এক ছেলে সন্তান প্রসব করেন। তখনও কাউকে ডাক দেয়নি প্রসূতি নারী। এরপর ভূমিষ্ঠ হওয়া নবজাতকের শরীরে ময়লা পরিস্কারের জন্য তিনি নিজেই টয়লেটের ওয়াশরুমে বদনার পানি দিয়ে পরিস্কার করছিলেন। নবজাতকের শরীরে পানি দিতেই কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে। তখই ওয়ার্ডে দায়িত্বে থাকা নার্স, আয়া ও অন্যরোগীর স্বজনেরা টয়লেটের ভিতরে যান। পরে নার্সরা নবজাতককে উদ্ধার করে শিশু বিভাগে ও প্রসূতি নারীকে গাইনি লেবার ওয়ার্ডে রেফার্ড করেন। প্রসূতি নারীর লেবার ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলছে আর নবজাতকটিকে শিশু ওয়ার্ডের অভারভেশনে রাখা হয়েছে।

চিকিৎসকেরা বলছে, তারা দুজনেই এখন শঙ্কামুক্ত। সন্ধ্যায় হাসপাতাললের শিশু বিভাগে যেয়ে দেখা যায়, অভজারভেশন ওয়ার্ডে শিশুটিকে হাসপাতালের নার্সিং ইনস্টিটিউটের দুই নার্সিং শিক্ষার্থী দেখভাল করছেন। ফুটফুটে নবজাতকটি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দেখছেন। স্বাভাবিক বাচ্চাদের মতো পা উঠিয়ে খেলাও করছে।

দায়িত্বে থাকা নার্স রিনা সরকার বলেন, ‘বাচ্চাটির ওজন আড়াই কেজি। যা স্বাভাবিক ও সুস্থ্য বাচ্চা। সুস্থ রয়েছেন। তার মা এখনো দেখতে আসেনি। কিন্তু হাসপাতালে ঘটনাটি আলোচিত হওয়াতে অনেকেই খোঁজ খবর নিতে আসছেন। এই নার্সের ভাষ্য, বাচ্চাটি নিতে অনেকেই এখন আগ্রহ দেখাচ্ছে। অনেক নার্সের বাচ্চা নেই; তারাও বাচ্চাটি দত্তক নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রাহ দেখাচ্ছে।’ এদিকে তথ্য গোপন করে হাসপাতালে ভর্তি, টয়লেটে বাচ্চা প্রসব করলেও কাউকে না ডাকা এসব নিয়ে নানা প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে।

হাসপাতালের কেউ কেউ বলছেন, আগে দুটি বাচ্চা থাকার পরেও এই বাচ্চাটি নিতে চাইছিলেন না হতদরিদ্র এই পরিবার। তাই গর্ভবর্তী থাকলেও হাসপাতালে ভর্তি হন সাধারণ রোগী হিসাবে। পরে টয়লেটে বাচ্চা প্রসব করে বাচ্চাটিকে পানিতে শ্বাসরোধ করে হত্যা চেষ্টা করছিলো বলেও ওয়ার্ডে গুঞ্জন উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে আগামীকাল শনিবার তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ডের মেঝেতে চিকিৎসা চলছে প্রসূতি রত্মা বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘কীভাবে সন্তান প্রসব হলো বুঝতে পারছি না। তবে তিনি গর্ভবতী সেটা সকলেই জানতো। তিনি বলেন, ‘নিজ সন্তানকে কেন মারতে চাইবো।’

রত্নার স্বামী মাছ বিক্রেতা রমেশ বিশ্বাস জানান, রত্না দীর্ঘদিন ধরেই মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। বিষয়টি নিয়ে পরিবার থেকে চিকিৎসার চেষ্টা চলছিল। 

যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হুসাইন শাফায়েত বলেন, ‘ঘটনাটি নিয়ে নানা রহস্যের জন্ম দিয়েছে। তথ্য গোপন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তারপরে টয়লেটে সন্তান জন্মদান এসব নিয়ে তদন্ত চলছে। প্রসূতি নারীটি মানসিকভাবে অসুস্থ। শনিবার হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের দায়িত্বরতদের সাথে বসা হবে। তখন বিষয়টি পরিস্কার হবে। তিনি বলেন, বাচ্চাটিকে দেখভালে একজন সবসময় দায়িত্বে রয়েছে। যাতে কেউ চুরি করতে না পারে। শিশুটি সুস্থ রয়েছে।

রিফাত

আরো পড়ুন  

×