ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২০ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

২২ লাখ বেকারের ভাগ্য বদলাতে যাচ্ছে ভোলা!

মো. আতিকুর রহমান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ভোলা

প্রকাশিত: ২২:৩০, ১৯ মে ২০২৫

২২ লাখ বেকারের ভাগ্য বদলাতে যাচ্ছে ভোলা!

ছবি: জনকণ্ঠ

ভোলা জেলার দীর্ঘদিনের অবহেলা, অবকাঠামোগত পশ্চাৎপদতা ও বেকারত্ব নিরসনে দ্রুত রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়ে চট্টগ্রামে এক গণজাগরণমূলক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯ মে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে এ কর্মসূচির আয়োজন করে ভোলা ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (BDF) ও চট্টগ্রামস্থ ভোলাবাসীর দাবী আদায়ে সর্ব-ঐক্য মানববন্ধন বাস্তবায়ন কমিটি। কর্মসূচিতে চট্টগ্রামে বসবাসরত প্রায় ৩০টি সামাজিক সংগঠন, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, নাগরিক সমাজ ও প্রবাসী ভোলাবাসীর বিপুল উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এক সময়ের সম্ভাবনাময় জেলা ভোলা। যেখানে রয়েছে প্রাকৃতিক গ্যাস, মৎস্য সম্পদ, কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি ও পর্যটনের ব্যাপক সুযোগ। আজও বহুমুখী অবহেলার শিকার। এখনও অনেক উপজেলায় গ্যাস সংযোগ নেই, নেই সরকারি মেডিকেল কলেজ বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। বক্তারা বলেন, এর মূল কারণ হচ্ছে দীর্ঘদিনের রাষ্ট্রীয় অবহেলা ও কার্যকর উন্নয়ন পরিকল্পনার ঘাটতি।

এই প্রেক্ষাপটে, সম্প্রতি ভোলা ডেভেলপমেন্ট ফোরামের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার বরাবর একটি বিস্তারিত স্মারকলিপি প্রদান করা হয়, যেখানে ভোলার উন্নয়নের জন্য জরুরি ৮টি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়। ভোলাকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা, গ্যাস সংযোগ প্রদান, সেতু নির্মাণ, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন এবং উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করা অত্যাবশ্যক। ভোলাবাসীর বিশ্বাস, এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হলে প্রায় ২২ লক্ষ বেকার মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে, এবং দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিতে গণপূর্ত পরিবর্তন আসবে।

গত ৫ মে চট্টগ্রামে BDF-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক বিশেষ মতবিনিময় সভায়, সভাপতিত্ব করেন BDF কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি লায়ন আবুল কাশেম এমজেএফ এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক এম জহিরুল আলম। সভায় স্মারকলিপির যৌক্তিকতা ও প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং সর্বসম্মতিক্রমে প্রধান উপদেষ্টার নিকট স্মারকলিপি পাঠানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভোলার উন্নয়ন শুধু ভোলাবাসীর দাবি নয়, এটি জাতীয় প্রয়োজন। তারা হুঁশিয়ারি দেন। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে ভবিষ্যতে আরও বৃহত্তর কর্মসূচি ও আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

উল্লেখযোগ্য, ৮ মে ভোলা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সরকারি সভায় সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ আব্দুর রউফ জানান, "ভোলা-বরিশাল সেতু প্রকল্প সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ২০২৬ সাল থেকে নির্মাণকাজ শুরু হয়ে ২০৩৩ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।” এই ঘোষণায় ভোলাবাসীর মধ্যে আশার সঞ্চার হলেও, দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রশাসনিক অগ্রাধিকার নিশ্চিত করার দাবি জোরালো হচ্ছে।

ভোলার উন্নয়নে এমন সংগঠিত দাবি ও সচেতনতা স্থানীয় জনগণের মাঝে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। আয়োজকরা বিশ্বাস করেন, রাষ্ট্রীয় সদিচ্ছা থাকলে ভোলা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে পারে।

শহীদ

×