ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ জুন ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ভোলায় পাঁচ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত, চরম দুর্ভোগে উপকূলবাসী

হাসিব রহমান, ভোলা

প্রকাশিত: ১৯:৫৮, ৩০ মে ২০২৫

ভোলায় পাঁচ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত, চরম দুর্ভোগে উপকূলবাসী

ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলায় শুক্রবারও বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করেছে। সকাল থেকেই মেঘলা আকাশে ঘোমট আবহাওয়া বিরাজ করে। দুপুরের পর জেলার ঢাল চরসহ বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হয়েছে। অপর দিকে  ভোলায় অস্বাভাবিকভাবে নদীর পানির চাপ ও ঝড়ো বাতাসে কয়েক হাজার ঘর বাড়ি ও অসংখ্য গাছপালা বিধ্বস্ত হয়েছে। 

শুক্রবার (৩০ মে) ঝড় ও অতিজেয়ারের পানি আঘাতে জেলার দুর্গম চরাঞ্চলের প্রায় ৫ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ভোলার চরফ্যাশন, মনপুরা ও তজুমদ্দিন উপজেলায় সহস্রাধিক ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক পরিবার গৃহহারা হয়েছে। তারা এখন চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে। অপরদিকে পানির তোরে ভেসে গেছে সহস্রাধিক গবাদি পশু। চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলায় এখনও তিন হাজার পরিবার জোয়ার এলই পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এছাড়াও ভোলার লালমোহন ও তজুমদ্দিন উপজেলার দুই স্থান দিয়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। অন্যদিকে ঝড়ো বাতাসে ইলিশা লঞ্চঘাটের ৩টিসহ ৫টি পন্টুন বিধ্বস্ত হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার সাগর মোহনার ঢালচর, চর কুকরি-মুকরি ও মুজিবনগর ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঢালচরের অধিকাংশ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চর কুকরি-মুকরির চর পাতিলা এলাকা ও মুজিবনগর ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ তিন ইউনিয়নে প্রায় ৭-৮ শতাধিক গরু-ছাগল পানিতে ভেসে গেছে। 

চরফ্যাসনের ঢাল চর ইউনিয়নের বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম জানান, সেখানে শুক্রবার দুপুরে আবার জোয়ারের পানিতে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। বহু ঘর বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে অনেক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। মোহাম্মদিয়া  আরাবিয়া কওমি মাদ্রাসার বিধ্বস্ত হয়। মাদ্রাসাটির টিনের চালা উড়িয়ে নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা আমির হোসেন। 

লালমোহন উপজেলার লর্ডহার্ডিঞ্জ, রমাগঞ্জ, ধলীগৌরনগর, চরভূতা ও পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ২০টি বসতঘর পুরোপুরি বিধ্বস্ত হওয়ার পাশাপাশি অন্তত ৫০০টি বসতঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলার লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের পূর্ব সৈয়দাবাদ এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে দুইটি গ্রাম ও অতিবৃষ্টিপাত এবং জোয়ারের পানির কারণে চরকচুয়াখালী এবং পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। 
মনপুরা উপজেলার কলাতলির চরসহ বাঁধের বাইরের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এতে প্রায় ৩ হাজার ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশ কিছু গবাদি পশু ভেসে গেছে। 

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসনা শারমিন মিথি সাংবাদিকদের জানান, চরফ্যাশনের তিনটি ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে শতাধিক ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ৭-৮ শতাধিক গবাদিপশু ভেসে গেছে।  ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য ৫০০ প্যাকেট খাদ্য সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। 

মনপুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিখন বনিক সাংবাদিকদের জানান, মনপুরার কলাতলি ইউনিয়নে বাঁধ না থাকায় পানিতে সেখানকার ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। এছাড়াও বাঁধের বাইরে কিছু কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের পানিতে তিন হাজার ৪০০ ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এখনো পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্তের খবর পাওয়া যায়নি। 

ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আসফাউদ দৌলা জানান, মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারে ভোলার লালমোহনের সৈয়দাবাদ ও তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের স্লুইসগেট এলাকায় বেড়িবাঁধ ছুটে যায়। এতে লালমোহনে ২০ মিটার ও তজুমদ্দিনে ১৫ মিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লালমোহনের ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার করা হয়েছে এবং তজুমদ্দিন উপজেলার বাঁধ সংস্কার কাজ চলছে।

এদিকে মেঘনার মধ্যবর্তী চরাঞ্চলগুলোতে ঘরবাড়ির ক্ষতির পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক মহিষ ভেসে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জোয়ারের পানিতে সহস্রাধিক পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। ঝড় জলোচ্ছ্বাসের  কবল থেকে ভোলাকে রক্ষায় টেকসই বাঁধের দাবি জানান তজুমদ্দিনের ক্ষতিগ্রস্তরা।

জেলা প্রশাসক মো: আজাদ জাহান সাংবাদিকদের জানান, বৃহস্পতিবার বিকালের ঝড়ে ৫ হাজর ২’শ  ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০৪টি ঘর। এর মধ্যে চরফ্যাসনের ঢালচর, চর পাতিলা, কুকরী মুকরীতে ক্ষয়ক্ষতি বেশি। শুক্রবার বিকালে ভাঙা বেড়িবাঁধ এলাকা পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক। 

এসময় তিনি আরও জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে। দুর্গত এলাকায় শুকনো বিতরণ শুরু হয়েছে।

মিরাজ খান

×