ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ জুন ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

হার্ভার্ডের মিলিয়ন ডলারের কেলেঙ্কারি

প্রকাশিত: ১৪:৪০, ৮ জুন ২০২৫

হার্ভার্ডের মিলিয়ন ডলারের কেলেঙ্কারি

ছবি: সংগৃহীত

 

বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের অধ্যাপিকা ফ্রানচেস্কা জিনো, যিনি একসময় সততা ও নৈতিকতা নিয়ে গবেষণার জন্য বিশেষ পরিচিত ছিলেন, আজ নিজেই এক চাঞ্চল্যকর একাডেমিক কেলেঙ্কারির কেন্দ্রবিন্দুতে।

২০১৮ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে জিনো হার্ভার্ডে বার্ষিক প্রায় ১০ লক্ষ ডলার বেতন পেতেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত শিক্ষকদের তালিকায় তাকে পঞ্চম স্থানে রেখেছিল। কিন্তু ২০২৩ সালে তার বিরুদ্ধে তথ্য জালিয়াতির অভিযোগ ওঠার পর বিশ্ববিদ্যালয় তাকে বরখাস্ত করে এবং ১৯৪০-এর দশকের পর এই প্রথম কাউকে টেনিউর বাতিল করে।

তথ্য জালিয়াতির অভিযোগ

জিনোর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি অন্তত চারটি প্রকাশিত গবেষণাপত্রে তথ্য ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত করেছেন। ২০১২ সালের একটি আলোচিত গবেষণাপত্র—যেখানে বলা হয়েছিল, ফর্মের শুরুতে সততার অঙ্গীকার সই করলে মানুষ বেশি সত্য বলে—সে গবেষণার তথ্য নিয়ে প্রথম সন্দেহ দেখা দেয়। ২০২১ সালে তা প্রত্যাহার করা হয়।

এরপর বিখ্যাত ব্লগ Data Colada-এর তিন গবেষক একাধিক গবেষণাপত্রে জালিয়াতির অভিযোগ আনেন, যার ভিত্তিতে হার্ভার্ড প্রায় দুই বছরব্যাপী অভ্যন্তরীণ তদন্ত চালায়। এতে গবেষণা উপাত্ত, ইমেইল, ও প্রকাশনার খসড়াগুলোর বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তথ্য ইচ্ছাকৃতভাবে “পারফেক্ট” করা হয়েছে।

আইনি লড়াই ও প্রতিক্রিয়া

জিনো অভিযোগ অস্বীকার করে হার্ভার্ড, বিজনেস স্কুল ডিন এবং Data Colada-র বিরুদ্ধে ২৫ মিলিয়ন ডলারের মানহানির মামলা দায়ের করেন। তবে আদালত মামলাটি খারিজ করে দেয়—উল্লেখ করে যে একজন পাবলিক ফিগার হিসেবে তার গবেষণা জনসমালোচনার আওতায় পড়ে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা বনাম স্বচ্ছতা

জিনোর ঘটনা আজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মর্যাদা, খ্যাতি এবং আর্থিক পুরস্কার দেওয়ার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। অনেকের মতে, গবেষণায় "চটকদার ফলাফল" এবং দ্রুত প্রকাশনাকে উৎসাহিত করা হয়, যা কখনো কখনো নৈতিকতার চেয়ে প্রাধান্য পায়।

এই ঘটনা একাডেমিক জগতে নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে:

  • কিভাবে এতগুলো বিকৃত তথ্য peer review পেরিয়ে প্রকাশ পেল?

  • বড় নামের আড়ালে কি একাডেমিক দুর্নীতি ধামাচাপা পড়ে যায়?

  • বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক পুরস্কার কি শুধুই ফলাফলনির্ভর হওয়া উচিত?

গভীরতর প্রভাব

জিনোর ঘটনা একটি ব্যক্তিগত কেলেঙ্কারির চেয়ে অনেক বড়। এটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বচ্ছতা, গবেষণার মান, এবং তরুণ গবেষকদের কাছে মূল্যবোধ শেখানোর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নতুন করে ভাবাচ্ছে।

এখন প্রশ্ন উঠেছে—হার্ভার্ড জিনোকে বাদ দিয়ে নিজের ভাবমূর্তি রক্ষা করল বটে, তবে শিক্ষা জগতে জিনোর মতো আরও “তারকা” গবেষকদের দিকে নজরদারি কতোটা শক্তিশালী?

আঁখি

×