ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ জুন ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বৃষ্টিতে ফুঁসে উঠেছে দিরাইয়ের নদ-নদীর পানি

মোঃ আয়মান মিয়া, দিরাই, সুনামগঞ্জ

প্রকাশিত: ২০:০৭, ৩০ মে ২০২৫

বৃষ্টিতে ফুঁসে উঠেছে দিরাইয়ের নদ-নদীর পানি

ছবিঃ জনকণ্ঠ

গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ফুঁসে উঠেছে দিরাই’র নদ-নদীর পানি। পাহাড়ি ঢলে সব নদী পানিতে টইটম্বুর। ছুঁইছুঁই করছে বিপদসীমা। পানি ঢুকতে শুরু করেছে দুয়েকটি হাওরেও। ফলে মাছের বিচরণক্ষেত্র হাওরের এই অবস্থায় শঙ্কিত হাওরপারের বাসিন্দারা।

 উপজেলার বৃহৎ বরাম হাওর চ্যাপ্টির হাওরে এখন পর্যন্ত বর্ষার রূপ দেখা যায়। এসব হাওরে নৌকা চলাচল শুরু হয়েছে  এখনও। চ্যাপ্টির হাওর দিয়ে যাওয়া সাবমারসিবল সড়ক দিয়ে রোববারও যানবাহন চলাচল করেছে।কালনী নদীর  উল্টোদিকে মাটির বস্তা দিয়ে বাঁধ দিয়ে পানি আটকানো হয়েছে। এতে চ্যাপ্টির  হাওরে পানি প্রবেশ করছে না। হাওরের ফসলি জমিতে রবিবারও ধানের নিচের অংশ (ঢেঙ্গা) দেখা গেছে। একদিকে ফুলে আছে নদীর পানি, অন্যদিকে হাওর প্রায় খালি।

কৃষক হেলালা আহমদ বলেন, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কোনো কোনো অংশ নৌ চলাচলের জন্য কেটে দিতে হবে। না হলে ৫ কিলোমিটারের নৌপথ ৩০ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হবে। দল,মাতারগাও,জগদল,কুলঞ্জ, থেকে দিরাই যেতে বহুপথ ঘুরে  যেতে হয়। 

মৎস্য বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পানি যে বছর বিলম্বে এসেছে, হাওরে মাছের উৎপাদনও ওই বছর কমেছে। তবে বৃষ্টিপাতের কারণে হাওর ও নদ-নদীতে স্বাভাবিকভাবে পানি বাড়ছে।কালনী,সুরমা,হেরাচাপ্টি  নদীসহ অনেক নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও তা এখনো বিপৎসীমার অনেক নিচে রয়েছে। ফলে আপাতত বন্যার শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

তবে ফেইসবুকে যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বন্যার তথ্য এবং বিগত বছরের অভিজ্ঞতায় দিরাই’র  নদীতীরবর্তী ও হাওর পাড়ের মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

দিরাই উপজেলার কদমতলী গ্রামের কৃষক সুবেদ আলী বলেন, হাওরে ধান কাটা শেষ। এখন পানি এলে সমস্যা নেই। কিন্তু বন্যা হলে তো কষ্ট বাড়বে। ঘরে ধান তুলেছি, ঘরটাও ঠিক করার দরকার ছিল, কিন্তু বৃষ্টির কারণে কিছুই করতে পারছি না। পানির খবর শুনলেই এখন ভয় লাগে।

টাংনির হাওরের তীরবর্তী  গৃহবধূ জুলেখা বিবি বলেন, আমার ঘর একেবারে হাওরের পাড়ে। প্রতিবছর বন্যা হলে পানি ঢুকে পড়ে। পানি বাড়ছে দেখে ভয় পাচ্ছি। যে পরিমাণ বৃষ্টি শুরু হচ্ছে, রাতে চিন্তায় ঘুম আসে না।

অন্যদিকে অনেকেই বলছেন, এই পানি হাওরের জন্য আশীর্বাদ। বৃষ্টির পানির কারণে হাওর জীবন্ত হয়ে ওঠে।পাশাপাশি বর্ষায় এ অঞ্চলের মানুষের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম নৌকা,এখন হাওরে পানি ঢুকছে তাই সহজেই গঞ্জে যাওয়া যাবে।হাওরে স্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি হাওর পাড়ের মানুষের জন্য আর্শীবাদ। 

সিকন্দপুর গ্রামের মৎস্যজীবী মুসা মিয়া বলেন, বর্ষায় ধীরে ধীরে যখন হাওরে পানি বাড়ে, তখনই আমরা মাছ ধরার জাল, ফাঁদ তৈরি করি। এই সময়টায় মাছ বিক্রি করে সংসার চালাই, অনেকে দেনা-পাওনাও মিটাই। হাওরের পানিতে এখন কৈ, টেংরা, শিং,চ্যাং,ভেদা,পাবদা, চিংড়িসহ অনেক ধরনের দেশি মাছ ওঠে। এসব মাছ বাজারে ভালো দামে বিক্রি হয়। তাই আমরা চাই পানি আসুক, কিন্তু এই পানি বেড়ে যেন বন্যা না হয়।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী  বলেন, ভারতের চেরাপুঞ্জি ও সুনামগঞ্জে যে বৃষ্টিপাত হচ্ছে, তা বর্ষা মৌসুমের স্বাভাবিক চিত্র। এই বৃষ্টির কারণে নদীর পানি কিছুটা বেড়েছে, তবে তা বিপৎসীমার অনেক নিচে রয়েছে। আমাদের হাওরে পানি ধারণের যথেষ্ট জায়গা আছে, হাওর পরিপূর্ণ হতে আরও সময় লাগবে।

তিনি আরও বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আগামী তিন দিনের মধ্যে সুরমা ও কালনী নদীর পানি এবং হাওরের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্যার যে তথ্য প্রকাশ হচ্ছে তা সঠিক নয়। আমরা নিয়মিত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করার আগেই সতর্কবার্তা দেওয়া হবে।

আলীম

×