ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ জুন ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

অনলাইনে কোরবানির পশু বেচা-কেনায় ঝুঁকছে ক্রেতা-বিক্রেতারা

নিজস্ব সংবাদদাতা, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: ১৯:৫৭, ৩০ মে ২০২৫; আপডেট: ২১:১৯, ৩০ মে ২০২৫

অনলাইনে কোরবানির পশু বেচা-কেনায় ঝুঁকছে ক্রেতা-বিক্রেতারা

ছবি: সংগৃহীত

আর মাত্র কয়েক দিন পর কোরবানির ঈদ। ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে চলছে কোরবানির পশুর পরিচর্যার কাজ। একটা সময় ছিল, যখন কোরবানির পশু হাটে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করতে হতো। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পশু বিক্রির প্রক্রিয়ায় এসেছে পরিবর্তন। গত কয়েক বছর ধরে অনলাইনে কোরবানির পশু বেচাকেনা শুরু হয়েছে। এ বছর অনলাইনে কোরবানির পশু বেচাকেনা অন্যান্য বছরের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। তবে এতে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। এজন্য সতর্ক হয়ে অনলাইনে পশু কেনাবেচার পরামর্শ দিচ্ছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা।

প্রতি বছরের মতো এবারও ময়মনসিংহের খামারিরা কোরবানির পশু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ বছর মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা তুলনামূলকভাবে বেশি। খামারিদের প্রত্যাশা, পশুর মূল্য যেন যথাযথ হয়। ইতোমধ্যে খামারের পশু অনলাইনে কেনাবেচা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন খামারিরা।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় এবছর কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৯২ হাজার ৮৮৯টি। জেলায় মোট গবাদিপশুর সংখ্যা ২ লাখ ৫০ হাজার ৯৮৮টি। এর মধ্যে গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষ রয়েছে। অতিরিক্ত রয়েছে ৫৮ হাজার ৯৯টি পশু।

১৩ উপজেলায় মোট খামারির সংখ্যা ২৪ হাজার ৬৩৫ জন। গত বছর জেলায় পশু কোরবানি হয়েছিল প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজারটি। জেলায় ১৫২টি স্থায়ী ও অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট বসবে। বড় হাটগুলোতে ৫২টি মেডিকেল টিম কাজ করবে। ভারতীয় গরু যেন অবৈধভাবে প্রবেশ করতে না পারে, সে লক্ষ্যে সচেতন রয়েছে প্রশাসন।

২০২২ সালে নগরের কাচারিঘাট পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের ওপাড়ে চর ঈশ্বরদিয়া গ্রামে পাঁচজন খামারি মিলে গড়ে তুলেছেন ‘ময়মনসিংহ এগ্রো ফার্ম’। গরুর পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারি আজহারুল হক ও দুইজন শ্রমিক। খামারটিতে ৩৫টি ষাঁড় গরু রয়েছে, যার মধ্যে বিক্রির উপযোগী ৩০টি। গত দুই দিনে অনলাইনে পাঁচটি মাঝারি ও বড় ষাঁড় বিক্রির কথা জানিয়েছেন তিনি। প্রাকৃতিক উপায়ে চাষ করা ঘাস, খৈল ও ভূষি খাইয়ে গরু মোটাতাজা করায় তা বাজারে তুলতে হয় না। খামার থেকেই ঈদের আগে সবগুলো ষাঁড় বিক্রি হয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করছেন খামারি আজহারুল হক।

আজহারুল হক বলেন, “ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে মাঝারি আকারের গরু মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে। খামারে বর্তমানে ৩৫টি ষাঁড় রয়েছে। প্রত্যেকটির দাম ৮০ হাজার থেকে শুরু করে সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত। গরুগুলো দেশি ও শাহীওয়াল জাতের। গায়ের রং কালো এবং লাল হওয়ায় দেখতেও চমৎকার লাগে। কোনো ক্রেতা একনজর দেখলেই পছন্দ করে ফেলেন। এসব গরু বিক্রিতে দরকষাকষির প্রয়োজন পড়ে না। এবছর আমরা অনলাইনে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আশা করি, গরুর হাটে তোলার আগেই সব বিক্রি হয়ে যাবে।”

জেলার ফুলপুর উপজেলার ভাইটকান্দি গ্রামে জহিরুল হক ভাষণ গড়ে তুলেছেন ‘বিগব্যাং ফার্ম’। প্রতি বছর এই ফার্ম থেকে ৩০-৪০টি কোরবানির ষাঁড় বিক্রি করা হলেও এবার ২৫টির মতো ষাঁড় প্রস্তুত রয়েছে। দেশীয় জাতের এসব ষাঁড়ের মূল্য ধরা হচ্ছে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

খামারি জহিরুল হক ভাষণ বলেন, “কোরবানির ঈদে গরু হাটে তোলার চিন্তাও করি না। সবগুলোই অনলাইনে বিক্রি হয়ে যায়। এবারও প্রতিনিয়ত অনলাইনে গরু কিনতে ক্রেতারা দরকষাকষি করছেন। আশা করছি, কয়েক দিনের মধ্যে ধুমধাম বিক্রি হবে। তবে আমার কিছু ব্যক্তিগত ক্রেতা রয়েছেন, যাদের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক গরু প্রতি বছরই রাখতে হয়। এবছর অন্যান্য কাজে বেশি ব্যস্ত থাকায় ফার্মটির দিকে মনোযোগ দিতে না পারায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কম।”

ময়মনসিংহ এগ্রো ফার্মে গরু কিনতে আসা মো. শাহজাহান বলেন, “শুধু কোরবানির জন্য নয়, যেকোনো অনুষ্ঠানেই আমি এখান থেকে গরু কিনে থাকি। গরু কেনার সহজ মাধ্যম হিসেবে অনলাইনকেই বেশি ব্যবহার করি। কারণ, এই খামারের গরুর মাংস খুবই সুস্বাদু। সুন্দর পরিবেশ ও দেশীয় খাবার খাইয়ে মোটাতাজা করায় এখানকার গরুর চাহিদা বেশি।”

গরুর ব্যাপারী বাপন সাংমা বলেন, “ঈদকে সামনে রেখে বিভিন্ন খামারে ঘুরছি, পাশাপাশি অনলাইনেও গরু দেখছি। এবার খামারিরা মাঝারি আকারের গরু সবচেয়ে বেশি লালন-পালন করেছেন। এসব গরুর চাহিদাও ভালো, দামও সাধ্যের মধ্যে মনে হচ্ছে। তবে একটু কম দামে পেলেই গরু কিনে খামারেই রেখে দিচ্ছি। ঈদের আগে সেগুলো হাটে অথবা অনলাইনেই বিক্রি করব।”

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ওয়াহেদুল আলম বলেন, “রোজার শুরু থেকেই জেলার প্রতিটি খামার পরিদর্শন করে খামারিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আমরা আশা করছি কোরবানির চাহিদা পূরণ হয়ে ৫৮ হাজারেরও বেশি পশু অতিরিক্ত থাকবে। প্রচণ্ড রোদ ও ভোগান্তি এড়াতে অনলাইনে গরু কেনাবেচায় মানুষকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এতে সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে। তবে আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি, যাতে ভারত থেকে কোনোভাবেই গরু প্রবেশ করতে না পারে।”

আসিফ

×