
ছবি: সংগৃহীত
ইসরায়েল ইরানের গভীর পাহাড় খোদাই করা পরমাণু স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘ফোরদো ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্ল্যান্ট’ ধ্বংস করতে চায়, যার জন্য তারা চাইছে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে শক্তিশালী ‘বান্কার বাস্টার’ বোমা GBU-57। এ বোমাটি শুধুমাত্র মার্কিন B-2 স্টিলথ বোমার দিয়ে ফেলা সম্ভব, যা ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের এবং ২০০ ফুট গভীরে পৌঁছে বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম।
হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, "পরবর্তী সপ্তাহটি গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে।" তিনি জানান, ইরানি কর্মকর্তারা আলোচনায় আগ্রহী, কিন্তু এখন আলোচনার সময় প্রায় শেষ হয়ে এসেছে।
ফোরদো স্থাপনাটি তেহরানের দক্ষিণ-পশ্চিমে পাহাড়ের গা ঘেঁষে নির্মিত, যা প্রায় ৮০-৯০ মিটার গভীরে অবস্থিত। ২০০৯ সালে এটি কার্যকর হয় এবং বর্তমানে ইরানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে।
২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি অনুযায়ী এখানে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করার কথা থাকলেও ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পর ইরান আবার কার্যক্রম শুরু করে।
ইসরায়েলের কাছে মার্কিন বানানো BLU-109 এবং GBU-28 বোমা থাকলেও সেগুলোর গভীরে প্রবেশের ক্ষমতা সীমিত। ২০২৪ সালে এ ধরনের বোমা ব্যবহার করে ইসরায়েল বৈরুতে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যা করলেও, ফোরদো স্থাপনার মতো গভীর ও সুরক্ষিত লক্ষ্যে এগুলো কার্যকর নয়।
ইসরায়েলের যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ইয়েচিয়েল লাইটার বলেন, “এই পুরো অভিযান তখনই সফল হবে, যখন ফোরদো পুরোপুরি ধ্বংস হবে।”
ইসরায়েল এরই মধ্যে ইরানের নেতৃস্থানীয় পরমাণু স্থাপনাগুলোর মধ্যে নাটানজ এবং ইসফাহান-এ হামলা চালিয়েছে। এতে করে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা এবং সম্ভবত আন্ডারগ্রাউন্ড ল্যাবে ক্ষতি হয়েছে।
জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা (IAEA)-র প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেন, “বর্তমানে রেডিয়েশন মাত্রা স্বাভাবিক থাকলেও সামরিক উত্তেজনা বাড়লে তা বিপজ্জনকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে।”
ফোরদো স্থাপনাটি ইরানের গুরুত্বপূর্ণ শহর কোম-এর নিকটবর্তী হওয়ায়, এখানে একটি সফল হামলার ফলে ১৪ লাখ মানুষের শহরে বিকিরণ বা রাসায়নিক দূষণের আশঙ্কা রয়েছে।
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার উত্তেজনা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে, যেখানে মার্কিন GBU-57 বোমার সম্ভাব্য ব্যবহার মধ্যপ্রাচ্যে এক ভয়াবহ যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র এই মুহূর্তে সরাসরি হামলায় অংশ নেবে কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়, তবে ট্রাম্পের ভাষ্য অনুযায়ী “সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।”
সূত্র: আল জাজিরা
শিহাব