ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ জুন ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শিবালয়ে কলেজ অধ্যক্ষকে বাধ্যতামূলক ছুটি

নিজস্ব সংবাদদাতা, শিবালয়, মানিকগঞ্জ

প্রকাশিত: ২০:০১, ৩০ মে ২০২৫

শিবালয়ে কলেজ অধ্যক্ষকে বাধ্যতামূলক ছুটি

ছবিঃ অধ্যক্ষ ড. বাসুদেব কুমার দে শিকদার

অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে কোটি টাকা লোপাটের সত্যতা মেলায় এবার শিবালয় সদরউদ্দিন ডিগ্রী কলেজ অধ্যক্ষ ড. বাসুদেব কুমার দে শিকাদারকে দু’মাসের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছেন পরিচালনা কমিটি। 

গতকাল ২৯ মে কলেজ পরিচালনা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর আগেও নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারনে ৬ মাসের জন্য অস্থায়ী বহিষ্কার করা হয় তাকে। শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ জাকির হোসেন জনকণ্ঠকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

উল্লেখ্য, গত ২৭ মে এ বিষয়ে দৈনিক জনকণ্ঠ অনলাইন ভার্সনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।  

তথ্যনুসন্ধানে জানা যায়, কলেজ অধ্যক্ষ ড. বাসুদেব কুমার দে শিকদারের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযাগ তুলেন সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীরা। এ পরিপ্রেক্ষিতে কলেজ পরিচালনা পরিষদ একটি অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিটি গঠন করে। উক্ত কমিটি প্রায় এক মাস আগে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বরাবর তদন্ত রিপোর্ট পেশ করেন। তদন্ত রিপোর্টে অধ্যক্ষের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়গুলো উঠে আসে। দীর্ঘ দিনেও এর কোন সুরাহা না হওয়ায় ক্ষুব্ধ শিক্ষক ও কর্মচারীরা মানববন্ধন ও কর্মবিরতি পালন করে। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত কমিটির কয়েকজন সদস্য জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের বেতনসহ কলেজের বিভিন্ন উৎস থেকে কোটি টাকার বেশি জমা হয় কলেজ ফান্ডে। অথচ নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের ১৭ মাস যাবৎ বেতন বন্ধ রেখেছেন দুর্নীতিবাজ এ অধ্যক্ষ। তার ডক্টরেট ডিগ্রী নিয়েও বিভিন্ন মহলে রয়েছে নানা বির্তক। নিরীক্ষা কমিটির তদন্তে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় সোয়া ২ কোটি টাকা আয় হয় বলে তদন্তে প্রকাশ পায়। এছাড়া, বিভিন্ন ভুয়া বিল ভাউচার, নামে-বেনামে অনুদান, যাতায়াত খরচ, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ফি-বাবদ নেয়া অন্তত এক  কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে তার বিরুদ্ধে।

উক্ত কলেজের কয়েকজন শিক্ষক দাবি করেন অধ্যক্ষ বাসুদেব কুমার দে শিকদারের ডক্টরেট ডিগ্রী টিও ভুয়া ! অধ্যক্ষের দাবি অনুযায়ী আমেরিকান ওয়াল্ড ইউনিভার্সিটি থেকে সে পিএইচডি করেছেন। কিন্ত এর কোনো অনুমোদন বাংলাদেশে নেই। এখন পর্যন্ত কোনো বেসরকারী বিশ্ববিদ্যলয় ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করতে পারেন না। 

শিক্ষক-কর্মচারীরা আরো জানান, উপজেলা প্রশাসন ও গভর্নিং আমাদের প্রাথমিক দাবি মেনে নেয়ায় কর্মবিরতী প্রত্যাহার করা হয়েছে। আগামী রবিবার থেকে কলেজের সকল কার্যক্রম স্বাভাবিক ভাবে চলবে বলেও জানান তারা। 
এসকল বিষয়ে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ ড. বাসুদেব কুমার দে শিকদার বলেন, শিক্ষক-কর্মচারীদের একটি অংশ নানা কারণে আমার প্রতি ক্ষিপ্ত। তারা বরাবরই আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহলে নানা কুৎসা রটাচ্ছে। আমি কোন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই। প্রয়োজনে আদালতে এর প্রমাণ হবে বলেও জানান তিনি।

কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি ও শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  মোঃ জাকির হোসেন জানান, গত ২৯ মে পরিচালনা পর্ষদের সভায় তদন্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা করে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ ড. বাসুদে কুমার দে শিকদারকে বাধ্যতামুলক দু'মাসের ছুটি প্রদান করে আ.ন.ম. বজলুর রশিদকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের সহিত আলোচনা সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মুমু

×