ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নিরাপত্তাহীনতায় কালিহাতীতে বন্ধ হয়ে গেল ‘তাণ্ডব’ সিনেমা প্রদর্শনী

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৬:৩৬, ১১ জুন ২০২৫

নিরাপত্তাহীনতায় কালিহাতীতে বন্ধ হয়ে গেল ‘তাণ্ডব’ সিনেমা প্রদর্শনী

ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ।

টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে নিরাপত্তার অভাবে জনপ্রিয় ‘তাণ্ডব’ সিনেমা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে আয়োজকরা। মঙ্গলবার (১০ জুন) বিকাল থেকে কালিহাতীর আউলিয়াবাদ এলাকায় জেলা পরিষদের কমিউনিটি সেন্টার কাম মাল্টিপারপাস হলে প্রচারিত সিনেমা বন্ধ করা হয়।

এর আগে শুক্রবার (৬ জুন) বাদ আছর পারখী ইউনিয়ন ওলামা পরিষদের নেতৃবৃন্দরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরবর্তীতে সিনেমা বন্ধের জন্য কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন করা হয়।

জানা যায়, স্থানীয় কামরুজ্জামান সাইফুল ও সাজু মেহেদীর নেতৃত্বে জেলা পরিষদের কমিউনিটি সেন্টার কাম মাল্টিপারপাস ভাড়া নিয়ে জনপ্রিয় তাণ্ডব সিনেমা পরিচালনার আয়োজন করা হয়। হলটি এক মাসের জন্য অনুমতি নেয়া হলেও ১০ দিনের ভাড়া পরিশোধ করা হয়েছে। ঈদের দিন থেকে কালিহাতীর আউলিয়াবাদসহ সারাদেশের ১৩২ টি প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি চলছে।

আন্দোলনকারী মাওলানা আব্দুল্লাহ বলেন, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদানে ক্ষতি হতে পারে। এছাড়াও অসামাজিক কার্যকলাপ হতে পারে। সেজন্য হলটি বন্ধের জন্য বিক্ষোভ মিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।

আয়োজক সাজু মেহেদী বলেন, “কমিউনিটি সেন্টার কাম মাল্টিপারপাস হলের এসি সার্ভিসিং, টিকেট প্রিন্টিং ও স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো। সব মিলিয়ে আমাদের ৯ লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। আমরা সব মিলিয়ে আড়াই দিনের মতো ছবি চালাতে পেরেছি। ভালো সাড়া পাচ্ছিলাম। এছাড়াও আমাদের প্রচার প্রচারণায় বাধা দেয়া হয়েছে। পোস্টার লাগাতে দেয়নি ও মাইকিংও করতে দেয়নি।”

আয়োজক কামরুজ্জামান সাইফুল বলেন, “স্থানীয় আলেম ওলামারা আমার যে ক্ষতি করলো, এমন ক্ষতি যাতে আর কারো না হয় সেজন্য সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। শুরু থেকে ভালই সাড়া পাচ্ছিলাম। আশেপাশের বল্লা, পারখী ও বীরবাসিন্দা এলাকার লোকজন না আসলেও সখীপুর ও মির্জাপুরের দর্শক বেশি আসতেন। সকালে কমিউনিটি সেন্টার কাম মাল্টিপারপাস হলের সামনে ব্যানারে লাগানোর পর দুই মিনিটও রাখতে পারিনি। বিভিন্নভাবে আমার কাছে হুমকি আসতে থাকে। নিরাপত্তাহীনতার অভাবে বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় (ইউনিয়ন শাখা) ইমাম পরিষদের সহ-সভাপতি মাদ্রাসা শিক্ষক হযরত আলী বলেন, “এলাকায় বেশকয়েকটি ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অশ্লীলতা ছড়াতে পারে এমন আশঙ্কায় আলেম সমাজসহ স্থানীয়রা এই সিনেমা প্রদর্শনের বিপক্ষে। আয়োজক যিনি তিনি আমাদের কাছে এসেছিলেন, আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সিনেমা চালানোর কথা বলেছিলেন। কিন্তু আমরা তো তাকে এটা চালাতে বলতে পারি না।”

কালিহাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন বলেন, “আমার কাছে তারা এসেছিলেন। তাদের বলেছি, এই বিষয়ে আমি সিদ্ধান্ত দেওয়ার কেউ নয়।”

কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খায়রুল ইসলাম বলেন, “বিষয়টি আমি জেনেছি। জেলা পরিষদের হলটি ভাড়া নিয়ে তারা সিনেমাটি চালাচ্ছিলো। এদিকে বন্ধ করার জন্য আমার অফিসে আবেদনও করেছে। তবে আমি ছুটিতে রয়েছি।”

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম বলেন, “আবেদনের প্রেক্ষিতে গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তের মাধ্যমে আমরা ওই হলটি ভাড়া দিয়েছিলাম। সাথে কিছু শর্তও দিয়েছিলাম, তার মধ্যে অন্যতম ছিল সেখানে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে সিনেমা চালানো বন্ধ করতে হবে। পরবর্তীতে কি হয়েছে, আর জানি না।”

মিরাজ খান

×