ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ জুন ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সৈয়দপুরে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু, তিন লাখ টাকায় মিটমাট

নিজস্ব সংবাদদাতা, সৈয়দপুর।

প্রকাশিত: ১৮:৩০, ৩০ মে ২০২৫

সৈয়দপুরে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু, তিন লাখ টাকায় মিটমাট

সৈয়দপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে অপারেশনের সময় অতিরিক্ত রক্ষক্ষরনে সোগরা বেগম (৩৫) নামে তিন সন্তানের মৃত্যুর ঘটনা তিন লাখ টাকায় মিটানো হয়েছে। শুক্রবার (৩০ মে) রাত ৩ টায় শহরের দিনাজপুর সড়কস্থ গ্রীন লাইফ ল্যাব এ্যান্ড হসপিটালে এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, শহরের বাশবাড়ি আমিন মোড় এলাকার বাসিন্দা মো: আরিফের স্ত্রী সোগরা বেগম ৪৫ দিনের গর্ভবতী বলে চিকিৎসা নিতে যান যান ওই হাসপাতালে। সেখানে গাইনি ও সার্জারী চিকিৎসক ডা: ওয়াজিরা শিফাত জাহান শান্তাকে দেখান। ওই হাসপাতালে অপারেশন বাবদ ২০ হাজার টাকার চুক্তি করেন গুল ফ্যাক্টরিতে কাজ করা স্বামী মো: আরিফ হোসেন।

শুক্রবার গভীর রাতে হাসপাতালের অপারেশনের সময় সোগরা বেগমের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। এতে অপারেশন টেবিলে সোগরা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তিন লাখ টাকায় রফাদফা করে রোগীর অভিভাবকের সাথে। ওই দিন বাদ জুম্মা জানাযা শেষে গোলাহাট কবরস্থানে দাফন করা হয় সোগরা বেগমকে।

এ ঘটনায় সোগরা বেগমের স্বামী মো: আরিফ সংবাদকর্মীরদের কোন মতামত প্রকাশ করতে রাজি হননি। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও অব্যবস্থাপনায় রোগীর মৃত্যু ঘটনায় অন্যন্য ভুক্তভোগীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। অনেকে হাসপাতালে ছুটে যায়। সেখানে কাউকে না পেয়ে ফিরে আসেন।

ওয়াকিল নামে নামে এক ভুক্তভোগী জানান, ওই হাসপাতালের চিকিৎসার মান ও ব্যাবস্থাপনা নিম্নমানের। সেখানে চলতি বছরের রমজান মাসে খালাত ভাই জমশেদ ও তার স্ত্রী সাবরা বেগম (২৪) প্রথম সন্তান নিরাপদে প্রসব করাবেন বলে ওই হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে গাইনি ও সার্জারী চিকিৎসকের পরামর্শে সিজার করার জন্য অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার পুর্বেই হাসপাতালে সন্তানটি গর্ভে মারা যায়। এ নিয়ে ওই হাসপাতালের নার্সগণ দু:খ প্রকাশ করেন।

শহরের ১১ নং ওয়ার্ডের নয়াবাজার এলাকার গোলাম আনসারী নামে এক ভুক্তভাগী জানান, আমার স্ত্রী শামিমা বেগমকে গর্ভাবস্থায় ৩ বছর পূর্বে ওই হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম। তারা নিরাপদে ডেলিভারি করার ৩ ঘণ্টা পরই নবজাতকটি মারা যায়। ওই হাসপাতালে শিশু জন্ম নেয়ার পর শিশু পরিচর্যার অবস্থা নাজুক। নেই কোন শিশু ডাক্তার কিংবা চিকিৎসা ব্যাবস্থা।

‘আস্থা’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার লাল্লু নামে এক সদস্য ওই হাসপাতালে সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ওই হাসপাতালে স্বেচ্ছাসেবীদের সাথে খারাপ ব্যাবহার করা হয়। সেখানে অসহায় রোগীদের স্বেচ্ছায় রক্ত দিতে গেলে গ্রহীতার কাছে দেড় হাজার টাকা নেওয়া হয়। অথচ সরকারি হাসপাতালে রক্ত গ্রহণে ব্যায় মাত্র ৫ শত টাকা।

শুক্রবার (৩০ মে) দুপুরে গেলে ওই হাসপাতালের পরিচালক কিংবা চিকিৎসক কাউকে পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে হাসপাতালটির ম্যানেজার শাহিনুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রোগী মৃত্যুর ঘটনাটি স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি রোগীর অভিভাবকের সাথে মিটমাট হয়েছে। আপনারা কেন বাড়াবাড়ি করছেন।

পরে হাসপাতালটির চিকিৎসক ডা: ওয়াজিরা শিফাত জাহান শান্তার সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোন মতামত দেবেন না বলে তার ব্যাক্তিগত সহকারীকে জানিয়ে দেন। হাসপাতালটির মেডিকেল অফিসার ডা: জয়ন্তের সাথে এ ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

রিফাত

×