
ছবি: জনকণ্ঠ
নীলফামারীর ডোমার উপজেলার সঙ্গে দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও জেলার সংযোগ স্থাপনকারী গুরুত্বপূর্ণ ধরনীগঞ্জ (হংশরাজ) এলাকার কলমদার নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি এখন লক্ষাধিক মানুষের জন্য এক চরম দুর্ভোগের কারণ। পাঁচ বছর আগে বর্ষায় দেবে যাওয়া এই সেতুটি হরিণচড়া ও সোনারায় ইউনিয়নের ১৭টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দা তো বটেই, এই রুটের সব ব্যবহারকারীকে সীমাহীন কষ্ট দিচ্ছে। জোড়াতালির ওপর দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে পারাপার, যা প্রতিনিয়ত জন্ম দিচ্ছে ছোট-বড় দুর্ঘটনার।
ধরনীগঞ্জ (হংশরাজ) এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এক করুণ চিত্র। কলমদার নদীর খননকাজের ফলে গত বর্ষায় পানির তোড়ে সেতুর নিচের মাটি সরে গেছে। এর ফলস্বরূপ সেতুর মাঝের অংশ দেবে গিয়ে রীতিমতো ভেঙে পড়েছে। বর্তমানে সেতুটি এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে, এর ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়াও নিরাপদ নয়। অথচ, প্রতিদিন শত শত ট্রাক, ট্রাক্টর, অ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রোবাস, রিকশা ভ্যান, অটোবাইক, সিএনজিসহ বিভিন্ন যান জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই ভাঙা সেতু দিয়েই চলাচল করছে।
এই বিপজ্জনক পরিস্থিতি এড়াতে অনেক চালক ও পথচারী ১০-১৫ কিলোমিটার পথ ঘুরে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছেন। এতে শুধু তাদের অতিরিক্ত অর্থ ও সময়ের অপচয় হচ্ছে না, পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতির গতিও শ্লথ হয়ে পড়ছে। জরুরি রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সগুলোও এই পথে চরম বিপাকে পড়ছে, যার ফলে চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
ধরনীগঞ্জ (হংশরাজ) এলাকার এই সেতুটি আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা নির্মাণ করেছিল। দীর্ঘ প্রায় চার দশক ধরে এটি ডোমার উপজেলার সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দুই জেলার মানুষের যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হিসেবে কাজ করে আসছিল। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেতুটি আজ কার্যকারিতা হারিয়ে একটি মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।
হরিণচড়া ইউনিয়নের ধরনীগঞ্জ (হংশরাজ) গ্রামের বাসিন্দা শরীফ খাঁন জানান, "গত বর্ষায় ব্রিজটি দেবে গিয়ে ভেঙে যায়। এতে হরিণচড়া ও সোনারায়সহ আশেপাশের এলাকার পথচারীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ায় ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। আমরা চাই দ্রুত ব্রিজটি সংস্কার হোক, যাতে সকলে নিরাপদে চলাচল করতে পারে।" তার কথায় এলাকার মানুষের চাপা ক্ষোভ ও হতাশা স্পষ্ট।
সেতুটি দ্রুত সংস্কার বা পুনর্নির্মাণের বিষয়ে স্থানীয়দের দাবি দীর্ঘদিনের হলেও, উপজেলা প্রকৌশলীদের বক্তব্য তাদের হতাশ করেছে। ডোমার উপজেলা প্রকৌশলী মো. ফিরোজ আলম জনকণ্ঠকে জানান, কলমদার নদীর (ধরনীগঞ্জ) উপর নির্মিত সেতু ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবগত করেছেন। তিনি আরও বলেন, "বিগত দুই বছর ধরে চেষ্টা চলছে বাজেট না থাকায় সেই সময়ে কাজ করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে ব্রিজের ফাইলটি ডিজাইন সেকশনে আছে। অনুমোদন হলে কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।"
উপজেলা প্রকৌশলীর এই বক্তব্য স্থানীয়দের মাঝে নতুন করে হতাশার জন্ম দিয়েছে। তাদের প্রশ্ন, একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতুর বেহাল দশা জেনেও কি শুধু বরাদ্দ আর ফাইল অনুমোদনের অপেক্ষায় বসে থাকবে স্থানীয় প্রশাসন? এই আমলাতান্ত্রিক জটিলতা যদি দ্রুত সমাধান না হয়, তাহলে এই অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ দীর্ঘায়িত হবে এবং তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ধরনীগঞ্জ (হংশরাজ) এলাকার এই বেহাল সেতুটি ডোমার, দিনাজপুর এবং ঠাকুরগাঁও জেলার লাখো মানুষের কাছে এক দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। যাতায়াত ব্যবস্থার এই অচলাবস্থা দ্রুত সমাধান করা না গেলে কৃষি পণ্য পরিবহণ থেকে শুরু করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা - সবকিছুতেই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী এখন স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। একটি নতুন সেতু বা দ্রুত সংস্কারই পারে এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রায় স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে এবং অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে। সকলের দৃষ্টি এখন কর্তৃপক্ষের দিকে, একটি মানবিক সমাধানই পারে লাখো মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে।
সাব্বির