
আমাদের দেশে যতগুলো উপকারি ফল জন্মে তারমধ্যে কাঁঠালের নাম সবার ওপরের দিকে রয়েছে। কাঁঠাল বাংলাদেশে জন্মানো এমন একটি ফল যাতে রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ, ওষুধিগুণ ও উপকারিতা। কিছু মানুষ কাঁঠালের প্রতি নাকউঁচু ভাব দেখালেও সংখ্যার বিচারে জাতীয় ফল কাঁঠাল এখনো জনপ্রিয়।
শতভাগ ভোগ্য হলেও নাগরিকদের কাছে কাঁঠালের মানসম্মান নিয়ে টানাটানি। এমনকি এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়ও কম ট্রল হয় না। কয়েক বছর ধরে ট্রলের শিকার হয়ে কাঁঠালপ্রেমীরা তো আর কাঁঠাল খাওয়ার কথা স্বীকারই করতে চাইছেন না।
কাঁঠাল (বৈজ্ঞানিক নাম Artocarpus heterophyllus) মোরাসিয়া পরিবারের (ডুমুর বা পাউরুটি পরিবারের প্রজাতি) আর্টোকার্পাস গোত্রের একটি ফল। কাঁঠাল গাছ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় নিম্নভূমিতে ভাল উপযোগী এবং বিশ্বের ক্রান্তীয় অঞ্চলে ব্যাপকভাবে চাষ হয়। এটি সমস্ত গাছের ফলের মধ্যে বৃহত্তম ফল।
অনেকে বলেন, কাঁঠালের সর্বাংশ ভোগ্য এবং গরিবের আকালের সহায়। এ কারণেই জাতীয় ফলের মর্যাদা। তার মানে, জনপ্রিয়তার বিচারে নয়, গরিবের কথা ভেবেই মর্যাদা পেয়েছে কাঁঠাল। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে, এই ফল আর জাতে উঠতে পারল না!
একসময়ে গ্রীষ্মকালে বহু মানুষের ক্ষুধা মেটাত কাঁঠাল। গ্রামের অবস্থাপন্নরা অবশ্য নানা জাতের কাঁঠাল নানাভাবে খেত। খই, মুড়ি, মুড়কি, ভাত বা পান্তার সঙ্গে খাওয়া হতো পাকা কাঁঠাল। কাঁঠালের রস করে পিঠা বানানোর চলও ছিল। আর কাঁচা কাঁঠাল ছিল গরিবের মাংস।
কাঁঠালের একটি স্বতন্ত্র ও তীব্র ঘ্রাণ রয়েছে। অনেকের কাছে এটিকে অসহ্য বা অপ্রীতিকর মনে হয়। এই তীব্র ঘ্রাণ গন্ধ-সংবেদনশীল ব্যক্তিদের জন্য অপ্রীতিকর হতে পারে। ফলে এ ধরনের মানুষ কাঁঠালের মজা নিতে পারবেন না অথবা কাঁঠাল খাওয়া তাঁদের জন্য কঠিন।
কাঁঠাল খেলে কারও কারও আবার অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা (ইমিউন সিস্টেম) কিছু নির্দিষ্ট বস্তুর প্রতি মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখায়। এটিই অ্যালার্জি। এটি খাবার বা ধুলোবালু অথবা পরিবেশের অন্য যেকোনো বস্তুর কারণে হতে পারে। অ্যালার্জির কারণে চুলকানি, শরীরে গোটা, ফুলে যাওয়া বা শ্বাস নিতে অসুবিধার মতো লক্ষণ দেখা দেয়। অবশ্য কাঁঠালে অ্যালার্জি তুলনামূলক বিরল। ফলে কাঁঠালের প্রতি সংবেদনশীল ব্যক্তিদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া হতে পারে গুরুতর।
কাঁঠালে উচ্চমাত্রার সালফার যৌগ রয়েছে। এটি কিছু লোকের ক্ষেত্রে হজম করা কঠিন হতে পারে। গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল অবস্থা বা সংবেদনশীল পরিপাকতন্ত্রযুক্ত ব্যক্তিরা কাঁঠাল খাওয়ার পরে অস্বস্তি, পেট ফোলাভাব বা হজমের সমস্যা অনুভব করতে পারেন।
রুচি বা পছন্দের মতো স্বাদও খুবই ব্যক্তিগত বিষয়। কাঁঠালের স্বাদ ও গন্ধ অনন্য। তীব্র ঘ্রাণ ও কড়া মিষ্টি দুটি মিলিয়ে যে অনন্য স্বাদ তৈরি হয়, সেটি অনেকের কাছে উপভোগ্য না-ও হতে পারে। এছাড়াও কিছু লোক এই কাঁঠালের তীব্র ঘ্রান, স্বাদ এবং কিছু অস্বস্তিকর শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়ার কারণে খেতে পারেন না।
কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণ আমিষ থাকায় কাঁঠাল একটি গুরুপাক ফল। মানে আমিষের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি হজম হতে সময় বেশি নেয়। অধিক পরিমাণে কাঠাল খেলে তা বদহজম হতে পারে। এছাড়া ডায়েবেটিক আক্রান্ত রোগীদের কাঁঠাল খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা উচিৎ। কিছু মানুষ কাঁঠালের প্রতি নাকউঁচু ভাব দেখালেও সংখ্যার বিচারে জাতীয় ফল কাঁঠাল এখনো জনপ্রিয়।
আঁখি