
ছবি- দৈনিক জনকণ্ঠ
চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৬নং গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নের খাজুরিয়া বাজার—এই অঞ্চলের অন্যতম বড়, প্রাণবন্ত ও গুরুত্বপূর্ণ বাজার। ৬নং গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নের ৮টি গ্রামের মানুষ ছাড়াও আশপাশের ৭নং পাইকপাড়া, ৫নং গুপ্টি ইউনিয়ন এবং পার্শ্ববর্তী লক্ষীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার রাঘবপুর, সোন্দড়া গ্রামসহ অসংখ্য এলাকার মানুষজন এই বাজারের ওপর নির্ভরশীল। সপ্তাহের প্রতিটি দিন এখানে প্রায় তিন শতাধিক স্থায়ী দোকান খোলা থাকে, আর সোমবার ও শুক্রবার বসে বৃহৎ সাপ্তাহিক হাট, যেখানে হাজারো মানুষের সমাগম ঘটে।
শুধু কেনাকাটা নয়—খাজুরিয়া বাজারকে ঘিরে গড়ে উঠেছে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক, শিক্ষা ও প্রশাসনিক অবকাঠামো। এখানে রয়েছে দুটি মাধ্যমিক এবং ৩-৪টি সরকারি বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, ভূমি অফিস, ছোট বড় ৪-৫টি ব্যাংক, একাধিক এনজিও, ক্লিনিক, মসজিদ, মন্দিরসহ অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। বাজারের উপর দিয়েই গেছে ব্যস্ততম ফরিদগঞ্জ-ব্রহ্মপাড়া সড়ক, যার ওপর নির্ভর করে পূর্বাঞ্চলের হাজারো মানুষের যাতায়াত। একই সঙ্গে এখানে রয়েছে এলাকার সবচেয়ে বড় সিএনজি স্ট্যান্ড, যেখান থেকে প্রতিদিন শত শত যানবাহন ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদর, চাঁদপুর, রামগঞ্জ, হাজীগঞ্জসহ বিভিন্ন গন্তব্যে ছুটে চলে। যে কারনে দিন রাত খাজুরিয়া বাজারের পশ্চিম মাথায় অবস্থিত সিএনজি স্টান্ড এলাকাটি জমজমাট থাকে।
এই বাজারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা ও সামাজিক কর্মকাণ্ড। অথচ অত্যন্ত দুঃখজনক ও লজ্জাজনকভাবে বলতে হয়—এত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মানুষের ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবা, বিশেষ করে পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা চরম অব্যবস্থাপনার শিকার।
খাজুরিয়া বাজারের সিএনজি স্টান্ড সংলগ্ন দুইটি পাবলিক টয়লেট আজ বছরের পর বছর ধরে অচল, নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় পড়ে আছে। ভেতরে ঢোকা দূরের কথা, বাইরের পরিবেশও এতোটাই নোংরা যে কারও পক্ষে স্বাভাবিকভাবে সেখানে যাওয়া সম্ভব নয়। দরজার নিচে প্রায় এক ফুট ফাঁকা, ওপরে ছিদ্র আর ফাটল। টয়লেটের ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করার কোনো ব্যবস্থা নেই। প্রতিদিন বাজারে আসা ব্যবসায়ী, সিএনজি চালক, যাত্রী, পথচারী—সবাই এই ন্যূনতম প্রয়োজনীয়তার চরম সংকটে ভুগছেন।
সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ছেন নারী, শিশু ও বয়স্ক মানুষজন। টয়লেটের প্রয়োজন হলে অনেকেই বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হন। আবার অনেকে লজ্জা-অপ্রস্তুতিতে রাস্তার আশপাশ খুঁজতে থাকেন, যা জনসমক্ষে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে। এতে নারী ও শিশুর মানসিক নিরাপত্তা, সামাজিক মর্যাদা ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি মারাত্মকভাবে প্রশ্নের মুখে পড়ে।
এই টয়লেটদুটির আশেপাশে পড়ে থাকে ময়লার স্তূপ, দুর্গন্ধে টেকা দায়, নেই আলো আলোর ব্যবস্থা। নির্জন একটি স্থানে হওয়ায় রাতে বা সন্ধ্যায় যে কারো পক্ষে এখানে যাওয়া অসম্ভব। এমনকি টয়লেট পর্যন্ত যাওয়ার সরু রাস্তা পর্যন্ত ময়লা-আবর্জনায় ভরা।
এভাবে চলতে থাকলে শুধু ভোগান্তিই নয়—গুরুত্বপূর্ণ এই বাজার থেকে ছড়াতে পারে সংক্রামক ব্যাধিও। পানিবাহিত রোগ, ডায়রিয়া, টাইফয়েড, হেপাটাইটিসের ঝুঁকি বাড়ছে প্রতিনিয়ত। খোলা বাজারের খাদ্যদ্রব্যের সাথেও এই স্বাস্থ্যঝুঁকি ছড়াতে পারে যেকোনো সময়। এটা শুধু অব্যবস্থাপনার নমুনা নয়—এটা জনস্বাস্থ্য হুমকির দিকেও ইঙ্গিত করে।
দুঃখজনক হলেও সত্য, দীর্ঘদিন ধরে বাজার ব্যবসায়ী কমিটির নির্বাচন হয়নি। ফলে ড্রেনেজ, টয়লেট, সড়কবাতি, নিরাপত্তাসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় স্থবিরতা নেমে এসেছে। শুধু স্থানীয় বিট অফিসারের তত্ত্বাবধানে রাতের গার্ড চালু রয়েছে। অথচ বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি সক্রিয় থাকলে এই টয়লেট সমস্যার সমাধান এতদিনে সম্ভব হতো।
আমার সুস্পষ্ট ও বাস্তবসম্মত প্রস্তাব:
১. দুইটি পাবলিক টয়লেটে নতুন দরজা স্থাপন, যাতে ভিতর থেকে নিরাপদে বন্ধ করা যায়।
২. ভিতরের দেয়াল মেরামত, টাইলস বা রং করা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যবস্থা।
৩. কাছাকাছি দোকান থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে টয়লেটের ভিতরে আলো বসানো এবং সামনে, টিউবওয়েলের পাশে ও রাস্তার মাথায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা।
৪. টয়লেটে যাওয়ার পথ নিয়মিত ময়লা-আবর্জনামুক্ত রাখা ও প্রয়োজনীয় ডাস্টবিন স্থাপন।
৫. একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী দিয়ে সপ্তাহে অন্তত দুইজন পরিষ্কারের ব্যবস্থা করা।
এই ন্যূনতম নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় সরকার ও বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির নৈতিক ও আইনি দায়িত্ব। মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও সামাজিক মর্যাদার প্রশ্নে এই অবহেলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বাজারের হাজারো সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষা—একটি নিরাপদ, পরিচ্ছন্ন ও ব্যবহারোপযোগী পাবলিক টয়লেট।
আমি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে এই অস্বাস্থ্যকর অব্যবস্থার তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
নোভা