ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চেয়ে আছেন ঈদের ছুটির দিকে

কুয়াকাটায় আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে পর্যটক উপস্থিতি, হোটেল ব্যবসায় ভয়াবহ সংকট

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ২১:০৬, ১ জুন ২০২৫; আপডেট: ২১:০৬, ১ জুন ২০২৫

কুয়াকাটায় আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে পর্যটক উপস্থিতি, হোটেল ব্যবসায় ভয়াবহ সংকট

ছবিঃ সংগৃহীত

দেশের অন্যতম সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায় পর্যটকের উপস্থিতি আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। আবাসিক হোটেল-মোটেলগুলোর পর্যটক উপস্থিতি দশ শতাংশে নেমে এসেছে; কোথাও তা শূন্যে পৌঁছেছে। পুরো মে মাসজুড়ে এ সংকট বিদ্যমান ছিল। প্রচণ্ড তাপদাহের পাশাপাশি শেষ সপ্তাহে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে পর্যটক উপস্থিতি কোনো কোনো হোটেলে পাঁচ শতাংশে নেমে গেছে। অধিকাংশ হোটেল কর্তৃপক্ষ লোকসান গুনতে বাধ্য হচ্ছেন। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় মেটাতে পারছেন না, হিমশিম খাচ্ছেন স্টাফদের বেতনভাতা ও ঈদের বোনাস পরিশোধে।

তবে তারকামানের ও আধুনিক সেবা সংবলিত হোটেলগুলোতে ২০-৩০ শতাংশ কক্ষে পর্যটক উপস্থিতি রয়েছে। যেন পর্যটকের আকাল চলছে কুয়াকাটায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মে মাসজুড়ে প্রচণ্ড গরম এবং মাসের শেষের দিকে শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল হওয়া পর্যটক কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। এর সঙ্গে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়াও ছিল।

হোটেল তাজওয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক রণজিৎ মিত্র জানান, পুরো মাস তাদের ২৮টি কক্ষের দৈনিক দুই থেকে সর্বোচ্চ পাঁচটি কক্ষ বুকিং ছিল। রবিবার কোনো গেস্ট নেই বলেও জানান তিনি। গোটা মাসের বেতনভাতা, বিদ্যুৎ বিল ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় মেটানো তো দূরের কথা, উল্টো ৬০-৬৫ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হবে। ঈদের আগাম বুকিংয়ের তেমন সাড়া মিলছে না বলেও জানান তিনি।

আধুনিক মানের আবাসিক হোটেল ‘গ্রেভার ইন’-এর অপারেশন ম্যানেজার সৈয়দ মো. এসএম জাবেদুর রহমান জানান, এ মাসে ব্যবসার অবস্থা ভালো নয়। গেস্ট উপস্থিতি ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। মে মাসের ১০-১৫ তারিখ পর্যন্ত গড়ে ৩০ শতাংশ বুকিং ছিল না। মাসের শেষ দিকে শনিবারের ছুটি বাতিলও মন্দার একটি কারণ বলে উল্লেখ করেন তিনি। তাপপ্রবাহ ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে শেষের সপ্তাহ একেবারে মাটি হয়ে গেছে। তিনি জানান, মাসে প্রায় ৯ লাখ টাকা খরচ রয়েছে। লাভ না হলেও লোকসানও হচ্ছে না। তবে স্টাফ বেতন-ভাতা নিয়ে শঙ্কা রয়েই গেছে।

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ইমপ্লয়িজ এসোসিয়েশন সভাপতি ইব্রাহিম ওয়াহিদ জানান, ছোট, মাঝারি, বড়, আধুনিক ও তারকামানের মিলিয়ে মোট ২৩০টি হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউস রয়েছে কুয়াকাটায়। কারো কারো গেস্ট কখনও কখনও শূন্যে নেমে এসেছে। কেউ কেউ পাঁচ শতাংশে নেমে গেছেন। ১-২টি রুম বুক ছিল কোনো কোনো দিন। তিনি জানান, তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন হোটেলের মাসে দুই লাখ টাকা খরচ রয়েছে। লাভ তো দূরের কথা, ৫০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

তিনি আরও জানান, হোটেল-মোটেল সংশ্লিষ্ট অন্তত আড়াই হাজার স্টাফ রয়েছে। পাশাপাশি পর্যটন সংশ্লিষ্ট আরও ৫-৬ হাজার কর্মজীবী রয়েছেন, যাঁরা পর্যটকের উপস্থিতি কমে যাওয়ায় আর্থিক ধাক্কায় পড়েছেন।

তবে তারকামানের হোটেল ‘খান প্যালেস’ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাদের মোটামুটি পর্যটক রয়েছে। গড়ে ৫০-৭০ শতাংশ কক্ষ বুকিং থাকছে। ঈদের জন্য আগাম বুকিংও রয়েছে। এভাবে তারকামানের সেবা সংবলিত ১৫-১৬টি হোটেল ও রিসোর্টে মোটামুটি গেস্ট থাকলেও সংখ্যাটি খুবই কম।

শতকরা ৯০ ভাগ হোটেলে পর্যটকের ভয়াবহ সংকট চলছে। পর্যটক না থাকার কারণে কুয়াকাটায় পর্যটন নির্ভর অন্তত অর্ধশতাধিক খাবার হোটেল, ৩৭টি ট্যুর অপারেটর, অর্ধশত ট্যুর গাইড, ৬২ জন বাণিজ্যিক ক্যামেরাম্যান, ১৬টি ফিস ফ্রাই দোকানসহ সব ধরনের ব্যবসা চরম সংকটে রয়েছে।

তবে সবাই আশায় রয়েছেন যে, ঈদ-উল-আযহার লম্বা ছুটিতে আবার চাঙ্গা হয়ে উঠবে কুয়াকাটার পর্যটন নির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্য। সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের বিরল দৃশ্য উপভোগে পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হবে কুয়াকাটা।

পর্যটকের স্বস্তিদায়ক পরিবেশ তৈরি করতে সৈকতের বিধ্বস্ত দশার মাঝেই ছাতা-বেঞ্চি বসিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছেন পর্যটন নির্ভর ব্যবসায়ীরা।

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশন সভাপতি মোতালেব শরীফ জানান, এখন পর্যটক নেই বললেই চলে। ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। এ ব্যবসা নিয়ে তারা শঙ্কিত। তবে ঈদের পরের অবস্থার দিকে চেয়ে রয়েছেন বলে জানান তিনি।

মারিয়া

×