ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ব্রাদার টিটোস হোমের শিক্ষার্থীদের

নৈতিক শিক্ষায় আগ্রহী করে তুলতে ব্যতিক্রমী আয়োজন

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস:

প্রকাশিত: ২১:০৫, ১ জুন ২০২৫

নৈতিক শিক্ষায় আগ্রহী করে তুলতে ব্যতিক্রমী আয়োজন

নিজ বাবা-মায়ের জুতা পরিষ্কার করে ‘গ্লোবাল ডে অব প্যারেন্টস’ উদযাপন করেছে যশোরের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্রাদার টিটোস হোমের খুদে শিক্ষার্থীরা। প্রতিবারের মতো এবারও ব্যতিক্রমী এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা।

রবিবার বিকেলে যশোর শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে শিক্ষার্থীরা বাবা-মায়ের হাত ধরে অনুষ্ঠানস্থলে আসে। এরপর মঞ্চে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ান অভিভাবকেরা। খুদে শিক্ষার্থীরা টিস্যু হাতে নিয়ে মঞ্চে উঠে নিজ নিজ বাবা-মায়ের জুতা পরিষ্কার করে শ্রদ্ধা জানান। পরে তাদের হাতে তুলে দেন নিজেদের আঁকা বিশেষ শুভেচ্ছা কার্ড।

সন্তানদের এমন শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় অনেকে অভিভাবক আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। অনুষ্ঠানে বাবা-মায়ের পা মুছানোর পাশাপাশি তাদের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা করা, মিথ্যা না বলা ও দুর্নীতি থেকে বিরত থাকার শপথও করানো হয়।

একজন মা, নাহিদা আক্তার, আবেগ ধরে রাখতে পারেননি: “আমার বাচ্চা নার্সারিতে পড়ে। দুষ্টুমি করলে মাঝে মাঝে বকাঝকা করি। কিন্তু আজ যখন সে আমার ও তার বাবার জুতা মুছছিল, তখন চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।”

অভিভাবক রফিকুল ইসলাম বলেন, “সন্তানের কাছ থেকে এমন ভালোবাসা পাব, কখনও ভাবিনি। ছোটবেলা থেকেই যদি শিশুদের মধ্যে নৈতিকতা গড়ে তোলা যায়, তাহলে তারা ভবিষ্যতে ভালো মানুষ হবে। বিদ্যালয়ের এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।”

দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী তানিয়া ইসলাম বললো, “মা-বাবা আমার জীবনের প্রথম বন্ধু, প্রথম শিক্ষক। তাদের আদর ছাড়া আমার দিন শুরু হয় না। আজ তাদের জুতা মুছে পুরস্কার পেয়েছি, খুব ভালো লাগছে।”

অনুষ্ঠানে ‘শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার উৎসব’ শিরোনামে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক আজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেক দূর এগিয়েছে। কিন্তু নৈতিকতা, মানবিকতা ও মনুষ্যত্বের জায়গায় আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের মাঝে এমন নৈতিক শিক্ষা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।”

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কচিকণ্ঠ আসরের সভাপতি হেমায়েত হোসেন, জেলা কালচারাল অফিসার জসিম উদ্দিন এবং অন্যান্য বিশিষ্টজন।

শেষে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পিতা-মাতাকে নিয়ে বাংলা ও ইংরেজি গান, অভিনয় ও কবিতা আবৃত্তি করে।

বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ আলী আযম টিটো বলেন, “বিশেষ এই দিনে শ্রদ্ধা পাওয়ার প্রথম দাবিদার হচ্ছেন বাবা-মা। যদিও তাদের ভালোবাসা প্রকাশের জন্য আলাদা কোনো দিনের প্রয়োজন নেই, তবু শিশুদের মনে বাবা-মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা গেঁথে দিতে আমাদের এই ব্যতিক্রমী আয়োজন। আমরা সবসময় চেষ্টা করি শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত ও ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে।”

নুসরাত

×