
শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার এক সময়ের খরস্রোতা মহারশী নদী আজ অস্তিত্ব সংকটে। শুকিয়ে যাওয়া এই নদীর দুই পাড়ে শত শত একর জমি এখন বে-দখলের পথে। নদীর বুক জুড়ে জমে থাকা বালু, অপরিকল্পিত মাছ শিকার, জলবায়ু পরিবর্তনে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস এবং অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহারে দিন দিন নাব্যতা হারাচ্ছে নদীটি।
স্থানীয়দের আশঙ্কা, পানি না থাকায় সন্ধ্যাকুড়া থেকে রাঙামাটি পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিপুল জমি অনাবাদি হয়ে পড়বে। কৃষকরা জানাচ্ছেন, এই নদীর পানির ওপর নির্ভর করেই ছিল ইরি-বোরো মৌসুমের সেচ ব্যবস্থা। কিন্তু দীর্ঘ এক যুগ ধরে বালুখেকোদের দৌরাত্ম্যে নদীটি আজ মরা খালে পরিণত হয়েছে।
এক সময়ের প্রাকৃতিক মাছের ভাণ্ডার এই নদীতে পাওয়া যেত কৈ, মাগুর, শিং, টেংরা, পুটি, দারকিনা, মলা, ঢেলা, চিংড়িসহ দেশীয় নানা প্রজাতির মাছ। ভাটির লোকেরা পাল তোলা নৌকায় যাতায়াত করত এই নদীপথে। কিন্তু আজ সে দৃশ্য ইতিহাস। নদীর বুক জুড়ে শুধুই শুষ্কতা, মাছশূন্যতা ও কৃষি বিপর্যয়।
স্থানীয় মৎস্যজীবীদের দাবি, মাছের ডিম পর্যন্ত শুকিয়ে যাচ্ছে পানির অভাবে। এমনকি এখন পোনার চিহ্নও চোখে পড়ে না। ফলে বহু মৎস্যজীবী পরিবার বেকার হয়ে পড়েছে।
অতীতে এই নদী থেকেই শুধু ঝিনাইগাতীর চাহিদা নয়, দেশের অন্যান্য জায়গায়ও মাছ সরবরাহ হতো। সেই ঐতিহ্য আজ কেবল স্মৃতির পাতায়।
সরকারি পর্যায়ে “প্লাবন ভূমিতে মৎস্য চাষ, দিন বদলের সু-বাতাস” স্লোগানে কার্যক্রম চললেও বাস্তবে এর বাস্তবায়ন নিয়ে স্থানীয়দের রয়েছে ঘোর সন্দেহ। অনেকে বলছেন, এসব শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ।
এদিকে কৃষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “যেটুকু পানি আছে, তাতেও যদি নিয়ম মেনে সেচ ব্যবস্থা চালু করা হতো, তাহলে কিছুটা হলেও ফসল বাঁচানো যেত।” কিন্তু সময়মতো পানি তোলা না হওয়ায় অনেক জমি অনাবাদি পড়ে আছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও কৃষি বিভাগের এই উদাসীনতা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
স্থানীয়দের জোর দাবি, মহারশী নদীটি দ্রুত খনন করে প্রাকৃতিক গতিপথ ফিরিয়ে আনতে হবে। না হলে আগামী দিনে এই অঞ্চলে ভয়াবহ খাদ্য সংকট ও পরিবেশ বিপর্যয় অনিবার্য।
মিমিয়া