
দৈনিক জনকণ্ঠ
দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাটিকুমরুল গোলচত্তরে নির্মিত আন্তর্জাতিক মানের ইন্টারচেঞ্জ অনেকটাই দৃশ্যমান হয়েছে। ইতিমধ্যে নির্মাণের ৫২ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণ কাজ শেষ হলে দেশের উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের ২২ জেলার লাখ লাখ মানুষের যাতায়াত দুর্ভোগ লাঘব হবে। যাতায়াত ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হবে উত্তর জনপদে। এতে ব্যবসায়িক দ্বার উন্মোচনের সম্ভাবনাও দেখছে অনেকে।
জানা গেছে, উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের হাটিকুমরুল গোল চত্বর একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। হাটিকুমরুল গোল চত্বর হয়ে যমুনা সেতু পারাপার করে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণ-পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ২০ হাজার যানবাহন প্রতিদিন চলাচল করে থাকে। ঈদের সময় এই যানবাহন চলাচলের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যায়। ঈদের সময় এই মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে মানুষের ভোগান্তি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। জনভোগান্তি কমাতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ হাটিকুমরুলে নির্মাণ করছে আন্তর্জাতিক মানের ইন্টারচেঞ্জ। প্রায় ১৪৭ একর বিশাল জায়গা নিয়ে নির্মিত হচ্ছে এই ইন্টারচেঞ্জ। ‘সাসেক-২’ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত হচ্ছে দেশের মধ্যে সব থেকে নান্দনিক ও দৃষ্টি নন্দন আধুনিক মানের ইন্টারচেঞ্জ। এর নির্মাণ কাজ এবং চালুর পর থেকে তিন বছর ইন্টারচেঞ্জ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে চায়না রেলওয়ে কনক্ট্রাকশন ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো গ্রুপ কোম্পানি লি. (সিআরবিজি)।
২০২২ সালে এর নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও জমি অধিগ্রহণের জটিলতায় প্রায় দেড় বছর সময় নষ্ট হয়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে নির্মাণের সময় বাড়ানো হয়। ৭৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ইন্টারচেঞ্জের কাজ ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে শেষ হবে বলে জানিয়েছে নির্মাণকারী কর্তৃপক্ষ। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্মাণকাজ দ্রুত করা হচ্ছে এবং গুণগতমান ঠিক রেখে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই এর নির্মাণকাজ শেষ করা সম্ভব হবে।
দেশে এই প্রথম হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জে ইন্টেলিজেনস ট্রান্সর্পোট সিস্টেম (আইটিএস) পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। আইটিএস পদ্ধতিতে যানবাহন চলাচলের সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে আগাম সতর্কতা জানাবে। এতে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ, যানজট ও দুর্ঘটনার সম্ভাবনার পাশাপাশি করণীয় বিষয়ে নির্দেশনা সংকেত জানা যাবে। যানবাহন প্রয়োজন মতো তার গতিপথ বদলাতে পারবে। ফলে দুর্ঘটনা কম হবে।
এছাড়া ধীরগতির যানবাহন চলাচলের জন্য থাকছে সার্ভিস রড। থাকবে জনসাধারণ চলাচলের জন্য ফুটওভার ও ওয়াকওয়ে। যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রাক চালকদের জন্য থাকবে আধুনিক মানের পৃথক বিশ্রামাগারের ব্যবস্থা থাকছে। নির্মাণ করা হচ্ছে বিশ্বমানের সার্ভিস এরিয়া। যেখানে পাঁচশত যানবাহন একসাথে দাঁড়াতে পারবে।
সরেজমিনে হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিশাল এক কর্মযজ্ঞ চলছে হাটিকুমরুল গোলচত্তর এলাকায়। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে শ্রমিকরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। গত ঈদুল ফিতরের আগে ইন্টারচেঞ্জের বগুড়া-রংপুর সার্ভিস লেনটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। এতে ইদ যাত্রায় ওই মহাসড়কে তেমন ভোগান্তি লক্ষ করা যায়নি।
ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে আব্দুর রহিম নামে একজন বাস চালক জানান, আগের তুলনায় এই গোলচত্তর এলাকায় যানজট অনেকটাই কমে গেছে। ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণ কাজ শেষ হলে উত্তরাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতে কোন ভোগান্তি থাকবে না। মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে ঢাকাসহ অন্যান্য স্থানে যেতে পারবে।
হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জ প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জ দেশের অন্যতম বৃহৎ বৃহৎ আধুনিক আন্তর্জাতিক মানের একটি প্রকল্প। এই গুরুত্বপূর্ণ স্থানটি দিয়ে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানের হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে এখানে আন্তর্জাতিক মানের ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণ করা হচ্ছে।
ইতিমধ্যে ইন্টারচেঞ্জের ৫২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আমরা ঠিকাদারকে নির্দিষ্ট সময়ে মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য তাগাদা দিচ্ছি।
এছাড়া ঈদুল আজহার আগেই ইন্টারচেঞ্জের পাবনা-নগরবাড়ি মহাসড়কের সার্ভিস লেনটিও খুলে দেয়া হবে।
হ্যাপী