
.
জীবনে সংগ্রাম করে সংসারের হাল ও সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে আছমা, আছিয়া, ফাতেমার মত নারী শ্রমিকরা দালান, সেতু, রাস্তার কাজে ব্যবহৃত ভাঙা ইটের টুকরো তৈরির কাজ করে চলেছেন।
ময়মনসিংহের গফরগাঁও, ত্রিশাল ও সদরের পৌর শহরের নওয়া পাড়া এলাকার, পল্লিবিদ্যুৎ অফিস সংলগ্ন জায়গায় ১০ থেকে ১৫ বছরের অধিক সময় ধরে ইটভাঙার কাজ করে আসছেন শতাধিক নারী। এদের মধ্যে কারও স্বামী নেই, কারও স্বামী অসুস্থ। কেউ সন্তানদের পড়াশোনার খরচ জোগাতে, কেউ দিনমজুর স্বামীর সংসারে সচ্ছলতা ফেরানোর চেষ্টায় ইটভাঙার কাজ করেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে হাতুড়ি দিয়ে ইট ভেঙে খোয়া তৈরির কাজ। প্রতি বস্তুায় পারিশ্রমিক ১৫ টাকা। একজন নারী শ্রমিক প্রতিদিন ইনকাম করতে পারেন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। খোয়া ভাঙতে প্রায় দিনই হাতুড়ি কিংবা ইটের আঘাত পান হাতে বা পায়ে। এরপরও জীবনযুদ্ধে টিকে থাকতে তারা লড়াই-সংগ্রাম করে যান। স্থানীয়রা এখান থেকে স্বল্প মূল্যে খোয়া কিনে নিয়ে প্লাস্টার, ঢালাইসহ নানা কাজে ব্যবহার করেন।
গফরগাঁও পৌর শহরের শিবগঞ্জ রোডের ষোলহাসিয়া গ্রামের ৬৫ বছর বয়সী আছিয়া, ফাতেমা বলেন, আমার স্বামী মারা গেছে ১০ বছর আগে। ছেলের মানসিক সমস্যা থাকায় ছেলের বউ-নাতিদের আমার খাওয়াতে হয়। এজন্য বুড়া বয়সে চোখে কম দেখি, তারপরও বাধ্য হয়ে ইট ভাঙার কাজ করছি। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গফরগাঁও-ময়মনসিংহ সড়কে বয়ড়া গ্রামের নারী শ্রমিক জহুরা বেগম বলেন, আমার স্বামী দুর্ঘটনায় হাত ভেঙ্গে গেছে কাজ করতে পারে না। আমি ইট ভেঙ্গে স্বামীর ওষুধের খরচসহ সংসার চালাচ্ছি। প্রতিদিন ১৫০-২০০ টাকা ইনকাম করতে পারি। এটা দিয়ে কষ্ট করে চলি। একই গ্রামের জাহানারা বলেন, আমার স্বামী অসুস্থ। ছেলেরা তাঁদের সংসার চালাতে হিমশিম খায়। এজন্য ৭/৮ বছর যাবত ইট ভাঙার কাজ করে সংসার চালাচ্ছি। গফরগাঁও ইউএনও এন এম আব্দুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, নারী শ্রমিকরা যদি বৈষম্যের শিকার হয় তাহলে অভিযোগ পেলে নেওয়া হবে ব্যবস্থা। শ্রমিকদের জন্য সরকারি সহযোগিতা এলে এসব নারী শ্রমিকদের মূল্যায়ন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা হবে।
প্যানেল