
চারপাশে যখন নগরের আলো ঝলমলে অগ্রগতি, তখন দেশের বহু চরাঞ্চল যেনো আটকে আছে আশির দশকের ছায়ায়। বিদ্যুৎ এসেছে ঠিকই, কিন্তু জীবনের চালচিত্র এখনও পুরনো দিনের মতোই — যেন সময়টা থমকে আছে সেই প্রজন্মে। চলাচলের প্রধান বাহন এখনও ঘোড়ার গাড়ি, ফোন-ইন্টারনেট যেন বিলাসিতা, আর অসুস্থ হলে হাসপাতালে পৌঁছাতে পারাটাই এক যুদ্ধ।
গাইবান্ধার ফুলছড়ি বা সাঘাটা'র চরের একটি গ্রামের কথা ধরা যাক — এখানে কেউ অসুস্থ হলে তাকে আগে ঘোড়ার গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয় নদীর ঘাটে। এরপর ছোট নৌকায় নদী পার হতে হয়। এরপরেই হয়তো কোথাও পাওয়া যায় একটি এম্বুলেন্স, যদি ভাগ্য সহায় হয়। অনেক সময় এই দীর্ঘ প্রক্রিয়াতেই ঝরে পড়ে কোনো এক অসুস্থ শিশুর, বৃদ্ধার বা গর্ভবতী নারীর প্রাণ।
চরের জীবনযাত্রা যেন আশির দশকের কোনো সিনেমার দৃশ্য। তখন যেমন সন্ধ্যা নামলেই হারিকেন জ্বলে উঠতো ঘরে ঘরে, তেমনি আজও অনেক চরগ্রামে সন্ধ্যার পর দেখা মেলে হারিকেনের আলো। ছোট কুঁড়েঘর, গরুর গাড়ি বা ঘোড়ার গাড়ি, কাঁদামাটির পথ, নদীর গর্জন – সব মিলিয়ে এক কঠিন বাস্তবতা।
গর্ভবতী নারীদের জন্য জীবনপ্রবাহ আরেকটু কঠিনঃ
এই চরগুলোতে সবচেয়ে বেশি ভুগছেন গর্ভবতী নারীরা। প্রসবের সময় জরুরি চিকিৎসা সুবিধা না থাকায় অনেকেই ঘরে বসেই সন্তান প্রসব করতে বাধ্য হন। ঝুঁকি তো থাকেই, অনেক সময় মৃত্যুও।
বাল্যবিয়ে ও শিক্ষার অপ্রতুলতাঃ
মেয়েরা এখানে ১২ বা ১৩ বছর হলেই বিয়ের পাত্রী হয়ে ওঠে। অধিকাংশ পরিবারে শিক্ষা নয়, বরং মেয়েকে ‘বোঝা’ ভাবা হয়। অন্যদিকে ছেলেরা ছোটবেলা থেকেই নেমে পড়ে কৃষিকাজে কিংবা নদীতে মাছ ধরার অভিজ্ঞতা নিতে। স্কুল থাকলেও অনুপস্থিত শিক্ষক, রাস্তাঘাটের অভাব এবং অর্থনৈতিক টানাপড়েনের কারণে নিয়মিত ক্লাসে যাওয়া হয় না অনেকের।
চাকরির অভাব, কৃষিই ভরসাঃ
চরবাসীদের আয়ের একমাত্র উৎস চরের উর্বর জমিতে কৃষিকাজ। কখনও কখনও নদীর পরিবর্তনশীল চরিত্রে জমি বালিতে ঢেকে গেলে দিন চলে না, রাতও কাটে অনাহারে। স্থানীয়ভাবে কোনো কারখানা, দোকান বা চাকরির ক্ষেত্র গড়ে ওঠেনি বললেই চলে।
আলোকের সন্ধানে ‘এটিবি ইয়ুথ ফাউন্ডেশন’
এই অবহেলিত মানুষের জন্য নিরবে কাজ করে যাচ্ছে কিছু সমাজসেবামূলক সংস্থা।
এ বিষয়ে এটিবি ইয়ুথ ফাউন্ডেশন এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী মাসুম পারভেজ বলেনঃ চরের জীবন এখনো বাস্তবের ক্যানভাসে আঁকা এক দুঃখের চিত্র। বিদ্যুৎ আসার পর আশার আলো জেগেছে ঠিকই, কিন্তু জীবনযাত্রায় আধুনিকতার ছোঁয়া পৌঁছাতে সময় লাগবে বহু। প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, স্থানীয় অংশগ্রহণ, এবং সম্মিলিত উদ্যোগ। তবেই হয়তো আশির দশকের জীবন নয়, আজকের যুগের আলোয় আলোকিত হবে এই চরাঞ্চল।
মুমু